কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী : সিনেমা মানুষের জীবন ও সমাজ পাল্টে দিতে পারে

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হল নির্মাণের তাগিদ ** ২৭ ক্যাটাগরিতে চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন ৩৪ জন **

কাগজ প্রতিবেদক : নির্মাতাদের জীবনধর্মী ভালো চলচ্চিত্র তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জীবনধর্মী সিনেমাগুলো মানুষকে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ, মানুষ তার জীবনের প্রতিচ্ছবি সেখান থেকে পায়। একটা সিনেমা পারে একটা মানুষের জীবন পাল্টে দিতে, বা একটা সমাজকে পাল্টে দিতে। সিনেমা এবং নাটক মানুষের চিন্তা চেতনার উৎকর্ষ ঘটাতে পারে। অন্যায় অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। ভালো সিনেমা দর্শকপ্রিয় হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত দিনে আমাদের অনেকগুলো সিনেমা তৈরি হয়েছে, যেগুলো সত্যিই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। মানুষও সেগুলো লুফে নিয়েছে। সেভাবে আমাদের সবার কাজ করা দরকার। চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় সমাজের জন্য কোনটা ভালো সেটা বিবেচনায় আনতে হবে। অশ্লীলতা ও পাইরেসি বন্ধে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও পাইরেসি বন্ধে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। কেননা চলচ্চিত্র এমন একটা গণমাধ্যম যা দেশের মানুষের মন-মানসিকতা বদলে আরো উন্নত মানের করে দিতে পারে।
সিনেমায় অনুদান বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুদান ভালো থাকলে আরো ভালো সিনেমা হবে। ভালো ‘শিশু চলচ্চিত্র’ নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিশু চলচ্চিত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। শিশুদের জন্য ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা দরকার। শিশু চলচ্চিত্র যারা করবেন, তাদের ভালো অনুদান দেয়া দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় অনেকে কথা বলে, টকশো হয়, সারাদিন অনেক কথা বলে। অনেক কথা বলার পরে কেউ কেউ বলবে- আমরা কথা বলতে পারি না। অথচ বাংলাদেশে এখন ২ হাজার ৪৫৫টি পত্রিকা, ১৭০টি অনলাইন সংবাদ পোর্টাল, ১৪টি আইপি টিভি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানে সবাই মন ভরে কথা বলছে। কথা বলতে পারল না কোথায়। কে মুখটা বন্ধ করল? আমি জানি না। আমি দেখলাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনেকে কথা বলল, সরকারের নানা রকম সমালোচনা করল। সব কথা শেষ করে তারপর বলল আমি কথা বলতে পারি না।
চলচ্চিত্র পুরস্কাপ্রাপ্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা। এটা আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই দেশের অভ্যুত্থানের সঙ্গে মার্চ অত্যন্ত গভীরভাবে মিশে আছে। ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন, ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস; এই মাসে আপনাদের সামনে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে যাননি, আজকে যে সিনেমা শিল্প গড়ে উঠেছে, এর সূচনা করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সময় বাঙালিরা সিনেমা করতে পারে
বা করতে পারবে, এটা পাকিস্তানিরা সব সময় অবহেলার চোখে দেখত। ১৯৫৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায়, হোসেন সোহরাওয়ার্দী তখন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। তখন বাঙালিরা যেন সিনেমা তৈরি করতে পারে বঙ্গবন্ধু সেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালের ২৩ এপ্রিল সংসদে আমাদের এই বাংলাদেশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন বিল বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে পাস হয়। এরপর পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংস্থা, বিশেষ করে এফডিসির কাজ শুরু হয়। সেখানে সিনেমা নির্মাণও শুরু হয়েছিল।
সিনেমা হলগুলো আধুনিক করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সিনেমা হলগুলো এনালগ, অত্যন্ত পুরনো। সিনেমা হলের মালিকদের সঙ্গে বহুবার বসেছি, তাদেরকে বহুবার অনুরোধ করেছি, আপনারা এগুলোকে আধুনিক করুন। এবার আমরা ১ হাজার কোটি টাকার আলাদা ফান্ড রেখে দিয়েছি। সেখান থেকে যে কেউ প্রাথমিকভাবে অল্প সুদে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হল বিশেষ করে, নতুনভাবে সিনেপ্লেক্স গড়ে তুলুন। একসময় আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষ সিনেমা হল বিমুখ হয়ে গিয়েছিল। এখন কিন্তু আবার ফিরে আসছে। এখন কিন্তু মানুষ সিনেমা হলমুখী হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের শিল্পীরা যখন কাজ করেন তখন খুবই নাম ডাক থাকে, কিন্তু এক সময় খুবই বাজে অবস্থায় পড়ে যায়। এটা আরো বেশি নজরে এসেছে এই করোনাকালে। অনেকেই কোনো কাজই পেতেন না। তবে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০২১ পাশ করেছি। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, আমাদের যন্ত্রশিল্পী, কলাকুশলী, মঞ্চসজ্জা থেকে শুরু করে যারা আছেন তাদের সবাইকে নিয়েই এই ট্রাস্ট করা। এটার একটা সীল মানিও দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক বিত্তশালী আছে, তারাও এখানে অনুদান দিতে পারে। শিল্পীরাও যে যা অর্জন করেন কিছুটা দিয়ে রাখলে পরে আগামী দিনে যারা কাজ করবে তাদের জন্যও কাজ করবে। ট্রাস্টে যারা অনুদান দিবে সেই তালিকাটা যেন থাকে, তাহলে দেখতে পারবে কে কতটুকু সহযোগিতা করল। আমার পক্ষ থেকে আমি করে যাচ্ছি।
চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন যারা : এবার ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পুরস্কার দেয় সরকার। এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যৌথভাবে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও ‘নোনাজলের কাব্য’; শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধর’, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র কাওসার চৌধুরীর ‘বধ্যভূমিতে একদিন’, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য)।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব ও কৈশোরের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে চিত্রায়িত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ চলচ্চিত্রটি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ সম্মাননা লাভ করে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছেন যৌথভাবে মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল)। এছাড়া শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য); পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এম ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খলচরিত্রে মো. আবদুল মান্নান জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি)। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য মিলন (মৃধা বনাম মৃধা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়)।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ গায়ক কে. এম. আবদুল্লাহ-আল-মুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজ-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবি-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা- যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ)।
শ্রেষ্ঠ চিত্রসম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক দলগত- সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য)। শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান দলগত- মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)।
পুরস্কার হিসেবে নির্বাচিত সবাইকে দেয়া হয়েছে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি একটি পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও এককালীন নির্ধারিত পরিমাণ সম্মানী ও সম্মাননাপত্র। আজীবন সম্মাননার জন্য ৩ লাখ, শ্রেষ্ঠ পূর্ণদের্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্য ২ লাখ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দেয়া হয় ১ লাখ টাকা। এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জন্য তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করে। ২০২১ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ২১টি পূর্ণদের্ঘ্য, ১৭টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ৭টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রসহ মোট ৪৫টি চলচ্চিত্র থেকে বাছাই করা হয় এবারের বিজয়ীদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়