চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট

আগের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : মালিক লাপাত্তা, অবহেলায় মৃত্যুর দায়ে মামলার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনার ২৩ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। তবে বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, অক্সিজেন প্ল্যান্টের বয়লার থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে। বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। গতকাল রবিবার বিকাল ৪টার দিকে উদ্ধার অভিযান শেষ হয়। দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার কার্যক্রমে নতুন করে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গতকাল রবিার বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্ল্যান্ট থেকে যে কলামের মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরা হয়, সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে। অক্সিজেন ছাড়াও কার্বন ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার দেখা গেছে। প্ল্যান্টের চারটি পয়েন্টে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, সেখানে অক্সিজেন

সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ হয়নি। তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিলে বিস্তারিত জানা যাবে।
শনিবার বিকাল ৫টার দিকে কদমরসুলের কেশবপুর এলাকায় সীমা স্টিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে কয়েক কিলোমিটার এলাকা। ঘটনাস্থলের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিটকে পড়ে বিস্ফোরিত ইস্পাতের টুকরো। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো ১৮ জন। গুরুতর আহত দুজন আইসিইউতে। তাদের মধ্যে প্রভাষ নামের একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। নিহতদের মধ্যে ছয়জনেরই পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে মালিকপক্ষের কারো হদিস মিলছে না। শুধু প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ছাড়া অন্য কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। মালিকপক্ষ লাপাত্তা। জানা গেছে, সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডে উৎপাদিত অক্সিএসিটিলিন গ্যাস লোহার পাত কাটা ও লোহা গলাতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বিশেষ করে জাহাজভাঙা ও স্টিল রি-রোলিং মিলে এই গ্যাস ব্যবহার করা হয়। সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। ঘটনার পর থেকে তাদের কোনো হদিস আমরা পাচ্ছি না।’
উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া রবিবার বিকালে বলেন, উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। তবে আমরা এখনো ঘটনাস্থলে আছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত শেষে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ বলা যাবে। আপাতত নতুন করে বিস্ফোরণের আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, ভয়াবহ বিস্ফোরণে অক্সিজেন প্ল্যান্টটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ যে তদন্ত কার্যক্রম, বিস্ফোরণটা কীভাবে হলো সেটা অনুসন্ধান করছি। আমাদের টিম সেখানে আছে। তদন্তের পর অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন আমরা দেব। এরপর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিতেও আমরা আছি। সেই কমিটি পৃথকভাবে তদন্ত করবে। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ কী মনে হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। এটা ঠিক আছে। তবে বিস্ফোরণটা কী কারণে হয়েছে সেটা আমাদের টিম তদন্ত করছে। এখনো সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তারপরও আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা যতটুকু নিশ্চিত হয়েছি তাতে বলা যায়, প্ল্যান্টের একটি বিম্বে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিম্বটি বয়লারের একটি অংশ। তবে বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে রয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিচ্ছেন। এছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষ ও প্ল্যান্টসংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করছে তদন্ত টিম। তিনি আরো বলেন, ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের জন্য মালিকপক্ষ থেকে একটা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ও হতাহতদের জন্য সহায়তা কেন্দ্র এবং কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশের কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রাথমিক তদন্ত শেষ হলে মামলা দায়ের করা হবে। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। বিস্ফোরণের ঘটনার পর মালিকপক্ষের কোনো প্রতিনিধিকে আমরা ঘটনাস্থলেও পাইনি, হাসপাতালেও পাইনি। আমাদের সঙ্গেও কেউ যোগাযোগ করেননি। আমাদের প্রাথমিক তদন্ত শেষে হতাহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে এ বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। এছাড়া ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট যাদের দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া যাবে তাদের মামলায় আসামি করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়