কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

প্রাচীর টপকে দেখি কবির আত্মকথন

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জন্মলগ্ন থেকে কবিতা মানুষের মুখাপেক্ষী। অনেকে কবিতাকে অস্বীকার করলেও এর আবেদনকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না। যা কবিতার শক্তিমত্তাকে প্রমাণ করে। কবিতা কখনো সময়ের দাবি মেটায়, কখনো-বা হয়ে ওঠে একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। অনেক পাঠক বলে থাকেন, কবি যে কবিতাটি লিখেছেন তার সঙ্গে কবির মিল কতটুকু! এ রকম প্রশ্ন বোধ করি হামেশাই সম্মুখীন হতে হয়। অর্থাৎ কবি ও কবিতাকে অনেকে আলাদা করে ভাবতে পারেন না। বাংলা কবিতায় এই আত্মবাচকতার উপস্থিতি আধুনিকতার পথকে সুগম করেছে। অর্থাৎ কবির সুখ-দুঃখ-আশা-নিরাশা ব্যক্তিগত যাপনের এসব বিষয় প্রধান হয়ে উঠল। মঙ্গলকাব্যের যুগ পেরিয়ে আধুনিক কাব্যের সূচনা ঘটে এভাবেই। কবি নিজেই হয়ে ওঠেন কবিতার রূপকার।

কবি শফিক আজিজ তার কবিতায় আধুনিকতাকে ধারণ করেন নিজের মতো করে। তার কবিতা পড়লে মনে হবে এ তার নিজেরই বয়ান। ভনিতা নেই। টুকরো টুকরো আত্মস্মৃতি। তিনি নিজের জীবনকে ছেনে তুলে এনেছেন কবিতায়। কবিতাগুলোতে তার বোধ আর সময়ের কমিটমেন্ট লক্ষ্য করা যায়। তিনি অল্পকথায় অনেক কথা বলবার পক্ষে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ফড়িঙ পাখনায় ঘুঘুসুন্দরী’ প্রকাশ পাবার পর দীর্ঘ বিরতি নিয়ে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘প্রাচীর টপকে দেখি’ (২০২২) প্রকাশ পায়। মূলত আলোচনার বিষয় এই কাব্যগ্রন্থটি। কবিকে নিয়ে কথা বলতে গেলে তার কবিতার বই জরুরি। এটা কবিকে নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দেয়। কারণ এতে কবির মেজাজ ধরা পড়ে। আর এই বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে শফিক আজিজ তার সময়কে তুলে আনতে পেরেছেন। কখনো অতীতের কোনো স্মৃতির মধ্য দিয়ে কখনো-বা সাম্প্রতিক কোনো বিষয়কে উপজীব্য করে। আর এটাই যে কবির কাজ তিনি তা প্রমাণ রেখেছেন তার কবিতায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বিভিন্ন মহামারি জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ক্ষুধার কষ্ট, স্বজন হারানোর কষ্ট নানাভাবে জীবনকে বিষিয়ে তোলে। যা মানুষ তথা পশু-পাখিকে হিংস্র করে তোলে। জীবন ধারণে মরিয়া হয়ে ওঠে। করোনাকালীন সময়ে রাজশাহী চিড়িখানায় চারটি হরিণ ক্ষুধার্ত কুকুরের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। ক্ষুধা মানুষসহ সব প্রাণীর প্রথম মৌলিক চাহিদা। কবির কাছে সেই ঘটনা হয়ে ওঠে অর্থবহ। ‘ক্ষুধা’ কবিতায় তিনি বলেন,
তবু পাঁচটি কুকুর একত্র হয়ে
করোনাকালে লকডাউনে
খাবারের অভাবে
ক্ষুধার তাড়নায়
দুর্ভেদ্য প্রাচীর টপকে
চিড়িয়াখানায় ঢুকে খেয়ে নিলো চারটি হরিণ!
ক্ষুধাই শাশ্বত এক সরল অনুবাদ।
অনেক ঘটনা একসময় ছেঁদো হয়ে ওঠে ঘটনার রেশ কেটে যাবার পর। আর সেই ঘটনা কখনো হয়ে ওঠে হাসির উৎস। ‘ভাবনা’ কবিতাটি পড়লে পাঠকের বুঝতে কষ্ট হবে না কী নিয়ে বল হয়েছে। আসলে কবিতাটির ভেতরে যে স্যাটায়ার আছে তা পাঠকের চোখ এড়িয়ে যায় না,
ধরুন, হঠাৎ চাঁদ
পড়ে গেল আমার মাথায়;
আপনি আমার মাথা নিয়ে ভাবছেন।

