এবার ডিএনসিসির গাড়িচাপায় বাইক চালকের মৃত্যু : মেশিনে পেঁচিয়ে নিহত ১

আগের সংবাদ

আতঙ্কের বসতি পুরান ঢাকা : কেমিক্যাল গোডাউন না সরায় ক্ষোভ, নিমতলীর ১৭ দফা বাস্তবায়ন জরুরি

পরের সংবাদ

সন্দেহে বিস্ফোরণের পাঁচ উৎস : ভবন মালিক ডিবি হেফাজতে, এখনো ২ জন নিখোঁজের দাবি, প্রাণের খোঁজে ‘ডগ স্কোয়াড’

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি গ্যাস থেকে ঘটেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু গ্যাসের উৎস নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। গ্যাসের উৎস নিশ্চিত হতে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস। সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। অত্যাধুনিক ডিভাইস দিয়ে ঘটনাস্থলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট। আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে বেজমেন্টে জমে থাকা পানি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পাঁচটি উৎসের যে কোনো একটি উৎস থেকে গ্যাস বেরিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর মধ্যে তিতাসের পুরনো গ্যাসের লাইন ও সেপটিক ট্যাংকে জমে থাকা গ্যাসের সম্ভাবনা বেশি। সন্দেহের তালিকায় রয়েছে পানির ট্যাংক, পয়ঃনিষ্কাশন লাইন ও জেনারেটরও।
এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল বুধবার সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে চলেছে উদ্ধার অভিযান। কিন্তু বিস্ফোরণে ভবনটির ভয়াবহ ক্ষতি হওয়ায় বেগ পেতে হয়েছে উদ্ধারকারী দলকে। একপর্যায়ে প্রাণের খোঁজে মোতায়েন করা হয় র‌্যাব ও ডিএমপির ডগ স্কোয়াড। ধ্বংসস্তূপ থেকে মেলে দুটি মরদেহও। গতকাল রাত ৮টার পর উদ্ধার অভিযান স্থগিত করেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোনের উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা। তিনি জানান, আজকে দ্বিতীয় দিনের মতো আন-অফিসিয়ালি উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল সকালে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।
উদ্ধার অভিযান স্থগিত থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের ২০ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করবেন বলে জানান তিনি।
বিস্ফোরণে গাফিলতি ছিল কিনা জানতে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে এক ব্যবসায়ী ও ভবন মালিককে। এছাড়া গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এবং রাজউক ও তিতাসের কর্মকর্তারা। উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় গতকালও যানচলাচল করতে দেয়া হয়নি ভবনটির সামনের লেন দিয়ে। ফলে বিপরীত পাশের লেন দিয়ে চলেছে যানবাহন।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট বলছে, ভবনের নিচতলায় গ্যাস চেম্বার হয়েই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে, গ্যাসের উৎস নিশ্চিত নন। ধারণা করা হচ্ছে, ৫ কারণে সেখানে গ্যাস জমা হতে পারে। প্রথমত, ভবনের নিচে অবস্থিত পানির ট্যাংক থেকে গ্যাস জমা হতে পারে। দ্বিতীয়ত দুটি ভবনের মাঝখানে অবস্থিত সেপটিক ট্যাংক থেকে বায়োগ্যাস বা মিথেন গ্যাস জমা হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তৃতীয়ত, ভবনের বেসমেন্ট থাকা তিতাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন পুরনো গ্যাস লাইন থেকে গ্যাস বের হয়ে তা জমা হয়ে থাকতে পারে।
চতুর্থত, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে পাইপ ফুটো হয়ে ভবনের নিচতলায় গ্যাস জমা হতে পারে। আর সবশেষ কারণ হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে ভবনের নিচতলায় থাকা বড় একটি জেনারেটর থেকেও গ্যাস নির্গত হতে পারে। সিটিটিসির বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নাশকতা নয়, গ্যাস বিস্ফোরণের কারণেই মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ঘটনাস্থলে কোনো বিস্ফোরক বা কোনো ধরনের স্পিøন্টার বা আইইডি সার্কিট এবং দুর্গন্ধযুক্ত বা কালো দাগের কোনো চিহ্ন নেই। বিস্ফোরণের সময় কোনো রঙিন বা কালো ধোঁয়া পাওয়া যায়নি। ভেতর থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহে ছিদ্র হওয়ার কোনো চিহ্ন নেই। পাশাপাশি হতাহতদের কোমরের উপরে বার্ন ইনজুরি ইঙ্গিত করে, গ্যাস লেভেল ৩-৫ ফুট উচ্চতায় বিদ্যমান ছিল, যা মিথেন গ্যাসে বিস্ফোরণের ইঙ্গিত দেয়। ঘটনাস্থলে জমে থাকা পানি পরীক্ষা করে গ্যাসের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
র‌্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটও বলছে, ভবনটি জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হামলার টার্গেট হওয়ার মতো নয়। গোয়েন্দা তথ্য ও সরজমিনের আলামতেও সন্ত্রাসী হামলার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র‌্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের উপপরিচালক মেজর মশিউর রহমান বলেন, বেজমেন্ট থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। এটি স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। গ্যাসের একটি পরিত্যক্ত লাইন সেখানে দেখেছি।
