কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

নারীর ক্ষমতায়নের কল্যাণমুখী ধারণার জয় হোক

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নারীর ক্ষমতায়নে সংঘবদ্ধ শক্তি খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি যথাযথভাবে এর ব্যবহার হয়। এই ব্যবহারের মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে পারলে নেটওয়ার্ক নারীর ক্ষমতায়নের পরিসর বাড়ায়। এক অর্থে বলা হয় ক্ষমতায়ন নারী-পুরুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনমান অর্জনের ব্যবস্থা। অর্থাৎ ব্যক্তির নিজ জীবন ব্যক্তি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তা ঠিক করা- পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা। ক্ষমতায়ন ব্যক্তির ভেতরে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করে, যার দ্বারা সে সমস্যা সমাধান করতে শেখে। পরমুখাপেক্ষী না হয়ে স্বনির্ভর হয়। এভাবে একজন নারী বা পুরুষ যখন জীবন জিজ্ঞাসার মতামত গ্রহণে ক্ষমতার অধিকারী হয় তখন মনে করা হয় তার ক্ষমতায়ন হয়েছে।
তবে এ কথা সত্যি, পুরুষের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন একই অর্থে ব্যাখ্যা করা যায় না। সমাজব্যবস্থায় নারী বৈষম্যের শিকার। তার ক্ষমতায়ন সহজ বিষয় নয়। তাকে দীর্ঘ জটিল পথ পাড়ি দিতে হয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। তাই ওম্যান নেটওয়ার্ক নারীর ক্ষমতায়ন অর্জনের একটি উপায়, যেখানে সম্মিলিত শক্তি এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে। নইলে নারীর প্রান্তিকতা বেড়ে যায়। নারী তার অধিকারের জায়গা থেকে বঞ্চিত হয়। এ জায়গাটি সফল করতে পারে ওম্যান নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীকে শক্তি জোগায়। তাকে উৎসাহিত করে এবং সমবেতভাবে প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে দাঁড়ায়। দক্ষিণ এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও সাব-সাহারায় দেশগুলো নেটওয়ার্ক বিষয়ে দৃষ্টিমূলক ভূমিকা পালন করে। সেসব দেশে দেখা গেছে নারীরা পারিবারিক-সামাজিক পর্যায়ে নেটওয়ার্কের সদস্যদের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত পেয়ে থাকে। শিশুদের পরিচর্যা, বিশুদ্ধ পানি লাভ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পরস্পরের পরামর্শ ও উপদেশ গ্রহণ করে। নারী সংগঠন এক হয়ে প্রতিরোধের জায়গায় নৈতিক সমর্থনও দিয়ে থাকে। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য পদ্ধতি কত প্রয়োজনীয় তা কমবেশি সবাই বুঝতে পারেন। অন্যদিকে এ ধরনের সংগঠন ধীরলয়ে হলেও সামাজিক পরিবর্তনে বড় ভূমিকা পালন করে। নারীকে স্বনির্ভর হওয়ার বিশ্বাস জোগায়। নারীর স্বনির্ভরতা ক্ষমতায়নের পরিধি বাড়ায়। অনেক সময় এ ধরনের সমিতি নারীর ঋণ গ্রহণ কিংবা চাকরি পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। কলকাতায় গৃহকর্মীদের সমিতি দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেই সমিতি বিভিন্ন বাড়িতে মেয়েদের কাজের সুযোগ করে দেয়ার পাশাপাশি বেতনও নির্ধারণ করে দেয়। ফলে এই শ্রেণির মেয়েদের মজুরি বৈষম্যের হার থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমিতির সদস্য হয়ে তারা নিজেদের অবস্থান বুঝে নেয়। এটিই ওম্যান নেটওয়ার্কের বড় দিক।
শহরের চাকরিজীবী মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। চাকরি ক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করা, কাজের ক্ষেত্রে সারা দিন থাকার সুযোগ-সুবিধা পাওয়া, যাতায়াতের ব্যবস্থা লাভ ইত্যাদি নানারকম বৈষম্যমূলক আচরণ প্রতিহত করতে পারে নারী নেটওয়ার্ক।
ক্ষমতায়ন শুধু ছোট একটি শব্দ মাত্র নয়? এর পরিধি অনেক বড়। এটি তৃণমূল থেকে সরকার ব্যবস্থা পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিটি ক্ষেত্রকে সফল করার জন্য তাই দরকার নৈতিক, বস্তুগত, মননশীল চর্চা, যেটা নারীকে এগিয়ে দেয়ার পথই দেখাবে। পেছন দিকে টেনে ধরবে না।
