সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্বেগ

আগের সংবাদ

কেন এত ভবন বিস্ফোরণ? : সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব, সামর্থ্যরে ঘাটতি আছে রাজউকের

পরের সংবাদ

ইতিহাস বদলে দেয়া ভাষণ

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : একটি ভাষণ বদলে দিয়েছিল একটি জাতির ইতিহাস। মুক্তিকামী বাঙালিকে এনে দিয়েছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য। সেই ভাষণ নিয়ে প্রায় পাঁচ দশক ধরে গবেষণা চলছে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যের শুরুতে কীভাবে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার জানিয়েছিলেন তার বিশ্লেষণ দিয়ে শুরু। এরপর বাঙালির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির প্রয়োজনীয়তা, রক্তে রঞ্জিত রাজপথের

ইতিহাস, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাঙালির বঞ্চনা, পুরো জাতির দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর নিজের কাঁধে তুলে নেয়া, ভুট্টোর হুমকি উপেক্ষা করে পশ্চিম পাকিস্তানের গণপরিষদ সদস্যদের পূর্ব বাংলায় এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আস্থা ঘোষণা, ন্যায়ের প্রতি অবিচল থাকা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, দেশপ্রেম আর জনগণের প্রতি আস্থা, ১ মার্চ থেকেই বঙ্গবন্ধুর সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ আত্মমর্যাদা এবং অধিকারের দাবির ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরকে কেন দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে? তার অনুপস্থিতিতে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনায় কী নির্দেশনা? সবই ছিল ওই ভাষণে। বাঙালি-অবাঙালি আর সব ধর্ম-বর্ণের ৭ কোটি মানুষের ঐক্যের শক্তি, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আত্মত্যাগের অঙ্গীকার এবং প্রথমে বাঙালির মুক্তি এবং পরে স্বাধীনতার যে বাক্যগুলো তিনি বলেছিলেন তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। অসা¤প্রদায়িক স্লোগান হিসেবে কীভাবে জয় বাংলাকে বঙ্গবন্ধু সবার উপরে তুলে ধরেছিলেন সেই বিশ্লেষণও এসেছে শেষ ধাপে।
আজ সেই ৭ মার্চ। ক্যালেন্ডার থেকে উঠে আসা একটি তারিখ ঐতিহাসিক হয়ে গেছে একটি ভাষণের জন্য। অন্যান্য সাধারণ দিনের মতো হলেও প্রায় পাঁচ দশক আগে এই দিনটিই বদলে দিয়েছিল বাঙালি জাতির ভাগ্য। যতদিন পৃথিবীতে শোষিত মানুষ থাকবে, বৈষম্য থাকবে- ততদিন এই ভাষণ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনাবে।
অগ্নিঝরা একাত্তরের ৭ মার্চ পাকিস্তানি শাসন-শোষণে নিপীড়িত বাঙালিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (রেসকোর্স ময়দান) জনসমুদ্রে তর্জনী উঁচিয়ে ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল দলিল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদদের মতে, ভাষণটি ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ২৩ বছরের বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিপ্লব। ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তান কী কী করেছিল এ দেশের মানুষের সঙ্গে এই ফ্যাক্ট এন্ড ফিগার বলেছিলেন তার ভাষণে। এটি ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর কোনো ভাষণ নয়; সাড়ে ৭ কোটি মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি। ভাষণটি স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সবার মধ্যে প্রোথিত করতে সক্ষম হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দুটি পর্যায়ে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি কৌশলগত নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমি এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ আরো বলা হয়েছে, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকেদের ওপর হত্যা করা হয়। তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।’ একই সঙ্গে এই বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু নিয়তকরণীয় ছোট ছোট বিষয় সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বললেন, ‘দুই ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নেবার পারে। কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না।’
শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি মিনিটে গড়ে ৫৮ থেকে ৬০টি শব্দ উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিটে এই কালজয়ী ভাষণটি শেষ করেছিলেন। এক হাজার একশ সাতটি শব্দের এ ভাষণে কোনো বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি নেই, কোনো বাহুল্য নেই- আছে শুধু সারকথা, সারমর্ম। দু-একটি স্থানে পুনরাবৃত্তি বক্তব্যের অন্তর্লীন তাৎপর্যকে বেগবান করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ও মূলসূত্র ৭ মার্চের এই বক্তৃতা। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এ বক্তৃতা ছিল আমাদের সিংহনাদ বা যুদ্ধ স্লোগান। এ ভাষণই ছিল কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা।
বিশ্লেষকদের মতে, ১৯ মিনিটের অলিখিত ভাষণটিই প্রয়োজনীয় শব্দে ঠাসা। একটাও অপ্রয়োজনীয় শব্দ নেই। কবিতার ছন্দে অস্ত্রহীন জাতিকে সশস্ত্র যোদ্ধায় পরিণত করলেন। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের প্রতিটি লাইন পৃথক গবেষণার দাবি রাখে। তাদের মতে, ভাষণের পর ৮ মার্চ থেকে বিশ্বজনমত বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রতিটি কথা বিশ্বের গণমাধ্যম ও বিশ্বনেতারা গুরুত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তার দুই শত্রæ ভুট্টো ও ইয়াহিয়াকে নিয়ে সংযত ভাষায় কথা বলেছেন। তার যে আচরণ তার চেয়ে সংযম তার পরিমিতিবোধ প্রকাশ করেছে তার এই ভাষণে। শতাব্দীর পর শতাব্দী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে কথা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়