সাভারে সাংবাদিকের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা

আগের সংবাদ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাবে : ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পরের সংবাদ

জুনে শেষ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ : চৌমুহনী-ফেনী মহাসড়ক উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, জনদুর্ভোগ

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : সড়ক বিভাগের আওতায় ৭৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে ফেনীর মহিপাল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কের নোয়াখালী অংশে চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে ফোর লেনে উন্নীতকরণ কাজে ধীরগতির কারণে চরম জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে ছমুন্সি বাজারের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সড়কের উত্তর পাশের দুই লেনের কাজ সম্পন্ন হলেও দক্ষিণ পাশের দুই লেন অংশে কোথাও এক লেন, আবার কোথাও কোনো কাজই হয়নি। পুরো সড়কের জায়গাজুড়ে রয়েছে স্থাপনা। সড়কের ওই দুই লেনের যেটুকু জায়গা খালি রয়েছে, সেই জায়গায়ও ইট, বালি, গাছ ও বিভিন্ন মালামাল ফেলে দখলে রেখেছে স্থানীয়রা। এতে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ দেখা দিচ্ছে। ওই সড়কে চলাচলকারী পরিবহনের চালক ও পথচারীরা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ চার বছর আগে এই সড়কের কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কের কাজ শেষ হয়নি। সড়কের বিভিন্ন অংশে ইট, বালি, গাছ ও লোকজনের বিভিন্ন জিনিসপত্র রেখে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হয়। বিভিন্ন সময় এই সরু সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। মানুষজনের ক্ষতি হয়েছে। এভাবে আর কত দিন? দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০১৯ সাল থেকে এই সড়কের কাজ করবে বলে জায়গা অধিগ্রহণ করার কথা বলা হয়। এতে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভারি মালামাল সরিয়ে সামান্য মালামাল রেখে ব্যবস্থা করি। কিন্তু সময় মতো ভূমি অধিগ্রহণ না করায় আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অন্যদিকে ব্যবসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও করতে পারছি না। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমাদের সড়কের জায়গা খালি করতে স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার কথা বললেও ভূমি অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে লোকমুখে শুনছি ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দেয়া হবে না। তাই আমরা আতঙ্কে রয়েছি। যার কারণে টাকা বুঝে পাওয়ার আগে আমরা আমাদের জায়গার দখল ছাড়ব না। সড়ক বিভাগ নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে ফেনীর মহিপাল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি অনুমোদন পায়। এই প্রকল্পের চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। তাহের বাদার্স, হাসান টেকনো বিল্ডার্স ও রানা বিল্ডার্স নামে একটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের এই অংশ বাস্তবায়নে কাজ করছে।
সড়ক উপ-বিভাগ নোয়াখালীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (চাটখিল) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের উত্তর পাশের দুই লেনের জায়গা খালি থাকায় আমরা দ্রুত ওই দুই লেনের কাজ শেষ করে ফেলেছি। সড়কের দক্ষিণ পাশে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘর-বাড়ি, বাজার অংশে দোকানপাট ও দুই-একটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই ওই অংশের ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। কাজের মেয়াদ আর মাত্র ৪ মাস বাকি, এই সময়ের মধ্যে জায়গা খালি না হলে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে না। তাই আমরা আমাদের হেড অফিসে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চিঠি লিখেছি।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় প্রকল্পের চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ৪টি এলএ কেস করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। ৪টি এলএ কেস এর মধ্যে একটি কেস অধিগ্রহণের মাধ্যমে শেষ করা হয়েছে। অধিগ্রহণকৃত ওই একটি কেসের জায়গায় আগামী ১৫দিনের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রাসেল বলেন, কাজের মান বজায় রেখে প্রকল্পের ৬৫ ভাগ কাজ আমরা গত ৬মাস আগেই শেষ করেছি। বাকি কাজ শেষ করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত শ্রমিক ও মালামাল রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ না করায় আমরা কাজ শেষ করতে পারছিনা। গত ৬ মাস প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কোনো কাজ না করিয়ে তাদের বেতন দিয়ে আসছি। অন্যদিকে দিন দিনই মালামালের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পে লোকসান গুনতে হবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা) শুভ দেবনাথ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রমে একটু জটিলতা থাকে, চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত এটি বড় একটি অংশ। এই অংশের চারটি কেস রয়েছে। একটির অধিগ্রহণের টাকা আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে দেয়া শুরু করব। বাকি তিনটির কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যে অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নোয়াখালীতে এক সঙ্গে অনেকগুলো প্রজেক্ট চলছে। সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। সব মিলিয়ে সকল কার্যক্রমকে সমান গুরুত্ব দিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রত্যাশিত সংস্থার কাছ থেকে টাকা পাওয়া সাপেক্ষে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কেসগুলোর ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া শুরু করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়