সরকারি চাকরিতে নারীর কর্মসংস্থানের হার নারী উন্নয়নের একটি শর্ত। নারীদের সরকারি চাকরিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ ঘটলে অগ্রগতির ধারাটি সুনিশ্চিত হয়। নারী নিজেকে সরকারের একজন বলে মনে করতে পারে এবং অন্যদিকে নিজেকে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অংশীদার করতে পারে। দুটোই নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ায়। প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি দেখা দেয়। শিশুদের শিক্ষা নারীর হাতেই অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয় এটা প্রমাণিত। পেশা যে কোনো ব্যক্তির জীবিকা। পেশার সঙ্গে নিজের সামাজিক দায়বোধকে মিলিয়ে কাজ করে নারী। নারী এ ক্ষেত্রটিকে বড় করে দেখলে তার ক্ষমতায়নের পরিসর বাড়ে। ক্ষমতায়ন কোনোভাবেই বৃত্তবদ্ধ গণ্ডি নয়। তা ক্রমাগত প্রসারিত হয়ে মানুষের জীবনকে আলোকিত করে। স্বাস্থ্যসেবার একটি বড় দিক নারীর হাতে পরিচর্যা পায়। এই সেবাও সামাজিক দায়ের অঙ্গীকারের জায়গা। নারীকে সুযোগ দিলে অঙ্গীকারের জায়গা পূর্ণ হয়। উপকৃত হয় সমাজ। আর এই জায়গাগুলো নিরাপদ রাখতে পারে ওম্যান নেটওয়ার্ক। সে জন্য নেটওয়ার্ক শক্তিবৃদ্ধির সমন্বিত সাধনা। একে শক্তভাবে ধরে রাখা সবার দায়িত্ব।
নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্মিলিত শক্তির ব্যবহার একটি বড় দিক। এটি নিজেদের মধ্যকার সহযোগিতাকে যেমন কার্যকর করে, তেমন প্রতিবাদের প্রয়োজনে সোচ্চার কণ্ঠ হয়। একে যথাযোগ্যভাবে গঠন করা এবং স্থিতিশীল রাখা নারীদেরই কাজ। দায়িত্বও বটে। নারীরাই করবে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন। এগিয়ে আসুক নেটওয়ার্কের সাথীরা।
ক্ষমতায়ন কোনো মানবিক দর্শন নয়। ক্ষমতায়নকে মানবিক অভিধায় ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, শিক্ষা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সততা, শুভবোধ ইত্যাদি চেতনার কালগত পরিসরে গভীর আলো। এই সত্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যই জরুরি। যদি কেউ মনে করেন, আমি অমুক জায়গায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে যা খুশি তা করার অধিকার পেয়েছি, তাহলে সেটি ভুল চিন্তা হবে। কারণ ক্ষমতার জায়গায় ব্যক্তির অধিষ্ঠান কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। সেটা সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে। ব্যক্তির চিন্তা ক্ষমতার জায়গাটিকে নির্ধারিত করবে মানবিক চেতনার বোধ থেকে। তিনি যে জায়গায় আছেন সেই জায়গাটিকে সততা, নৈতিকতা এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মযজ্ঞ দিয়ে পরিচালিত করবেন। ক্ষমতার পরিধিকে আলোকিত করা ব্যক্তির দায়িত্ব। নইলে ক্ষমতায়ন নানা ধরনের বিপর্যয় ঘটাতে পারে। ইতিহাসে এমন বিপর্যয়ের অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
একবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও উদযাপিত হয়েছে দিবসটি। সেøাগান হিসেবে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এর একটি কার্যকর দিক আছে। সেøাগান সামনে রেখে নারী তার কার্যক্ষেত্রকে মানবিকতার উন্নয়নে সচেষ্ট হবেন। নিজের চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করবেন। এর বিপরীতে নারী তার অবস্থানকে অবমূল্যায়ন করতে পারবেন না কিংবা সেøাগানের অপব্যবহারের দিকটি সম্পর্কে উদাসীন থাকবেন তাও কাম্য নয়।
বিগত সময়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের জায়গা সুশৃঙ্খল রাখতে পারেনি। সেটা রাজনৈতিক বা সামাজিক যেভাবেই হোক না কেন। অগ্নিদগ্ধ মানুষের হাহাকার, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ, হতদরিদ্র মানুষের জীবিকা নির্বাহের জায়গা নষ্ট ইত্যাদি আরো নানা বিপর্যয় এই সত্যকে চিত্রিত করে। রাজনীতির আন্দোলনের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার কোনোভাবেই নারীর অবস্থানকে সমুন্নত করে না। সেদিকে তাকিয়েই বলা যায়, আগের সেøাগানটি নারীকে সুস্থির করবে এমন প্রত্যাশা থাকতেই পারে সবার।
ক্ষমতায়ন নারীর জন্য নানা পরিসর বৃষ্টির সহায়ক। নারী পারে মমতায়, ভালোবাসায় সাধারণ মানুষের কল্যাণের অনুভবকে বড় করে তুলতে। ক্ষমতার যে জায়গাতেই তিনি থাকুন না কেন সেখানে সঠিক সিদ্ধান্তটি সঠিক সময়ে গ্রহণ করলে উপকারভোগীর জরাজীর্ণ অবস্থার পরিবর্তন হয়। মাতৃত্বের বোধ নারীর নিজস্ব শক্তি। পরিবর্তনের জন্য মাতৃত্বের এই শক্তি নারীকে এগিয়ে দেয়। নারীই পারে প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনায় এগিয়ে দিতে। প্রজন্মের সামগ্রিক সত্তাটি মায়ের আদরের উষ্ণ স্নিগ্ধতায় পূর্ণ করার দায়িত্ব নারীর। জয় হোক নারীর ক্ষমতায়নের কল্যাণমুখী ধারণার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়