চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট

আগের সংবাদ

কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

খুনসুটি

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মতি সারাদিন রিকশা চালিয়ে ঘরে ফিরে শাশুড়ি মাকে দেখে খুশি হলেও চিন্তায় পড়লো। এমনি দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। কামাই রোজগার কম হচ্ছে। যাই হোক, দুপুরে তার বউ রাবেয়া কল করে বলেছে- মা আইসেছে। ছোট ভাই দিয়া গেছে। পারলে দুধ আর মাছ আইনো। ঘরে শুধু দুটো ডিম আছে।
শাশুড়ি মাকে সালাম দিল মতি। হাসি মুখে কথাও বললো। ঢাকায় এক রুমের বাসা নিয়ে থাকে মতি- দুই ছেলে আর বউ নিয়ে। খুব কষ্ট হলেও থাকতে হয়। কিছু করার নাই। যাই হোক মেহমান হলো রহমত। যা পারে তাই করবে। কিন্তু রাবেয়ার জন্য কষ্ট লাগে। মাকে ভালো কিছু খাওয়াতে না পারলে সে খুব দুঃখ পাবে।
বাইরে এক কোনায় দুটো গ্যাসের চুলা। পাঁচটা পরিবার তাতে রান্না করে। সিরিয়াল করে রান্না করতে হয়। এখন রাবেয়া একাই রান্না করছে দেখে মতি খুব কাছে গিয়ে বললো- কি গো এখনো কি এত রান্না করো? মায়ের জন্য কত আয়োজন!
এমন দুষ্টু-মিষ্টি কথা বলে মতি সবসময়ই রাবেয়াকে জ্বালায়। এটা রাবেয়াও জানে। জেনেই মিথ্যা অভিমান করে। সেই রাগ আবার মতিকেই কত কসরত করে ভাঙাতে হয়! রাবেয়া অভিমান করে বলে- দেখ মা কিছুই খাইতে পারে না। এত শুকায় গেছে। ভাবী মনে হয় মায়েরে খেয়াল করে না। মায়ের জন্য ভালো কিছু বাজার করা দরকার। টাকাও তো হাতে নাই।
রাবেয়ার মন খারাপ দেখে মতি একটু হাসাতে চাইল। বললো- কিছু খাইতে পারে না। তো এতকিছুর কী দরকার কও? থাক গা কিছু কিনতে হইবো না। দুধ আর মাছ কিনলাম কার জন্য?
এবার রাবেয়া রেগে বললো- হুম আমার মারে দেখে তোমার খুশি লাগে নাই তো। আমার মা যে। তোমার মা হইলে তো বলা লাগে না। বাজার হাজির হয়। মারে কালকাই বাড়িত পাঠায় দিমু।
মতি এবার ঘাবড়ে গেল। তাড়াতাড়ি বললো- দেখ দেখি বউটা মজাও বুঝে না। আরে মা তো মাই। তোমার আর আমার কি? আমার মা আসলে তুমি কি কম করো নাকি? রাগ করে না। যাও দুধটা ঘন করে জ্বাল দিয়া মারে খাইতে দাও। ভাত দিছো তারে? কি রানছো তার লাইগা?
– কি আর রানমু? ডিম ছিল। আলু দিয়া ভুনা করছি আর শাক ভাজি। মায় আমার হাতের রান্না খুব পছন্দ করে। জোর কইরা খাওয়াইছি। এখন দুধ গরম কইরা দেই। রাবেয়া মৃদু ধাক্কা দিয়ে মতিকে সরিয়ে ঘরে গেল।
মতি মনে মনে খুশি হলো। যাক রাগ করে নাই পাগলীডা। সত্যি রাবেয়াকে অনেক ভালোবাসে মতি। এত অভাব অনটন। কিন্তু কোনোদিন অভিযোগ করে না। ছেলে দুইটারে কতকিছু বুঝায়। যাতে টাকা নষ্ট না করে। পোলাপান কতকিছুই তো কিনবার চায়। কিন্তু রাবেয়া দেয় না। যা দরকার তাই শুধু কিনে।
সকালে মতি আজ একটু তাড়াতাড়ি বের হলো। যদি কিছু টাকা বেশি পায় তো আজ একটা মুরগি কিনবে। শাশুড়ি তো রোজ রোজ আসে না। রাবেয়াও খুশি হবে।
সত্যি নিয়ত অনুযায়ী বরকত হয়। আর মেহমান তার রিজিকে যা থাকে তাই পায়। মাসের প্রথম তাই অনেকেই বাজার থেকে পুরা মাসের বাজার করে বাসায় যাচ্ছে। দুইজন তাদের বাজার উপরে তুলে দেয়ার জন্য পঞ্চাশ টাকা করে দিছে। আরো কিছু টাকা হলেই হয়। অন্য দিনের চেয়ে আজ কামাই ভালোই।
এক বয়স্ক লোক বাজার নিয়ে তাকে ডাকলো। বেশ দূরে বাসা। তাই ভাড়াও বেশি পাবে বলে রাজি হলো। তাড়াতাড়ি বাজার রিকশায় তুলে নিল। লোকটা কথা শুরু করলো। অনেকেই রিকশায় উঠে গল্প করে। আবার কেউ কথাই কয় না। বড়লোক মানুষ গো এমন গরিবের সঙ্গে কী কথা?
