কাগজ প্রতিবেদক : ‘নারী জন্ম ধন্য হোক আপন ভাগ্য গড়ার অধিকারে’- স্লোগানে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩’ উদযাপন করেছে। দিনটি উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারে স্বপ্নদলের প্রযোজনা নারী জাগরণের মনোড্রামা ‘হেলেন কেলার’ এর বিশেষ মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। ‘বিশ্বের বিস্ময়’ মহিয়সী হেলেন কেলার এর জীবন-কর্ম-স্বপ্ন-সংগ্রাম-দর্শনভিত্তিক ও নারী-গ্রন্থিকের একক অভিনয়ে সমৃদ্ধ ‘হেলেন কেলার’ রচনা করেছেন অপূর্ব কুমার কুণ্ডুু, নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন এবং অভিনয় করছেন জুয়েনা শবনম।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ, ভারতের চিত্রনির্মাতা-লেখক-গবেষক ড. বিশ্ব রায় প্রমুখ।
বিশ্বের সব নারীকে সম্মান জানাতে বাংলাদেশের প্রথম নাট্যদল হিসেবে ২০১২ থেকে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে স্বপ্নদল। দিবসটিতে এর আগে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার, শিমূল ইউসুফ, লাকী ইনাম, নূনা আফরোজ, আইরিন পারভীন লোপা, সাধনা আহমেদ, ত্রপা মজুমদার, রোকেয়া রফিক বেবী, মোমেনা চৌধুরী, আছমা আক্তার লিজা এবং স্বপ্নদলের নিয়মিত নারী-নাট্যকর্মীসহ স্বপ্নদলের সব নিয়মিত নাট্যকর্মীর মাতাদের। তারই ধারাবাহিকতায় ‘হেলেন কেলার’ প্রদর্শনীর আগে নিবেদিতপ্রাণ নাট্যজন জয়িতা মহলানবীশকে স্বপ্নদলের ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্মাননা ২০২৩’ প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত, দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও প্রবল আত্মবিশ্বাস আর শিক্ষয়িত্রী অ্যান স্যুলিভানের অতিমানবিক প্রেরণায় হেলেন কেলারের সব নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনী নিয়ে আবর্তিত স্বপ্নদলের ‘হেলেন কেলার’ প্রযোজনা। এতে হেলেন কেলারের নিজ শিক্ষয়িত্রী অ্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষ্যে প্রকাশিত হয় চার্লি চ্যাপলিন-মার্ক টোয়েন-কেনেডি-আইনস্টাইন প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে তার জীবনের সমৃদ্ধির কথা। উন্মোচিত হয় পাশ্চাত্যের হেলেন কেলারের জীবনে প্রাচ্যের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তথা রবীন্দ্রদর্শনের প্রবল প্রভাবের প্রকৃত স্বরূপ! উঠে আসে নারীজাগরণ-মানবতাবাদের পক্ষে এবং যুদ্ধ-ধ্বংস-সহিংসতা-বর্ণবাদ তথা আণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে তার স্পষ্ট অবস্থানের কথা। পাশাপাশি উচ্চকিত হয় হেলেন কেলারের ব্যক্তিজীবনের নানা পূর্ণতা-অপূর্ণতার প্রসঙ্গও। অজ¯্র প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রকাশিত ও বিকশিত হয়ে মানবকল্যাণে নিবেদিত হতে পারাটাই জীবনের চূড়ান্ত সার্থকতা- এ উচ্চাঙ্গের অনুভবটিই শেষাবধি

প্রধান হয়ে ওঠে হেলেন কেলারের জীবনীনির্ভর এবং গবেষণাগার পদ্ধতিতে নির্মিত ঐতিহ্যের ধারায় আধুনিক বাংলা নাট্যরীতির এ প্রযোজনায়। বলাবাহুল্য, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালে হেলেন কেলারের প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুদ্ধবিরোধী ঐকান্তিক আকুতি কিংবা নানা প্রয়াসের প্রেক্ষাপটে বর্তমান সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চিরায়ত উপযোগিতা সম্পর্কেও প্রযোজনাটি দর্শককে নিঃসন্দেহে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে।
‘হেলেন কেলার’ প্রযোজনাটি দেশে নিয়মিত মঞ্চায়ন এবং দেশের বাইরে জাপানের টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের আমন্ত্রণে, ভারতে চারটি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে প্রদর্শনীসহ আজ পর্যন্ত ৪৭টি সফল মঞ্চায়নের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সীমা ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে ৬টি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে দর্শকনন্দিত প্রদর্শনীর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্মরণীয় গ্রহণীয়তা পেয়েছে।