র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এবং রাজউকের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে মেজর মশিউর রহমান বলেন, বিশ্বের
সবচেয়ে অত্যাধুনিক ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা করেও নাশকতার কিছু পাইনি। আর জঙ্গি গোষ্ঠী বা সন্ত্রাসীদের টার্গেট হওয়ার মতো বিল্ডিং এটি নয়। এরপরও আমরা নাশকতার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছি না। যারা আহত হয়েছেন, তাদের টিস্যুতে কী ধরনের আঘাত রয়েছে, সেটির ফরেনসিক করা হবে।
সরজমিন দেখা যায়, বিস্ফোরণ ঘটা ক্যাফে কুইন স্যানেটারি মার্কেট ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ছাদ ধসে পড়েছে। নিচের পিলারে ফাটল ধরেছে। নিচতলার কলাপসিবল গেট বিচ্ছিন্ন হয়ে সড়কে পড়ে আছে। এর সঙ্গে রয়েছে বিধ্বস্ত একাধিক মোটরসাইকেল, রিকশাভ্যান। বেইজমেন্টে ও ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরে কাচ, ইট, বালু, স্যানেটারি পণ্যের ভাঙা অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পলেস্তারা ভেঙে রড বের হয়ে গেছে। এসব মালামাল স্তূপ আকারে জমে রয়েছে নিচতলায়।
আর উত্তর পাশ লাগোয়া ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনটির দক্ষিণ পাশের দেয়াল ধসে গেছে। ভবনটির ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলার ক্ষতি হয়েছে। এই তিন ফ্লোরের সামনের দিকে অর্থাৎ রাস্তার দিকের দেয়াল ধসে পড়েছে। চেয়ার-টেবিল, পর্দা, প্রিন্টার, কাগজ, ইট, কাচ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিস্ফোরণে ভেতরে থাকা মালামাল দেয়ালের সঙ্গে ঝুলে থাকা পর্দা ছিঁড়ে রাস্তায় এসে পড়েছে। ভাঙা চেয়ার, টেবিল এসব রাস্তা থেকে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ভবনের যেখানে বিস্ফোরণটি ঘটেছে সেখানে ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্টের কিচেন ছিল। সেটি ১০-১৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। ভবনের মালিক রেজাউল রহমান মারা যাওয়ার পর তার তিন ছেলে ওয়াহিদুর রহমান, মশিউর রহমান ও মতিউর রহমান মালিক হন। তাদের মধ্যে বড় ভাই ওয়াহিদুর রহমান ও ছোট ভাই মতিউর রহমান ভবনটি পরিচালনা করেন।
ভবনের এক থেকে তিন তলা আগে করা। পরে আরো চার তলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসা মালিকের এক আত্মীয় বলেন, এই ভবন নির্মাণের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এছাড়া এই ভবনটি কোনো ইঞ্জিনিয়ার নয়, সাধারণ মিস্ত্রি দিয়ে করানো। স্থানীয়রা বলেন, ভবনটি ৩০ থেকে ৪০ বছরের পুরনো। এখানে প্রথমে নিচে রান্নাঘর আর দুই ও তিন তলায় ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্ট চালাতেন বাসার মালিক রেজাউল রহমান। আর রান্নাঘরের পাশের অংশ স্যানেটারি দোকান। পরে তার অনুপস্থিতিতে ছেলেরা এটাকে স্যানেটারি মার্কেট করে ভাড়া দিয়েছে।
বিভীষিকার স্মৃতি পোড়াচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শীদের : বিস্ফোরণ ঘটা ভবনের ৭ তলার বাসিন্দা পারভীন আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, হঠাৎ করেই ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাই। দরজা খুলতেই দেখি আমাদের ভবনের অনেকে ছাদের দিকে উঠছে। পরে বুঝতে পারি আমাদের ভবনেই বিস্ফোরণটি ঘটেছে। তখন সবার সঙ্গে কোনোমতে জীবনটা নিয়ে নিচে নেমে শত শত রক্তাক্ত মানুষের ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পাই। কিছুতেই এই ভয়াবহ স্মৃতি ভুলতে পারছি না।
প্রত্যক্ষদর্শী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার শিক্ষার্থী আসফিকুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ভবনের পাশে যে সাভার পরিবহন ছিল তার পেছনের গাড়িতে ছিলাম। পরে হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দ হয়। দেখি দেয়াল ছিটকে সাভার পরিবহনে আঘাত করল। জীবন ভয়ে দ্রুত নেমে পড়ি। একটু পর ভবনের পাশে গিয়ে দেখি বাসের হেলপার জায়গায় মারা গেছে। ভবনের নিচে দেয়াল চাপায় কারো মগজ ছিটকে পড়ে আছে। রক্ত আর রক্ত। আহত শতাধিক মানুষ। আহাজারি আর কান্নায় ভয়ংকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ২০ সেকেন্ড সামনে গেলেই আমিও হয়তো মারা যেতাম।
