চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট

আগের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

মহেশখালীতে আত্মসমর্পণ করা ৪৩ জলদস্যুর মামলা প্রত্যাহার : খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মামলা বহাল

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার থেকে : জলদস্যুদের দেয়া সরকারের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পণ করা ৪৩ জলদস্যুর বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মামলা ছাড়া অন্য সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন শাখা-১ কর্তৃক কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত পত্রমূলে গতকাল বেলা ১২টায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত (২) এর বিচারক মামলা প্রত্যাহারের এই আদেশ দেন।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম ও এডভোকেট সুলতানুল আলম জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মহেশখালীতে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু ও বনদস্যুদের মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পত্র স্মারক নং-৪৪.০০.০০০০.০৫৫.০৫.১৪৮.১৮.৬২৯ মূলে আদালত আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় রুজু হওয়া খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মামলা ব্যতীত অন্য সব মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের আদেশ দেন।
এডভোকেট সুলতানুল আলম বলেন, মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রæতির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে। সরকার যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অপরাধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছে আশা করি, সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে হাজির হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষ। মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এলাকার ৪৩ দস্যু আত্মসমর্পণ করবে, তা দেখতেই এই ভিড় হয়েছিল উৎসুক জনতার। এই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে তারা তুলে দিয়েছিলেন অস্ত্র, গোলাবারুদ।
অনুষ্ঠানে ১৫ মামলার আসামি কুতুবদিয়ার রমিজ বাহিনীর প্রধান রমিজ আহমদ জমা দেন ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়া মহেশখালীর কালারমারছড়ার বিভিন্ন বাহিনীর ২৩টি, জালাল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মো. ইসমাইল ২৯টি, আয়ুব বাহিনী ৯টি ও আলাউদ্দিন বাহিনী ১টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়। আত্মসমর্পণ করা ৪৩ জলদস্যুর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত দস্যু আছেন ১২ জন। অস্ত্রের মধ্যে আছে বেলজিয়ামের তৈরি ১টি এসএমজি, একটি ব্রিটিশ রিভলবার, ৩টি দেশি পিস্তল, ৫২টি একনলা বন্দুক (এসবিবিএল), ২টি দোনলা বন্দুক (ডিবিবিএল), ১৯টি ওয়ান শুটার গান, ১৫টি থ্রি কোয়ার্টারগান ও ২টি ২২ বোর রাইফেল।
সদ্য মামলা প্রত্যাহার হওয়ায় খুশি হয়েছেন জানিয়ে কালারমারছড়ার আবু জাফর বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা মামলা হয়েছে তার অধিকাংশই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিগত জোট সরকারের রোষানলে পড়ার কারণে এসব মামলায় আমাকে আসামি করা হয়। মামলা প্রত্যাহার করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক, এমপি ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সরকার যা প্রতিশ্রæতি দিয়েছে তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন আমরা সুন্দর পরিবেশে সরকারপ্রদত্ত টাকা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সংসার চালাচ্ছি।
মামলা প্রত্যাহার হওয়া সোনাদিয়ার সাবেক এক দস্যুস¤্রাট নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেয়া অর্থ দিয়ে এখন ব্যবসা করছি। সংসার নিয়ে সুখেই আছি। আর কখনো খারাপ পথে পা বাড়াতে চাই না। তিনি সবাইকে দস্যুদের পদাঙ্ক অনুসরণ না করার অনুরোধ জানান।
র‌্যাব জানায়, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের ৬টি বাহিনীর ৪৩ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিল ওইদিন। তারা জমা দিয়েছেন ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭ হাজার ৬৩৭টি গোলা। ২০০৪ সাল থেকে র‌্যাব মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ কক্সবাজার অঞ্চলে ১৮৭টি অভিযান চালিয়ে ২০৮ জলদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে

গ্রেপ্তার করে। এ সময় উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি ৬৮২টি অস্ত্র ও ৭ হাজার ৯৯০টি গুলি। এ সময় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন দস্যু ও সন্ত্রাসী নিহত হয়। এর ফলে জলদস্যু ও সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়