কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক হামলা চালাল রাশিয়া : বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রাজধানী কিয়েভ

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। উত্তরের খারকিভ থেকে দক্ষিণের ওডেসা, পশ্চিমের ঝিতোমির, ভিয়েননিৎসা ও রিভন এবং মধ্যাঞ্চলীয় দিনিপ্রো ও পোলতাভার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আঘাত হানে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে চালানো এসব হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ। এ হামলা দেশটির অনেক এলাকাকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করেছে, গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকেও। পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুতে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র স্থলযুদ্ধ চলার মধ্যেই এসব হামলা চালানো হলো।
২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযানের বর্ষপূর্তির পর রাশিয়া এই প্রথম ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল। এতে ১০টি অঞ্চলের স্থাপনা ও আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দখলদাররা কেবল বেসামরিকদের সন্ত্রস্ত করতে পারে। কিন্তু এগুলো কাজে আসবে না। যা যা করছে, তার দায় এড়াতে পারবে না তারা।
ইউক্রেনের জরুরি বিভাগের ভাষ্যমতে, ক্ষেপণাস্ত্রে পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ অঞ্চলের একটি গ্রামের বাড়ি ধসে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকা থেকে পাওয়া ড্রোন ফুটেজে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া একটি ঘরের আশপাশে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ভবন দেখা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মধ্যাঞ্চলীয় দিনিপ্রো অঞ্চলে একজন এবং খেরসনে গোলার আঘাতে আরো ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন কিয়েভ : রাজধানী কিয়েভের বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙেছে বিস্ফোরণের শব্দে। শহরটিতে টানা ৭ ঘণ্টা বিমান হামলার সতর্ক সংকেতও বেজেছে। অক্টোবরে রাশিয়া তাদের নিয়মিত বিমান হামলা শুরুর পর আর কখনোই কিয়েভে একটানা এই সংকেত বাজেনি।
ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কিয়েভে অন্তত দুটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো নিশ্চিত করেছেন, রাজধানীর প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িঘর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে কিয়েভের তাপমাত্রা মাত্র ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে রয়েছে। আর এমন সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায়

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওডেসার গভর্নর মাক্সিম মারচেঙ্কো জানিয়েছেন, বন্দরনগরীটির একটি বিদ্যুৎ স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, এতে নগরীর বিভিন্ন অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। খারকিভের আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেগ সিনেগুভব জানান, শহরে এবং এর আশপাশের অঞ্চলে প্রায় ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। কিছু গুরুতর অবকাঠামো ও একটি আবাসিক ভবন ছিল এ হামলার লক্ষ্যবস্তু।
মস্কো বলছে, কিয়েভের যুদ্ধসক্ষমতা কমাতে তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে ইউক্রেনের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। হামলায় মস্কো ৬টি কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। রাশিয়াকে এর আগে একদিনে একসঙ্গে এতগুলো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে প্রায়ই গর্ব করতে দেখা যায়। এ ক্ষেপণাস্ত্রের জবাব ন্যাটোর কাছে নেই বলেও বারবার দাবি করেছেন তিনি।
ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউক্রেনের গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়া যুদ্ধের শুরুর দিক থেকেই দখলে রেখেছে। ইউক্রেনই এই কেন্দ্রটি লক্ষ্য করে নিয়মিত হামলা চালায় বলে আগে বেশ কয়েকবার মস্কোর অভিযোগও করেছে। ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা এনারহোয়াতোম বলেছে, দখলকৃত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগকারী ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সর্বশেষ লাইনটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কেন্দ্রটি আরো ১০ দিন সচল থাকার জ্বালানি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের এ অভিযোগের পর মস্কো বলেছে, কেন্দ্রটি নিরাপদ আছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা রোসেনেরগোটোমের প্রধান নির্বাহীর উপদেষ্টা রেনাত কার্চা বলেন, সবই পুরোপুরি স্বাভাবিক। কেন্দ্রে থাকা বিশেষজ্ঞরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। পারমাণবিক দুর্ঘটনার বিপদ বা ঝুঁকি নেই। প্রয়োজনের চেয়েও বেশি জ্বালানি আছে, দরকার হলে তা ওই কেন্দ্রটিতে সরবরাহ করা হবে।
এর আগে গত বছরের আগস্টে ইউক্রেনের জাতীয় গ্রিড থেকে জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রথমবারের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই সংযোগ ঠিক করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে।
বাখমুতের পূর্বাংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে : রুশ বাহিনী বাখমুতের দখল নিতে কয়েকমাস ধরেই চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার বেসরকারি সামরিক বাহিনী ভগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বুধবার বলেছেন, বাখমুত শহরের পূর্বাঞ্চল পুরো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তার বাহিনী। টেলিগ্রাম পোস্টে তিনি জানান, তার যোদ্ধারা বাখমুত দখলে রাশিয়ার অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে, বাখমুতকা নদীর পূর্বদিকের সবকিছুই পুরোপুরি ভগনারের নিয়ন্ত্রণে। নদীটি বাখমুত শহরকে ভাগ করেছে এবং দনেৎস্ক অঞ্চলের এক প্রান্তে অবস্থিত- যা এরই মধ্যে রাশিয়ার দখলে আছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর সঙ্গে কি সরাসরি সামরিক সংঘাতে যাবে রাশিয়া : টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এদিকে রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। এর ফলে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পরোক্ষভাবে অনেকটা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধেই লড়ছে মস্কো। এমন অবস্থায় অনেকেই বিভিন্ন সময় রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের সরাসরি সংঘাতের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে মার্কিন এক গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাত চায় না রাশিয়া। বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত অ্যানুয়াল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা স¤প্রদায় বিশ্বাস করে- রাশিয়া সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ চায় না, তবে এটি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। রুশ নেতারা এখন পর্যন্ত এমন পদক্ষেপ নেয়া এড়িয়ে গেছেন- যা ইউক্রেনের সীমানার বাইরে দেশটিতে চলমান সংঘাতকে ছড়িয়ে দেবে। তবে (ইউক্রেনীয় সীমানার বাইরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার) এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে এখনও রয়ে গেছে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, মস্কো তার নিজের স্বার্থ এগিয়ে নিতে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে থাকবে। এগুলো সামরিক, নিরাপত্তা, ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টিকারী, সাইবার এবং গোয়েন্দা সরঞ্জাম হতে পারে। আমাদের আশঙ্কা, মস্কো যখন তার স্বার্থ ঝুঁকির মধ্যে দেখবে তখন আরো বেশি সংকটের মধ্যে দেশটি নিজেকে প্রবেশ করাবে।
রাশিয়া তার আশপাশে অস্তিত্বের হুমকি অনুভব করলে সেটি পুতিনের শাসনকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে। আর তাই সহযোগিতা জোরদার এবং ইউক্রেনে পশ্চিমা ঐক্যকে দুর্বল করার জন্য বৈদেশিক নীতির হাতিয়ার হিসেবে জ্বালানিকে ব্যবহার করা অব্যাহত রাখবে রাশিয়া। অতীতে মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করায় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রপ্তানিকারক গ্যাজপ্রম বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে এসব দেশসহ বিশ্বে বহু দেশেই প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
মার্কিন ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বন্দরগুলোকে অবরুদ্ধ করে বা দখল করে, শস্যের অবকাঠামো ধ্বংস করে, কৃষি জমির বিশাল অংশ দখলের পর ফলন ব্যাহত করে, শ্রমিকদের বাস্তুচ্যুত করে এবং এমনকি রপ্তানির জন্য নির্ধারিত শস্য আত্মসাৎ করে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে রাশিয়া। আর রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি এবং মূল্যবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়