এবার ডিএনসিসির গাড়িচাপায় বাইক চালকের মৃত্যু : মেশিনে পেঁচিয়ে নিহত ১

আগের সংবাদ

আতঙ্কের বসতি পুরান ঢাকা : কেমিক্যাল গোডাউন না সরায় ক্ষোভ, নিমতলীর ১৭ দফা বাস্তবায়ন জরুরি

পরের সংবাদ

আজ বিশ্ব কিডনি দিবস : ডায়ালাইসিস নিতে না পারা কিডনি রোগীরা মৃত্যুঝুঁকিতে

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কিডনি বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮৫ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যুবরণ করবে। প্রাণঘাতী হিসেবে কিডনি রোগের অবস্থান দুই যুগ আগে ছিল ২৭তম, বর্তমানে এটা দাঁড়িয়েছে ৭ম এবং ২০৪০ সালে ৫ম অবস্থানে পৌঁছাবে।
কিডনি রোগের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, দেশের প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত। ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৯০০ জন রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন। তবে বিশাল একটা অংশ আর্থিক সংকটে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারছেন না। আর এর ফলে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে তারা। এদিকে প্রতি বছর নতুন করে আরো ১ হাজার জন কিডনি রোগী যোগ হয়। এ সংখ্যা মোট আক্রান্তের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এছাড়া বাকি কিডনি রোগে আক্রান্ত ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ডায়ালাইসিস নিতে পারে না। তার মানে নিশ্চিত মৃত্যু। বাংলাদেশে এত মানুষকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়াও সম্ভব নয়। সবাইকে এ সেবার আওতায় নিতে স্বাস্থ্যসেবায় আরো ৫গুণ বেশি বাজেট প্রয়োজন হবে। তাই কিডনি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আর জাতীয় কিডনি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফিরোজ খান বলেন, সাধারণত ৭৫ শতাংশ কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে রোগীরা বুঝতেই পারেন না যে তিনি ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত। অথচ সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা করালে অর্ধেকের বেশি কিডনি রোগী পুরোপুরি সুস্থ হতে পারে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না হওয়া এবং কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে স্থায়ী কিডনি অকেজো রোগে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ‘সুরক্ষা বিমা’ চালু এবং মরণোত্তর দেহ দানের আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতি বছর ১৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। একটি সময় পর্যন্ত তাদের কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য অর্গান ভালো থাকে। সেগুলো দান করা হলে দুস্থ রোগীদের জন্য কিডনি পাওয়া সহজ হবে। দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় কিডনি সুরক্ষা বিমা চালুর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কিন্তু এটি এখনো ওই কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় কিডনি হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৩৮টি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে ৩১টি। এছাড়া চলতি বছরে প্রতিস্থাপন হয়েছে ৭টি। ১৯ জানুয়ারি মরণোত্তর অঙ্গদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ২০ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সারা ইসলাম। এরপর ৬৯ বছর বয়সি নন্দিতা বড়ুয়াসহ অনেকেই মরণোত্তর দেহ দানে এগিয়ে এসেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মরণোত্তর দেহ দানের প্রতিশ্রæতি যত পাওয়া যায় দেহ তত মেলে না। মরণোত্তর দেহ দানের কেন্দ্রীয় কোনো হিসাবও নেই। প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, মানুষ মারা গেলে তার দেহ কোনো কাজে আসে না। মনে রাখতে হবে, হৃদক্রিয়া বন্ধ হলে শরীরের অন্য অঙ্গেও রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো দ্রুত বিকল হয়ে পড়ে। আর ব্রেন ডেথ হলে যার বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনাই নেই, তার অঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীর ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা সম্ভব। দেশে লাখ লাখ মানুষ শরীরের কোনো কোনো অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার রোগে ভোগেন এবং তার একমাত্র চিকিৎসা অঙ্গ প্রতিস্থাপন। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করা ব্যক্তির দুটি কিডনি দুজনকে দেয়া যেতে পারে, একটি লিভারের কিছু অংশ দান করতে পারেন।
ফুসফুস দিতে পারেন এবং একটি হৃৎপিণ্ড একজনের দেহে প্রতিস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তা ছাড়া চোখের কর্নিয়া দানের মাধ্যমে অন্ধ মানুষকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া যেতে পারে।
কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. হানিফ বলেন, মায়েরা যখন প্রসবের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে তখন শিশুর কিডনি পরীক্ষা করা দরকার। শিশুর জন্মের আগে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হলে দ্রুত তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা। পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত বা সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা, তীব্র মাত্রার ব্যথার ওষুধ পরিহার করা জরুরি। বংশে কিডনি রোগ আছে, যাদের আগে কোনো কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের বছরে অন্তত ২বার প্র¯্রাব ও রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এই প্রেক্ষাপটে, সবার জন্য সুস্থ কিডনি- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি পালিত হয়। সরকারের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট, কিডনি ফাউন্ডেশন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন ও ক্যাম্পসসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়