কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

দগ্ধ ৮ জনের কেউ শঙ্কামুক্ত নন : ‘বাচ্চাদের এতিম কইরা চইলা যাইও না নাবার বাপ’

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ৮০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) কাতরাচ্ছেন সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ মৃধা আজম। তাকে যেই দেখতে যাচ্ছেন, একটি কথাই বলছেন, অসহ্য ব্যথা, আর পারছি না। আর আইসিইউ’র বাইরে বসে আর্তনাদ করছেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিয়া আক্তার। বারবার আল্লাহর দরবারে স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছেন। স্বজনদের জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে করে বলছেন, ‘বাচ্চাদের এতিম কইরা যাইও না নাবার বাপ। তোমার কিছু হইয়া গেলে ওগো কে দেখবে?’ এসময় স্বজনরাও ভেঙে পড়েন বুকফাটা কান্নায়। গতকাল বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। শুধু

রিয়া আক্তারই নন, বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি প্রত্যেক রোগীর স্বজনরাই চোখের জল ফেলে প্রিয়জনের প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। মৃধা আজমের স্ত্রী রিয়া আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, মধুবাগে থাকেন তারা। তার স্বামী বিস্ফোরণ হওয়া ভবনের নিচতলায় বাংলাদেশ স্যানেটারিতে চাকরি করে। বিস্ফোরণের পরে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়। এখন তেমন কিছুই বলছে না। কাছে গেলে খাবার খেতে চায়। একবার বলেছে, কম্বলটা ঠিক করে দাও। আল্লাহ যেন আমার সন্তানদের এতিম না করে, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এখানে ৮ জন ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ জনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে ২০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড মিলে সব রোগী দেখেছি এবং তাদের চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাদের চিকিৎসায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে। আজ অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে তাদের শরীরে ড্রেসিং করা হয়েছে। আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হচ্ছে। সবারই শ্বাসনালি দগ্ধ হয়েছে। বাসায় না যাওয়া পর্যন্ত কেউ শঙ্কামুক্ত নন। ভর্তি থাকা ডেন্টালের চিকিৎসক আলআমিন কিছুটা ভালো রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ভর্তি আছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা রাজন ছাড়া বাকিদের সবার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। গতকাল বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের এখানে মোট ১৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। একজন আইসিইউতে। আর বাকিরা সবাই বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি ৫ জনকে চিকিৎসকরা দেখে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তবে তারা পরবর্তি চিকিৎসা নিতে আসবেন। তিনি আরো বলেন, আইসিইউতে থাকা রাজনের গতকাল অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। আমরা তাদের চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। বোর্ডে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা রয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ১৯ জনের মরদেহ পেয়েছি। এছাড়া প্রায় পৌনে ২০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।
নিখোঁজ স্বপনের মরদেহ উদ্ধার : বিস্ফোরণের ঘটনার দুই দিন পর রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভবনটির বেজমেন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মেহেদী হাসান স্বপন (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ। তিনি ভবনের নিচতলার বাংলাদেশ সেনেটারির ম্যানেজার ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। তার বড় ভাই তানভির হাসান সোহাগ জানান, তাদের বাড়ি নোয়াখালী সোনাইমুরি উপজেলার পশ্চিম এনায়েতপুর গ্রামে। বাবার নাম গোলাম রব্বানি। ১ ছেলে ও ১ মেয়ে ও স্ত্রী রোকেয়া বেগম মুনমুনকে নিয়ে রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে থাকতেন। তানভির আরো জানান, ঘটনার সময় তার সঙ্গে মির্জা ও আশিক নামে দুই কর্মচারীও ছিলেন। তারা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন।
দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু : বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ইয়াসিন আরাফাত (২৬) নামে আরো একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়ালো ২৩ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সমন্ত লাল সেন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো তাকে। শ্বাসনালিসহ তার শরীরে ৫৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মৃত ইয়াসিনের মামি মমতাজ বেগম জানান, তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। বাবার নাম আব্দুল খালেক। বর্তমানে রাজধানীর মগবাজারে মামা মোহাম্মদ আজিম ও মামি মমতাজ বেগমের বাসায় থাকতেন। নিহতের মা ঝর্ণা বেগম জানান, সিদ্দিকবাজারে বাংলাদেশ স্যানেটারি নামে দোকানটিতে কাজ করতেন ইয়াসিন। এর আগে গত বুধবার রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটে দগ্ধ অবস্থায় মারা যান মুসা হায়দার নামে আরো একজন।
আর বর্তমানে দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে মৃধা আজম ও মো. হাসান নামে দুইজন আছেন আইসিইউতে। এছাড়া সম্রাট নামে একজনের মরদেহ ঘটনার ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেল থেকে কোনো পক্রিয়া ছাড়াই নিয়ে যান স্বজনরা। তার নাম জেলা প্রশাসনের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়নি। ফলে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা বলা হচ্ছে ২২ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়