ভবন মালিক ডিবি হেফাজতে : বিস্ফোরণের ঘটনায় এক দোকান মালিক ও ভবনের মালিককে হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ তাদের দুজনকে হেফাজতে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে ধসেপড়া ভবনের বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে এক দোকানমালিককে প্রথমে তুলে নেয় ডিবি লালবাগ বিভাগ। তার নাম আব্দুল মোতালেব মিন্টু। এরপর ভবনের মালিক ওয়াহিদুর রহমানকে তুলে নেয়। এছাড়া আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে ডিবি।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা কাউকে আটক করিনি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা বাড়ির মালিক, দোকান মালিকদের ডেকেছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলছি। আমরা তাদের কাছে জানতে চাইব, নিয়মমতো বেজমেন্টে দোকান দেয়ার কথা না, সুয়ারেজ লাইন, সেপটিক ট্যাংক, ওয়াটার রিজার্ভার- এগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হতো কিনা। কার অবহেলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটল, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এছাড়া বাইরে থেকে কেউ এটা ঘটিয়েছে কিনা বা এসব ঘটানোর সুযোগ আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
এখনো নিখোঁজ দুজন : এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। দুজন নিখোঁজ রয়েছে বলে তাদের স্বজনেরা দাবি করেছেন। তারা হলেন- ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ ভূঁইয়া ও মেহেদী হাসান স্বপন। এর আগে এই দুজনসহ মোট ৪ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। পরে আনিকা এজেন্সির মালিক মমিন উদ্দিন সুমন ও তার কর্মচারী রবিন হোসেনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত বাকি দুজনের খোঁজ মেলেনি।
নিখোঁজ মেহেদীর ভাই সোহাগ ও মামাশ্বশুর আবদুল মান্নান বুধবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহাজারি করতে থাকেন। সকালের দিকে উদ্ধারকাজ শুরু না করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে নিজেরাই উদ্ধারকাজ করতে গেলে অন্য স্বজনরা তাদের সান্ত¡না দেন। পরে দ্রুত কাজ শুরুর জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন তারা।
মেহেদীর ভাই সোহাগ ফায়ারকর্মীদের আঙুল দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সিঁড়িটি দেখিয়ে বলছিলেন, এই সিঁড়িটার নিচে আমার ভাইয়ের দোকান। এখানেই বেজমেন্টে মরদেহ আটকা থাকতে পারে। মেহেদীর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এলাকায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মেহেদীর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে আর মেয়ের বয়স ছয় বছর।
নিখোঁজ স্বপনের খালাতো ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, ধসেপড়া ভবনের বেজমেন্টে বাংলাদেশ স্যানেটারি দোকানের ম্যানেজার স্বপন, বাড়ি নোয়াখালী, ঘটনার পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। দোকানটিতে ম্যানেজার স্বপনসহ তিনজন কর্মচারী। দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজদের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আর কেউ আটকা থাকলে অবশ্যই উদ্ধার করা হবে।
তদন্ত কমিটি গঠন : বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) শাহজাহান শিকদার জানান, পরিচালক (অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত ৪ সদস্যের কমিটিকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে উপপরিচালক দিনমনি শর্মাকে। আর ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের প্রিন্সিপাল আনোয়ারুল হক এবং উপসহকারী পরিচালক শামস আরমান আছেন সদস্য হিসেবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাজউকের পরিচালক (জোন-৫) হামিদুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ৪৫ বছর আগে অনুমোদন নেয়া হয়। এটির নথি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
তিনি বলেন, ‘ভবনটি আবাসিক না বাণিজ্যিক তা জানার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় ভবনে বিস্ফোরণ ও ধসেপড়ার দায় রাজউক এড়াতে পারে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দায় তো অবশ্যই একটু নিতে হবে। ভবনটি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিতাসের পরিচালক সেলিম মিয়া। তার মতে, পাইপলাইনের গ্যাস এই বিস্ফোরণের কারণ নয়। এই সিদ্ধান্তে আসার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, নিচে একটি রাইজার পাওয়া গেছে। রাইজারটি অক্ষত ছিল। কাজেই বিস্ফোরণ অন্য কোনো গ্যাস থেকে হতে পারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, বাংলাদেশ একটা অস্বাভাবিক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশের আর স্বাভাবিক অবস্থা নেই। এ ধরনের বিস্ফোরণ এখন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এগুলোকে দুর্ঘটনা বলা যায় না। আমরা সব সময় বলেছি এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর তদন্তপূর্বক রহস্য উদঘাটন করতে হবে। যাতে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়