এবার ডিএনসিসির গাড়িচাপায় বাইক চালকের মৃত্যু : মেশিনে পেঁচিয়ে নিহত ১

আগের সংবাদ

আতঙ্কের বসতি পুরান ঢাকা : কেমিক্যাল গোডাউন না সরায় ক্ষোভ, নিমতলীর ১৭ দফা বাস্তবায়ন জরুরি

পরের সংবাদ

মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত : ফলাফল বাতিলসহ আরপিওতে একগুচ্ছ পরিবর্তন চায় ইসি

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে নির্বাচনী আইনে (রিপ্রেজেন্টেটিভ পিপলস অর্ডার ১৯৭২-আরপিও) বেশ কিছু অনুচ্ছেদের সংস্কার চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে লক্ষ্যে গেজেট প্রকাশের পরও ফলাফল বাতিলসহ আরপিওর সংশোধনীর খসড়ায় মোটা দাগে ৭টি বিষয়ে সংস্কার আনার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইসি। দীর্ঘদিন পর ইসির দেয়া অধিকাংশ প্রস্তাবে লেজিভলেটিভ ডিভিশনের সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ইসির আরপিও সংশোধনী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা।
এদিকে ইসির সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, ইসির সঙ্গে আলোচনার পর আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাবগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে অধিকাংশ প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয়ের সায় রয়েছে মন্তব্য করে তিনি জানান, আরপিওর খসড়া এখন মন্ত্রিসভায় যাবে, তারপর সংসদে পাস করতে হবে।
ইসি রাশেদা সুলতানা বলেছেন, আরপিওর সংশোধনী প্রস্তাবগুলোতে সবুজ সংকেত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- কোনো নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরও অনিয়ম প্রমাণিত হলে ইসি ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে।
তিনি বলেন, বিদ্যমান আরপিও অনুযায়ী ফলাফলের গেজেট হয়ে যাওয়ার পর ইসির আর কিছু করার নেই। ফলাফল প্রকাশের পরও প্রয়োজনে যেন তা বাতিল করার ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকে, সে প্রস্তাব তারা আইন মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলেন। এটি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়। তারা বলেছিলেন, বিদ্যমান আইন (৯১) দিয়েই তা সম্ভব। কিন্তু তা আসলে সম্ভব নয়। ময়মনসিংহের দুর্গাপুরে একটা নির্বাচনে অনিয়মের বিষয় ইসি তুলে ধরেছে জানিয়ে রাশেদা সুলতানা বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে কমিশনের হাতে অবশ্যই ক্ষমতা থাকা উচিত। আইন মন্ত্রণালয় ইসির ‘জাস্টিফিকেশনে’ খুশি। তারা বলছেন, আর কোনো অসুবিধা নেই।

এখন আরপিও সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিসভায় যাবে। এরপর সংসদে যাবে।
রাশেদা সুলতানা জানান, ইভিএমে অনেকের আঙুলের ছাপ মেলে না। এ ধরনের এক শতাংশ ভোটারকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারিত করে দেয়ার প্রস্তাব করেছে ইসি। এর আগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৫ শতাংশের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোনো একটি দল বা প্রার্থীকে সুবিধা দিত এমন অভিযোগের ভিত্তিতে এটাকে এক শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। তৃতীয়ত আরপিওর ৯০ (বি) ধারায় রাজনৈতিক দলগুলোর ২০২২ সালের মধ্যে কমিটিতে যে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের কথা ছিল, তা দলগুলো করতে না পারায় সেটা ২০৩০ সালের টার্গেট দিয়ে আরপিওতে সংশোধনী দিয়েছে ইসি। এছাড়া নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো, প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখালে শাস্তির বিধান, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কর্তব্যে অবহেলাজনিত শাস্তির বিধান, ভোট গণনার বিবরণী প্রার্থী ও এজেন্টদের সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক করার বিধান এনে আরপিওতে সংশোধনী আনা হয়েছে। এছাড়া সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহের কাজে বাধা না দেয়ার বিষয়টিও আরপিওতে আনা হয়েছে।
আবার অনেক সময় মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেয়ার ব্যাপারে অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেয়ার বিষয়টিও আনতে চায় ইসি, যাতে সব প্রার্থী নির্বিঘেœ মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন পর্যন্ত তার ঋণখেলাপির তথ্য দিতে এবং মনোনয়ন জমার অন্তত ৭ দিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করলে তার মনোনয়ন বাতিল করতে আরপিওতে সংশোধনী এনেছে ইসি। এছাড়া কৃষিঋণ, ক্ষুদ্রঋণ, টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা সেবামূলক বিল বাকির মতো বিষয়গুলোও এর সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে এ সংশোধনী আনা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তির ব্যবহার রোধে আরপিওর ২৫ (এ) এবং ৮৪ (এ) উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা যদি ঘটে তাহলে স্পটে শাস্তি, প্রার্থিতা বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। আবার প্রার্থীদের আয়কর সনদ বাধ্যতামূলক করতে আরপিওর ১২ (৩এ) সি ধারা এবং ৪৪ (এএ২) এ উপধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আরপিওর ৭ ধারায় জেলা শহরকে বাদ দিয়ে সংসদীয় আসন শব্দটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার আরপিওর সংশোধনীতে ভোটার, এজেন্ট, পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের সুরক্ষা দিতে আরো বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, আরপিওর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসের মধ্যে গত বছরের ৮ আগস্ট আরপিও সংশোধনে একগুচ্ছ প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর সরকারের কোনো সাড়া না পেয়ে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর, ১০ অক্টোবর ও সবশেষ ২৭ নভেম্বর অগ্রগতি জানতে চেয়ে তিন দফা চিঠি দেয়। এরপরও সাড়া না পেয়ে সিইসি হাবিবুল আউয়াল গত বছরের ২৭ নভেম্বর বলেন, আমরা অনন্তকাল একটা ম্যাটার পার্স্যু করতে পারি না। বিষয়টা আমরা শেষ করে দিতে চাই। রেসপন্স না পেলে আমরা অন্য কাজে হাত দেব।
এরপর তড়িঘড়ি গত বছরের ২৯ নভেম্বর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব দিয়েই যাচাই করা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে আরপিওর সংশোধনী প্রস্তাবগুলো মন্ত্রিসভায় ওঠার অপেক্ষায়, তারা অনুমোদন দিলে সংসদে পাসের জন্য তোলা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়