লোকটা মতিকে বললো- তা কী নাম তোমার?
– মতি।
– বাসায় কে কে আছে তোমার?
– জি¦। বউ আর দুই ছেলে আছে।
– বাহ! বেশ ভালো।
লোকটাকে দেখে ভালো মনে হলো মতির। তাই জিজ্ঞেস করলো- চাচা, একটা কথা কই?
– হুম, বলো।
– বাজারে মুরগি কত চাচা?
– মৃদু হেসে লোকটা বললো কেজি দুইশ। কেন?
– না মানে বাসায় শাশুড়ি মা আইছে তো তার লাইগা। সবসময় তো আহে না। বউটাও খুশি হইবো। কিছু মনে কইরেন না।
– আরে না। তোমার চাচি থাকতেও তার বাপের বাড়ির মানুষ আসলে এমন বাজার করে খাওয়ালে সেই খুশি হত। মেয়ে মানুষ এসব খুব পছন্দ করে। তোমার কথায় মনে পড়ে গেল। দুই বছর হয়, সে আমারে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।
লোকটার মনে হয় কষ্ট লাগলো। মতি তার কষ্ট বুঝতে পেরে বললো- আমার বউ খুব ভালো। কিন্তু অভিমান একটু বেশি। আমারে সেই ভালোবাসে। কখনো কিছু চায় না। যা দেই তাতেই আনন্দ। অনেক ভালো।
রিকশা থেকে সব নামিয়ে মতি বাসায় উপরে বাজার দিয়ে চলে আসবে এমন সময় ডাক দিল লোকটা। বাড়তি টাকা না দিয়ে বললো- এটা রাখো। বউ, শাশুড়ি আর বাচ্চাদের নিয়ে খাবা।
মতি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। বললো- চাচা আমি এজন্য বলি নাই। দুই মাস মুরগি কিনতে যাই নাই। সাহস হয় না। তাই জিগাই ছিলাম। আমি কিনতে পারমু।
ব্যাগটা মতির হাতে ধরিয়ে দিয়ে লোকটা বললো- মুরুব্বিদের কথা শুনতে হয়। যাও বাসায় যাও। তোমার তো আনন্দ করার মানুষ আছে। এটাই সময় তোমার। আমার তো সেই সুখ নাই এখন। তুমি যাও।
মতি বন্ধ হওয়া দরজার কাছে মিনিট দুই দাঁড়িয়ে থাকলো। ভাবতে লাগলো এখনো এমন মানুষ আছে? মন থেকে দোয়া করলো লোকটার জন্য।
বাসায় গিয়ে মতি বউকে ব্যাগ দিয়ে বলে- তাড়াতাড়ি রান্না বসাও। মার জন্য ভালো কিছু খাওয়া হইবো। রিজিকের মালিক আল্লাহ।
ব্যাগে পোলাও চাল, একটা মুরগি, একটা পাঙাশ মাছ ছিল। মতি অবাক হয়ে গেল। চোখে পানি চলে আসলো। মনে মনে অনেক খুশি হলো আর দোয়া করতে থাকলো।
রাবেয়ার হাতে জাদু আছে। এত ভালো রান্না করে! পেট ভরে সবাই খেল। রাবেয়া মহাখুশি। এর মধ্যেই চিন্তা করে- মতি এত টাকা খরচ করলো কীভাবে? ভাড়ায় রিকশা চালায় মতি। ভাড়ার টাকা কি বাকি রাখলো?
বউয়ের চিন্তা বুঝতে পারলো মতি। তাই বললো- আরে কী এত ভাবো গো? এক চাচা বাজার কইরা আমার রিকশায় উঠছিল। উনি দিছে। আমি নিতে চাই নাই। খুব জোর কইরাই দিলো।
মতির কথা শুনে রাবেয়াও দোয়া করলো লোকটার জন্য। আনন্দে চোখে পানি আসলো। কত ভালো মানুষ এখনো আছে দুনিয়ায়। জামাইয়ের আয়োজনে শাশুড়ি মা যে মহাখুশি তাও বুঝতে পারলো মতি আর রাবেয়া। মতি আর রাবেয়াও খুশি হলো।
ঐ অপরিচিত মানুষটা অল্প কিছু খাবার দিয়ে একটা পরিবারে সুখ দিল। তার জন্য এটা অল্প কিছু। কিন্তু মতির জন্য অসম্ভব আনন্দের স্মৃতি হয়ে থাকলো। মতির দোয়া লোকটার প্রাপ্য ছিল। আর বউ, শাশুড়ির দোয়া মতির জন্য ছিল বলেই মতি এতটা সুখ ও আনন্দ পেল। সংসারে অর্থের অভাব থাকলেও যেন ভালোবাসা আর সম্মানের অভাব না হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধুর খুনসুটি আর ভালোবাসাই টিনের ঘরে সুখের বসত গড়তে পারে। যা কিনা বড় বড় অট্টালিকাতেও মানুষ গড়তে পারে না।

ফারজানা ইয়াসমিন
আগারগাঁও, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়