সাভারে সাংবাদিকের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা

আগের সংবাদ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাবে : ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পরের সংবাদ

‘জয় বাংলার’ জয়

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : একাত্তরের ৫ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকের ব্যানার হেডলাইন ছিল- ‘জয় বাংলার’ জয়। রাজনৈতিক ভাষ্যকার ক্রেডিট লাইন দিয়ে ওই প্রতিবেদনের শুরুতেই একটি লাইন ছিল- ‘ক্ষমতার দুর্গ নয়, জনগণই যে দেশের সত্যিকার শক্তির উৎস, বাংলাদেশের বিগত তিন দিনের ঘটনাবলী নিঃসন্দেহে সপ্রমাণিত হয়েছে।’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলার মানুষের দুর্জয় আন্দোলন দেখে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে (পশ্চিম পাকিস্তান) নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
জনতার ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে একাত্তরের এইদিনে দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। মুক্তিকামী বাঙালির উত্তাল ও অপ্রতিরোধ্য দুর্বার আন্দোলনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভিত নড়ে ওঠে। নিরীহ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে, দ্বিগুণ গতিতে গর্জে ওঠে বাংলার প্রতিবাদী মানুষ।
নারায়ণগঞ্জের জনসভায় শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ। ঢাকায় সেদিন লেখক,

শিল্পী ও সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাগ্রত বাঙালির প্রার্থিত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের শপথ নেন তারা। একদিকে সামরিক বাহিনীর পতাকা, অপরদিকে জনগণের সামনে স্বাধীনতার সূর্য।
ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, টঙ্গীতে গুলিবর্ষণে ৪ জন নিহত, ২৫ জন আহত হয়। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয় ১৩৮ (পরে আরো বেড়েছিল)। রাজশাহী-রংপুরে আবার কারফিউ। এইদিনে ভুট্টোর সঙ্গে ইয়াহিয়ার ৫ ঘণ্টা বৈঠক হয়। গভীর রাতে পাওয়া এক খবরে জানা যায়, জুলফিকার আলি ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে পাঁচ ঘণ্টা টানা বৈঠক করেন।
রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এদিকে মুক্তির ঢেউ এদিন আছড়ে পড়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেও। একদল স্বাধীনতাকামী মানুষ বেরিয়ে আসেন কারাগারের দেয়াল ভেঙে। বেরিয়ে আসা ৩২৫ বন্দি চলে আসেন শহীদ মিনারে। যোগ দেন আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে। টঙ্গীতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রতিবাদে নিহত শ্রমিকদের লাশ নিয়ে রাজধানীতে মিছিল বের করা হয়। এদিন বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয় চট্টগ্রামেও। চট্টগ্রামের মিছিলেও গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা।
সংহতির ঘটনা ঘটে এদিন পশ্চিম পাকিস্তানেও। পাঞ্জাবিদের দ্বারা নিগৃহীত বেলুচিস্তানের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তকে অনাকাক্সিক্ষত ও অগণতান্ত্রিক বলে ঘোষণা করে। আন্দোলনে নিহতদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের লাহোরে। সেখানের বিভিন্ন মসজিদে দেশের সংকটময় মুহূর্তে সংহতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। গত কদিনে নিহতদের জন্য ৫ মার্চ পূর্ব বাংলায় সারাদেশের মসজিদ ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। আর শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য এদিন ঢাকায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু হয়।
অন্যদিকে ঢাকা শহর থেকে এদিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজনমত গঠনের লক্ষ্যে বিবৃতি দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। আর নিউমার্কেটে মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ন্যাপ ওয়ালীর জনসভায় আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। রাতে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আসগর খান আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার ধানমন্ডির বাসভবনে দেখা করেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণ দেবেন- তা সরাসরি স¤প্রচার করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান তোফায়েল আহমেদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়