চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট

আগের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

‘বোনের শোক না ভুলতেই মারা গেলেন বাবাও’ দগ্ধ ও আহতদের আর্তনাদ

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজিজুর রহমান জিদনী : টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে ১১ বছর বয়সি বোন মুনিরা আক্তার মারা গেছে ৪০ দিনও হয়নি। এর মধ্যেই আব্বাও চলে গেল। গত শনিবারও রাজধানীর আজিমপুরে বোনের কবরে গিয়ে দোয়া করে এসেছে আব্বা। বোনের শোক ভুলতে না ভুলতেই আব্বা মারা গেল… বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে এটুকু বলেই চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন রাজধানীর সাইন্স ল্যাবে ভবন বিষ্ফোরণে নিহত আবদুল মান্নানের (৬৫) ছেলে মোসাদ্দেক হোসেন। গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর বেসরকারি পপুলার মেডিকেলে এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
মোসাদ্দেক বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে ওই ভবনে অবস্থিত নিউ জেনারেশন স্টেশনারি কোম্পানিতে কাজ করছিলেন তার বাবা। গত মাসের ১৬ তারিখেই ছোট বোন টিবি আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মেয়ের মৃত্যু নিয়ে বাবার মধ্যে হাহাকার ছিল। এর মধ্যেই বাবাও চলে গেল। গতকাল সকালে প্রতিষ্ঠানটির মালিকের মাধ্যমে বাবার এ খবর জানতে পারেন তারা। শুধু মান্নানই নন, একই ঘটনায় নিহত সাদিকুর রহমান তুষার ও মো. শফিকুজ্জামানের পরিবারেও চলছিল শোকের মাতম।
বিস্ফোরণের পরপরই আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নেয়া হয় সাইন্স ল্যাবের পাশেই অবস্থিত বেসরকারি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আহত ৩৫ জনকে তারা জরুরি চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। হাসপাতালে আনা আহতদের বেশিরভাগের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, সোয়া ১১টার দিকে আহতদের আনা শুরু হয়। একে একে ৩৫ জন আহত রোগীকে জরুরি চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে অনেকে বাসায় গেছেন। অনেকদের ঢাকা মেডিকেল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনিস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আহতদের বেশিরভাগই মাথা ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম নিয়ে এসেছেন। অর্থাৎ থ্যাতলানো ছিল। আবার অনেকের শরীর আগুনে দগ্ধ ছিল। আমরা জরুরি সেবা দিয়েছি।
হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার সূত্রে জানা গেছে, পপুলার হাসপাতালে ১১ জন ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিউতে থাকা ৩ জনের মধ্যে একজন নারী। এছাড়া এসডিইউ বিভাগে ২ জন এবং হাইকেয়ার ইউনিটে রয়েছেন সাতজন।
এদিকে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন ১৩ জন। আহতদের যন্ত্রণা ও পোড়া ঘায়ের আর্তনাদে ভারি হয়ে হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। দগ্ধ ও আহতদের মধ্যে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি আছেন ৮ জন। তারা হলেন- জাকির হোসেন জুয়েল ( ৩৫), মেহেদী হাসান (২৫), সোহেল খান (৪০), তাজ উদ্দিন (৩০), কবির (৩২), রাবেয়া খাতুন (১৭), নুরুন্নবী (২৩) ও কামাল (৪০)। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এছাড়া শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধ পাঁচজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। তারা হলেন- ৩৮ শতাংশ দগ্ধ আয়েশা আক্তার আশা (২৬), ৪৪ শতাংশ দগ্ধ জহুর আলী (৫৬), ৩৭ শতাংশ দগ্ধ আকবর আলী (৫২), ৬ শতাংশ দগ্ধ আশরাফুজ্জামান (৩৫) ও ৮ শতাংশ দগ্ধ হাফিজুর রহমান (৩৬)। ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণ থেকে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ পাঁচজন আমার এখানে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে এই দুর্ঘটনায় নিহত ৩ জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়