সাভারে সাংবাদিকের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা

আগের সংবাদ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাবে : ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পরের সংবাদ

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি, আটক ১২ : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ রায়হান চৌধুরী রকি, আটোয়ারী (পঞ্চগড়) থেকে : পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতকে (কাদিয়ানি) নিষিদ্ধ ও তাদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও মুসল্লিদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে কাদিয়ানিরা। গতকাল শনিবার বিকালে পৌরসভার আহমদনগর এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা অবস্থান নেয়। তাদের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখা গেছে। সকালে জেলা শহরে যান চলাচল ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে যান চলাচল। সেই সঙ্গে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে বাইরে বের হয়। এরপর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে গতকাল বিকালের পর থেকে শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি সাধারণ মানুষের মনে কিছুটা ভীতি সৃষ্টি করে। ওই এলাকার দোকানপাট বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দোকানদারসহ সাধারণ মানুষকে বাড়িতে চলে যেতে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করেন বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় শহরে যান চলাচল অনেকটা কমে যায়। তবে অন্যদিনের তুলনায় গতকাল দিনব্যাপী জেলা শহরে যানচলাচল কম দেখা গেছে।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় পঞ্চগড় পৌরসভার আহমদনগর এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের লোকজন। সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন হামলাকারীরা তাদের অর্ধশত বাড়িতে প্রথমে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তালিকা করা

হয়েছে বলে জানানো হয়। এ ঘটনায় তাদের কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সালানা জলসা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক আহমেদ তবশের চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা থানায় এজহার দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের এজহার এন্ট্রি করেনি। পুলিশ যদি আমাদের আগে থেকেই নিরাপত্তা দিত। তাহলে হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি হতো না। সংবাদ সম্মেলনে সালানা জলসা কমিটির গণমাধ্যম কর্মকর্তা মাহমুদ আহমেদ সুমনসহ কাদিয়ানি সম্প্র্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের মোবারক আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার পরিবারের সবাই জলসাতে ছিল, আর আমি বাসায় একাই ছিলাম। হামলায় আমি ভীত হয়ে পড়ি। অনেককে ডাকাডাকি করেও কাছে পাইনি। তারা আমাকে পেলে মেরেই ফেলত। সালানা জলসা কমিটির গণমাধ্যেম কর্মকর্তা মাহমুদ আহমেদ সুমন বলেন, শুক্রবার জুমআর নামাজের পর আমাদের ৯৮তম সালানা জলসা শুরু হয়। পরে একদল হামলাকারী আমাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। আমার বাড়ির সবকটি ঘর পুড়ে গেছে। হামলায় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে তালিকা করছি। ধারণা করছি আমাদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত আরিফ হোসেনের জানাজা গতকাল বিকাল ৩টায় পৌরসভার রামের ডাংগা এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় সহ¯্রাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। নিহত মুসল্লির জানাজাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিকাল সোয়া ৩টায় শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির উপস্থিতি জোরদার করা হয়। তবে এদিন আন্দোলনকারীদের সড়কে দেখা যায়নি।
সংঘর্ষের দিন বিকালে পঞ্চগড় পৌরসভার আহমদনগর ও বোদা উপজেলার বেংহারী ইউনিয়নের শালশিরি এলাকায় আন্দোলনকারীদের একাংশ কাদিয়ানিদের বিভিন্ন স্থাপনা ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে এবং প্রায় অর্ধশত বাড়িতে আগুন দেয়। অনেক পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পুরো এলাকা যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণিত হয়েছে। চারিদিকে শুধুই বাড়িপোড়ার গন্ধ। গতকাল সকাল থেকে বাস-মাইক্রোবাস যোগে জলসা এলাকা ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায় জলসাতে অংশ নিতে আসা কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের লোকজনদের। পুলিশি পাহাড়া ও নিরাপত্তায় তাদের পঞ্চগড় থেকে চলে যেতে সহায়তা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, আমরা পরিস্থিতি শান্ত করেছি। জেলা শহরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। কাদিয়ানি সম্প্র্রদায়ের লোকজন সালানা জলসা ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তারা যে অভিযোগ করছে তা ভিত্তিহীন। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কৌশল অবলস্বন করেছি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জন আটক আছেন। আমরা বিস্তারিত আপনাদের পরে জানাব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়