চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট

আগের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

পাহাড় ও বন উজাড় করে চলছে অবৈধ ইটভাটা

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজিজুর রহমান জিদনী, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে ফিরে : ইটভাটা করার কোনো অনুমতি না থাকলেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাহাড় কেটে ও বনের কাঠ পুড়িয়ে অবৈধভাবে চলছে ইটভাটা। আদালতের তোয়াক্কা না করেই এসব গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় ও পরিবেশবাদী সংগঠন বলছে, ইটভাটায় বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়াসহ বিপন্ন হচ্ছে পাহাড় ও আশপাশের পরিবেশ। আরো উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে শুধু নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নয়, পুরো বান্দরবান জেলাতেই ইটভাটার কোনো অনুমতি নেই।
জানা গেছে, প্রায় ৪৬৯ বর্গকিলোমিটারের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাতেই এইচবিকে, এইচএসবি, ডিএসবি, বিবিএম, বিএইচবি, কেআরএস, কেআরই ও হাজিসহ মোট ১০টি ইটভাটা রয়েছে। এর একটিরও অনুমতি নেই। এসব অবৈধ ইটভাটার মালিকানায় রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। ইটভাটায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। বনাঞ্চলের গাছ কেটে তা পোড়ানো হচ্ছে। অনেকে এক্সকেভেটর ব্যবহার করে প্রকাশ্যেই সেখানে মাটি কাটা চলছে।
কেআরই ইটভাটার মালিক ঘুমধুম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খালেদ সরওয়ার হারেজ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, গত বুধবার উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ইটভাটা নিয়ে। সেখানে নিয়ম মেনে ইটভাটা চালাতে না পারলে বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে গাছ কেটে ও পাহাড় কেটে ইট তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে, গত ২৩ জানুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের রেজু আমতলী ও রেজুর ভালুকখাইয়া এলাকায় আইন অমান্য করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর দায়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের বিবিএম ব্রিকস ও এইচকেবি ব্রিকস নামের দুই ইটভাটার মালিককে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রোমেন শর্মা ভোরের কাগজকে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের কোনো জেলাতেই ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি নেই। এরপরও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হয়তো ইটভাটা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাতেও ইটভাটা হয়েছে। তবে সম্প্রতি একটি সভায় আমরা সেসব ইটভাটা কর্তৃপক্ষকে বলেছি আধুনিক পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থায় রূপান্তিরত না হলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এ জন্য তাদের কিছু সময় দেয়া হয়েছে। এর কারণ হলো, একটি ইটভাটার সঙ্গে অনেকজনের কর্মসংস্থানের বিষয় জড়িত। সেই কথা মাথায় রেখেই সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু না হলে আমরা ইটভাটাগুলো গুঁড়িয়ে দেব।
চট্টগ্রামের পরিবেশবাদী নাগরিক সংগঠন পিপলস্ ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান ভোরের কাগজকে বলেন, পাহাড় কেটে ও বনের গাছ কেটে ইট তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বিপর্যয়ে পড়ছে

পরিবেশ, আমরা সবাই তা জানি। তবে এগুলো দেখার তো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারা যতক্ষণ পর্যন্ত শক্ত হাতে এগুলো নিবৃত্ত করতে তৎপর হবে না ততক্ষণ এমন কাজ চলতেই থাকবে। আমি বলব, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয় বাংলাদেশের যত অবৈধ ইটভাটা রয়েছে সেগুলো বন্ধে এখনি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় রয়েছে ৬৫টিরও বেশি ইটভাটা। এর মধ্যে শুধু ফাইতং ইউনিয়নে ২৮টিসহ লামায় রয়েছে ৩৩টি ভাটা। বান্দরবান সদর উপজেলায় ১৪টি, আলীকদমের ৩টি, থানচিতে দুটি, রুমায় দুটি ও রোয়াংছড়িতে একটি ইটভাটা রয়েছে। এর কোনোটিরই অনুমতি নেই।
স্থানীয় কয়েকজন ইটভাটা শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ইটভাটায় ১৬ দিনে এক দফা ইট পোড়াতে গড়ে সাড়ে ৬ হাজার মণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন। একটি ইটভাটায় প্রতি বছর ১০ দফায় ৬৫-৭০ লাখ ইট পোড়াতে গড়ে সাড়ে ৬৫ হাজার মণ জ্বালানি কাঠ লাগে। সেই হিসাবে, বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় ৬৪টি ইটভাটায় প্রতি বছর ৪১ লাখ ৯২ হাজার মণ বা ১ লাখ ৬৬ হাজার টন গাছ পোড়ানো হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফখর উদ্দিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রেখেছি। জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহেও কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। এমনকি রাতের দিকেও আমরা অভিযান চালিয়েছি। কয়লার দাম বাড়ায় জ¦ালানি হিসেবে গাছের দিকে ঝুঁকতে চাইছে অনেকে। ধারাবাহিক অভিযানে সব ইটভাটাকে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়