সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্বেগ

আগের সংবাদ

কেন এত ভবন বিস্ফোরণ? : সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব, সামর্থ্যরে ঘাটতি আছে রাজউকের

পরের সংবাদ

জাতীয় পাট দিবস উদযাপন : পাটের ‘সুদিন’ ফেরাতে কাজ করছে সরকার

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘সোনালী আঁশ’ হিসেবে পরিচিত পাট বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এক সময় দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট। সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আসত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে। পাটের সেই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। তাই পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। জাতীয় পাট দিবস-২০২৩ ও পাট খাতে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে গতকাল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। অনুষ্ঠানে পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে অবদানের জন্য ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, পাট খাত বিকাশের লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ষষ্ঠবারের মতো জাতীয় পাট দিবস উদযাপিত হচ্ছে। পাট আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। ছয় দফা আন্দোলনের ঘোষণায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে পাটের অবদানের বিষয়টি এনেছেন। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পোস্টারে পাট অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রয়োজনীয় গবেষণা ও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় পাট খাতের যুগোপযোগীকরণ, সৃজনশীল প্রয়োগ এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের জন্য আমাদের সরকার নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ‘সোনালি আঁশ’ পাটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতি গতিশীল করার জন্য নেয়া নানা উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ৬ মার্চকে জাতীয় পাট দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য-২৩’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কার ও প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে দেশ-বিদেশে পাটের ব্যবহার ও চাহিদা এক সময় কমতে থাকে। খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের জন্য ধান চাষকে অগ্রাধিকার দেয়ায় কৃষক পাট চাষের চেয়ে ধান চাষে বেশি মনোনিবেশ করেন। বিশ্বের অনেক দেশ পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ফলে প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারে মনোনিবেশ করেছে। তাই বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে আবার পাটের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
শিল্প খাত বিবেচনায় পাটশিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। প্রতিবছর কাঁচা পাট, প্রচলিত পাটপণ্য এবং বহুমুখী পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, যা রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দেশের ৪০ থেকে ৪৫ লাখ চাষি প্রত্যক্ষভাবে পাটের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং পাট চাষ থেকে পাটপণ্য উৎপাদন, বিক্রয় ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
আমাদের সরকার পাটচাষিদের পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা, পাটের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বিদেশে পাটের বাজারের প্রসার ও মানোন্নয়নের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৩-৪ শতাংশ আসে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে, তাই পাটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে রপ্তানি আয়ও অনেক বাড়বে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালার তফসিলে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুঁড়া, পোল্ট্রি ফিড ও ফিশ ফিডসহ মোট ১৯টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইনটি বাস্তবায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিবছর প্রায় ১৯০ কোটি পাটের বস্তার চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে সরকারি-বেসরকারি পাটকলে উৎপাদিত পাটের বস্তার মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৩০-৩৫ কোটি ব্যবহৃত হয়েছে। আমাদের যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি পাটকলগুলো কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, মেধা ও মননের সমন্বয়ে আমরা নিশ্চয়ই নিত্য নতুন বিশ্বমানের বহুমাত্রিক সামগ্রী তৈরি করতে সক্ষম হব। আমরা এরই মধ্যে জুট পলিমার ব্যাগ এবং পাট পাতা হতে তৈরি চায়ের মতো পানীয় উৎপাদনের প্রাথমিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। বিশ্ববাজারে তার পরিচিতি তুলে ধরতে পারলে চায়ের বিকল্প হিসেবে সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে। পাট থেকে তৈরি জুট জিও টেক্সটাইল বাঁধ নির্মাণে, ভূমিক্ষয় ও ভূমিধস রোধে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় পাটের কচি পাতাকে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। পাটের তৈরি লুঙ্গি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শোপিস, ওয়ালমেট, নকশিকাঁথা, পাপোস, জুতাসহ নানান পাটজাত পণ্য যেমন আকর্ষণীয়, তেমন পরিবেশবান্ধব।
সম্মাননা পেলেন যারা : পাটবীজ, পাট ও পাটজাত পণ্যের গবেষণায় সেরা গবেষক ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদ আল হোসেন, সেরা পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষি ক্যাটাগরিতে কিশোরগঞ্জের আবু হানিফ, সেরা পাট উৎপাদনকারী চাষি পাবনার এনামুল হক, পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা প্রতিষ্ঠান (হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি) উত্তরা জুট ফাইবার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
পণ্য রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান (হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি) জোবাইদা করিম জুট মিল মিলস লিমিটেড, পাটের সুতা উৎপাদনকারী সেরা পাটকল হিসেবে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড, পাটের সুতা রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনতা জুট মিলস লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল হিসেবে সোনালি আঁশ লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্রিয়েশন (প্রা.) লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা মহিলা উদ্যোক্তা হিসেবে তরঙ্গ ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা পুরুষ উদ্যোক্তা হিসেবে গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়