কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

পাল্টাপাল্টি স্লোগান ও ছুটি ঘোষণা : মনিপুর স্কুলের শিক্ষকদের কুকীর্তি দেখল শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইফুল ইসলাম : ‘এক দফা এক দাবি, ফরহাদ তুই কবে যাবি। ফরহাদের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও। ফরহাদের সাঙ্গপাঙ্গরা, হুঁশিয়ার সাবধান। জাকির স্যার বৈধ স্যার, ফরহাদ তুই গদি ছাড়। ফরহাদের আস্তানা, মনিপুরে থাকবে না’- একদল শিক্ষকের এমন স্লোগানের মধ্য দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তেজনাপূর্ণ দিন পার করল রাজধানীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। শিক্ষকদের এমন স্লোগানের সময় প্রতিষ্ঠানটির সব ফটক বন্ধ ছিল এবং শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে পারেনি। ফটকের সামনে তারা দাঁড়িয়ে তাদের প্রিয় শিক্ষকদের কুকীর্তি দেখে বাড়ি চলে গেছে। এদিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে পাঁচ দিন স্কুল বন্ধ রাখার নোটিস দেয়ায় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। কেন স্কুল বন্ধের নোটিস দেয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হচ্ছে বলে জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। এরই মধ্যে স্কুলটিতে বিবদমান দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি ছুটি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে পরিচালনা কমিটির সভাপতির পক্ষ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনের ছুটি ছিল। এই ছুটির মধ্যে একদল শিক্ষক আরেকদল শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল।
এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০২০ সালে তদন্ত করে বলেছিল, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ পদে মো. ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ। এরপর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আরেক তদন্তেও বেরিয়ে আসে অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো বিধিসম্মত হয়নি। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। কারণ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী একটি পক্ষ ফরহাদ হোসেনের পক্ষে। এ অবস্থায় আদালতের নির্দেশে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেয় মাউশি। পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে লেখা পত্রে তিন কর্মদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল মাউশি। তবে পরিচালনা কমিটি তা কার্যকর করেনি। এরপর ৬ মার্চ দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মূল বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান জাকির হোসেন। তখন একদল শিক্ষক তাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষকরা এসে তাকে অভিনন্দন জানান। এ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ওই দিন ক্যাম্পাসে পুলিশও আসে। এরপর থেকে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হতে থাকে। এ অবস্থায় অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন এক নোটিসে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রমসহ সব দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। এরপরে শিক্ষক জাকির হোসেনও বৃহস্পতিবার এক দিনের জন্য স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেন।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্যেই গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলে আসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। অনুসারী শিক্ষকদের কিছু নির্দেশনা দেয়ার পর তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আজকে আমাদের ক্লাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফেসবুকে নোটিস পাঠিয়েছেন ১৫ তারিখ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। সভাপতির এমন নোটিস জারির ক্ষমতা নেই। সরকারি নিয়মে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আগামী রবিবার থেকে যথারীতি ক্লাস চলবে। যারা রবিবার স্কুলে আসবে না তারা অনুপস্থিত হয়ে যাবে।
সহকারী শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, নাশকতা হবে বলে স্কুলের বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন ৯ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রমসহ সব দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সভাপতি এ ধরনের নোটিস দিতে পারেন না। আজকে আমরা মিটিং করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির বালিকা শাখায় গেলে সভাপতির লোকেরা ঢুকতে দেয়নি। ফটকে তালা মেরে দিয়েছে। এদিকে শিক্ষকদের এমন আন্দোলনের মধ্যেই স্কুলে আসেন সেলিনা বেগম নামের এক অভিভাবক। তিনি বলেন, স্কুল থেকে দুই ধরনের নোটিস পেয়েছি। কার নোটিস চূড়ান্ত কার্যকর হবে সেটা বুঝতে না পারায় স্কুলে এসেছি। এসে দেখি দুটি নোটিসই লাগিয়ে রেখেছে। সামনে পরীক্ষা, রমজান মাসও চলে এসেছে। এখন স্কুলের দ্ব›েদ্বর ফলে যেন শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে সবাইকে নজর দিতে অনুরোধ জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক অভিভাবক বলেন, ফরহাদ হোসেন মনিপুর স্কুলটিকে লুটপাট করে খেয়েছেন। আমরা আর তাকে চাই না। জাকির স্যার ভালো মানুষ। হাইকোর্ট তাকে এখানের প্রধান শিক্ষক করে পাঠিয়েছেন। আমরা তাকে সম্মান দিয়ে তার চেয়ারে বসাতে চাই। আমাদের থেকে নেয়া সাড়ে তিনশ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন ফরহাদ স্যার। আমরা তার বিচার চাই। স্কুলের প্রধান ফটকে টানানো নোটিস দেখে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভোরের কাগজকে বলেন, ফরহাদ স্যার আমাদের বেতন বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগে আমরা ১২০০ টাকার বেতন দিতাম, এখন ১৫০০ টাকা নিচ্ছেন। আমরা তাকে চাই না। ষষ্ঠ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর মন্তব্য- ফরহাদ স্যার অনেক টাকা মেরে খেয়েছেন, আমরা তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাই না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়