আমি ভাবছি যারা চাঁদে আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়
তাদের নিয়ে।

জীবনানন্দ দাশ তার ‘আকাশলীনা’ কবিতায় সুরঞ্জনাকে যুবকের সঙ্গে যেতে নিষেধ করেছেন। কথা বলতেও আপত্তি জানিয়েছেন। প্রেম যে একার করে পাবার এক ধরনের প্রবণতা ‘আকাশলীনা’ কবিতায় তা স্পষ্ট। এ যে ব্যক্তি ঈর্ষা তা অস্বীকার করবার জো নেই। শফিক আজিজ তা সরাসরি প্রকাশ করেছেন। অবশ্য রবীন্দ্রনাথের মতো করে বলেননি, ‘শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী/পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি/আপন অন্তর হতে।’ ‘পৌরুষীর্ষা’ কবিতায় শফিক বলেন,
ওষ্ঠ ছোঁয়ার সুবিধার্থে তোমাকে ছেঁটে
নিয়েছি বলে ভেবো না রেবতী, তোমার রূপও বেড়েছে তাতে।
দীর্ঘাঙ্গের অজুহাতে তোমার উচ্চতা কেটে লাঙলে; অপরূপী হে,
রূপে খাটো করেছি সে, আমারই পৌরুষ ঈর্ষার ছলে!
‘মেটামরফোসিস’ কবিতাটি গুরুত্বের দাবি রাখে। এখানে তিক্ত কথা আছে, আছে সত্য। তাই কয়েক পঙ্ক্তির এই ছোট কবিতাটি বাস্তব জীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। যাদের ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া আর কোনো দিকে খেয়াল নেই, তারা যত ছোট হতে পারে কোনো আপত্তি নেই। মানুষের রিপুর এই কদর্য রূপ কবিতায় তা স্পষ্ট,
নিজ স্বার্থে তুমি লিলিপুট
আবার প্রয়োজনে তুমিই সাজো ব্রবডিংনাগ।
গালিভাররা
কখনো বাড়ে-কমে না।
কবিতার ব্যাপারে এই কবির সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। তিনি যতœশীল। শব্দচয়নে। বাক্যগঠনে। সহজেই তুলে ধরেন জীবনের অমোঘ সত্যকে। সবুজ পৃথিবীতে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিচ্ছি। আলো হাওয়ায় বেড়ে উঠছি। আর সেখানে গাছের ভূমিকা অনেক। কিন্তু প্রকৃতির অংশ এই গাছকে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে ধ্বংস। যা মানব সভ্যতার জন্য অশনি সংকেত। প্রকৃতির প্রতি মানুষের এই বৈরী আচরণ কবির দৃষ্টি এড়ায়নি। ক্রমাগত যারা সবুজবন-ভূমি ধ্বংস করছে; তাদের করাত কলে চেরাই করা কাঠের গুঁড়ো কীভাবে বিবেকের চোখ ঢেকে দিচ্ছে সেটা ‘অন্তর্হিত সবুজ’ কবিতায় ভীষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে,
করাতকল থেকে উড়ে আসা
কাঠের গুঁড়ো লাগলো আমার চোখে;

আমি আর সবুজ দেখতে পাই না।

সর্বোপরি কবি শফিক আজিজের ‘প্রাচীর টপকে দেখি’ কাব্যগ্রন্থটি জীবনের অনেক কিছু দেখার আর বোঝার সুযোগ করে দেয়। নস্টালজিক করে তোলে কোনো কোনো ব্যাপারে। কখনো-বা পাঠককে নতুন কোনো ভাবনা উসকে দেবে মনের অজান্তে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়