কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

মায়ের কোলে ফিরে গেল হাসপাতালে ফেলে যাওয়া শিশুটি

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর থেকে : জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ফেলে যাওয়া নিশি নামের ২৮ দিন বয়সি এক কন্যা সন্তানকে বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উধাও হওয়ার ৮ দিন পর বাবা-মা কোলে ফিরে পেয়েছে শিশু নিশিকে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়ে শিশু নিশিকে তার বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
শিশু নিশির বাবা আব্দুল কাদের জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় নিশির। জন্মের পর শিশু নিশির ওজন কম ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে নিশির মা ও নানি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ০৫ মিনিটে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তার চিকিৎসা চলে। তাকে চিকিৎসা করার পর তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা শেষ হয়ে যায়। শিশু নিশির মা ও নানি টাকা জোগাড় করার জন্য এক মহিলার কাছে নিশিকে রেখে গ্রামের বাড়িতে যায়। এদিকে ওই মহিলা শিশু নিশির মা ও নানিকে না পেয়ে হাসপাতালের নার্সদের
বিষয়টি জানান। পরে শিশু নিশির ওজন কম ও শ্বাসকষ্ট দেখে শেখ রাসেল বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্রে ভর্তি করেন। কয়েক ঘণ্টা পর তারা টাকা জোগাড় করে হাসপাতালে ফিরে আসেন। এ সময়ের মধ্যে নার্সদের শিফ্ট পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন তাদের আর শেখ রাসেল বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরে নিশির মা ও নানি বাড়ি ফিরে যান।
জামালপুর শিশু কল্যান বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, গত ০১ মার্চ শিশু নিশিকে হাসপাতের ৪ তলায় শিশু ওয়ার্ডের করিডোরে অপেক্ষামান রোগীর এক স্বজনের কাছে দেয় নিশির নানি। শিশু নিশির মাকে নিচ থেকে আনবে বলে হাসপাতালের নিচ তলায় চলে যায় নিশির নানি। নিচ থেকে নিশির নানি ও মা আর ফিরে আসেনি। এ নিয়ে ভোরের কাগজসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে খবরটি প্রচার হয়।
এরপর গত ৬ মার্চ জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ের মধ্যে পুনরায় শিশু নিশির বাবা-মা তাকে ফেরত নিতে হাসপাতালে আসেন। তাদের কথা ও হাসপাতালে ভর্তির তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়। শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরজমিন তদন্ত করে সঠিক বাবা-মা’র কাছে শিশু নিশিকে ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সরজমিন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করেন। তাদের তদন্তে রোকসানা ও আব্দুল কাদের জিলানী রকিব দম্পত্তি শিশু নিশির সঠিক বাবা-মা বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেন। পরে শিশু নিশিকে রোকসানা ও আব্দুল কাদের জিলানী রকিব দম্পত্তির কাছে হস্তান্তর করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ সময় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাজু আহাম্মেদ, শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম, ডা. তারিকুল ইসলাম রনি, সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাইমুম সাব্বির শোভন উপস্থিত ছিলেন।
শিশু নিশিকে ফিরে পেয়ে মা রোকসানা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি বলেন, মেয়েকে না পেয়ে অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেক কান্না-কাটি করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি। অবশেষে আমার নাড়িছেঁড়া ধনকে আমি পেয়েছি। আমি অনেক খুশি।
বাবা আব্দুল কাদের জিলানী রকিব বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। মেয়ে হারিয়ে গেছে শুনে বাড়ি ফিরে আসি। এসে অনেক কষ্ট করে মেয়েকে আজ কোলে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। আমি খুব খুশি।
জামালপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাজু আহম্মেদ জানান, শিশুকে সঠিক বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয় সরজমিন তদন্ত করে সঠিক বাবা-মা শনাক্ত করে তাদের হাতে শিশুটিকে তুলে দিতে হবে। যারা সন্তানটিকে দাবি করছে তারাও যদি সঠিক অভিভাবক হয় তাহলে তাদের কাছে দিয়ে দেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তা না হলে ডিএনএ পরীক্ষা করে সঠিক বাবা-মার কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করবে। পরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তদন্তে রোকসানা-আব্দুল কাদের জিলানী রকিব দম্পত্তি ওই শিশুর সঠিক অভিভাবক নিশ্চিত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়