চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট

আগের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

বিস্ফোরণে ভবনধস, নিহত ৩ : সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণের কারণ গ্যাস বলে মনে করছে পুলিশ

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার সকালে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এ ঘটনায় ধসে পড়া ভবনটিসহ এর আশপাশের এলাকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বোমা বিশেষজ্ঞদল। সেখানে বারুদ বা আইইডির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তাই বিষয়টি নাশকতামূলক কোনো ঘটনা নয় বলে জানিয়েছে তারা। তবে গ্যাস থেকেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের কারণে ভবন ধস ও আগুনের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে পোস্টার লাগিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। এ সময় সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে- সায়েন্সল্যাবের বিস্ফোরণের ঘটনাটি গত ২০২১ সালে ঘটে যাওয়া মগবাজারের বিস্ফোরণের মতোই গ্যাস থেকে সৃষ্ট একটি বিস্ফোরণ। ভবনটিতে কোনো না কোনোভাবে গ্যাস জমে ছিল। জমে থাকা গ্যাসের ঘনমাত্রা যদি ৫-১১ মাত্রার হয়- আর তা যদি ট্রিগার হয়ে থাকে তাহলে এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এই ট্রিগার ফ্যানের বা এসির সুইচের মাধ্যমেও হতে পারে। আর এত বড় বিস্ফোরণ গ্যাস থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, ভবনটিতে কনসিল্ড, পরিত্যক্ত বা সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস জমা হয়ে থাকতে পারে। আর গ্যাস থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্র বলছে, রাজধানী ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাবসংলগ্ন প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের বিপরীত পাশে অবস্থিত ৩তলা ভবনে বিস্ফোরণে আংশিক ধসে পড়াসহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়।

গতকাল রবিবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ঘটা এ ঘটনায় ৩ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরে রাজধানীর পলাশী, ধানমন্ডি ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের আরো ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর মধ্যেই বিস্ফোরণে ও আগুনে আহতদের বেশির ভাগ রোগীকে নেয়া হয় সায়েন্সল্যাবের পাশেই বেসরকারি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানে নিয়ে গেলে ৩ জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। নিহতরা হলেন- সাদিকুর রহমান তুষার (৩১), আব্দুল মান্নান (৬৫) ও মো. শফিকুজ্জামান (৪৫)। তারা সবাই ভবনটিতে অবস্থিত নিউ জেনারেশন নামে একটি স্টেশনারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। বিস্ফোরণের পরপরই আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে বেশির ভাগ রোগীকে নেয়া হয় সায়েন্সল্যাবের পাশেই পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আহত ৩৫ জনকে তারা জরুরি চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। হাসপাতালে নেয়া আহতদের বেশির ভাগের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মোট ১৪ জন ভর্তি আছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৫ জনের আস্থা সংকটাপন্ন।
এদিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম এন্ড অপরেশন ড. খ. মহিদ উদ্দিন গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চারটি কারণে এখানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। সেগুলো হলো- শর্ট সার্কিট, জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণ, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা এসি বিস্ফোরণ। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, সায়েন্সল্যাব এলাকার ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা নয়- এটি একটি দুর্ঘটনা। বিস্ফোরণের ঘটনাটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গতকাল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায় তিনতলা ভবনটির নিচতলায় হোটেল ও পাঞ্জাবিসহ নানা পণ্যের দোকান রয়েছে। দোতলায় সেলুন ও প্যান্টের দোকান। আর ৩য় তলায় ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের নিউমার্কেট শাখা ও নিউ জেনারেশন নামে একটি স্টেশনারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভবনটির পাশেই রয়েছে সুরাইয়ার ড্রিম নামে একটি ১৫তলা আবাসিক ভবন। ভবনটির ম্যানেজার এনামুল হক গতকাল ভোরের কাগজকে জানান, তিনি সকালে ব্যাংকে যান। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভবনে পৌঁছান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। এ সময় অভ্যর্থনা কক্ষের দরজাসহ ভবনের কয়েকটি ফ্ল্যাটের কাচ ভেঙে যায়। এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন ভবনটির পাশের মার্কেট প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের দোকানিরাও। তারা জানান, হঠাৎ বিকট শব্দে চারদিকে কেঁপে ওঠে। দৌড়ে মার্কেটের ভেতর থেকে বের হয় অনেকেই। তখন দেখা যায় ভবনটির তিনতলা উড়ে গেছে। নিচে ৪-৫ জন মানুষ পড়ে আছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে দেখে মনে হয়েছে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ধসে পড়া ভবনটিতে অবস্থিত স্টেশনারি প্রতিষ্ঠান নিউ জেনারেশনের স্বত্বাধিকারী আখতার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, গত শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর গতকাল সকালে তার প্রতিষ্ঠানে ৫ জন কর্মী হাজির হন। এর মধ্যে তিনজন মারা যান আর মাহবুব আলম ও মো. হান্নান নামে দুই কর্মী পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ভবনটির পাশের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারে একটু ঝামেলা ছিল। এছাড়া নিচে একটি হোটেল রয়েছে। গ্যাস সেখান থেকে এসে থাকতে পারে। তবে গতকাল ওই হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি বার্নারের ওপর তিনটি কড়াই অক্ষত অবস্থাতেই বসানো। গ্যাসের লাইনগুলোও অক্ষত আছে।
গতকাল বিকালে সেনাবাহিনীর বোমা বিশেষজ্ঞদলও ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৫৭ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানির কমান্ডিং অফিসার মেজর মো. কায়সার বারী বলেন, আমরা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেক্টর, নন লিনিয়ার জাংশন ডিটেক্টর আর জ্যামার দিয়ে ঘটনাস্থলে বারুদ ও আইইডি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখেছি। তবে ঘটনাস্থলে এসবের উপস্থিতি মেলেনি। ইন্স্যুরেন্স কোম্পনির জায়গাটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখান থেকেই এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়