সাভারে সাংবাদিকের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা

আগের সংবাদ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাবে : ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পরের সংবাদ

ওমরাহ হজে আগ্রহ বাড়ছে মধ্যবিত্তের : খরচ বাড়ায় হজযাত্রী কমেছে

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে হজে যেতে পারছেন না। হজযাত্রীদের মধ্যে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বেশি হলেও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখন তারা আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইস্যুতে বৈশ্বিক মন্দায় বিমান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ায় হজযাত্রীর সংখ্যা কমছে। প্রাক নিবন্ধন করলেও সরকারি এবং বেসরকারি দুই ব্যবস্থাপনাতেই চূড়ান্ত নিবন্ধনের সংখ্যা অপ্রতুল বলে মনে করছেন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা। তবে বেড়েছে ওমরাহ হজযাত্রীর সংখ্যা।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল জানান, সবার সঙ্গে বসে মিটিং করে সব ধরনের হিসাব-নিকাশ করেই প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবন্ধন ধীরে হলেও হজযাত্রীর কোটা পূরণ হওয়া নিয়ে কোনো সংশয় দেখছি না। হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতির দায়িত্ব থাকা সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী ভোরের কাগজকে বলেন, বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে নেই। একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে ভাড়া নির্ধারণ করলে যাত্রীরা উপকৃত হতেন। হাব সবসময় হজযাত্রীদের কল্যাণে কাজ করে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মুদ্রার দাম বাড়ায় প্যাকেজ মূল্য বেড়েছে। করোনা মহামারি শেষে মানুষের ওমরাহ যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
একাধিক হজ এজেন্ট জানান, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। বিমান ভাড়া কম হলেই নিবন্ধনের গতি বাড়ত। অন্য সময় বিমানগুলো ৭০ শতাংশ যাত্রী বহন করে, আর হজের সময় যাত্রী পূর্ণ থাকে। কিন্তু হজযাত্রীদের কাছ থেকে সিঙ্গেল ট্রিপের দোহাই দিয়ে বিমান ভাড়া বেশি নেয় হচ্ছে। এছাড়া ডলার ও রিয়ালের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে ১৫ দিনের ওমরাহ প্যাকেজ শুরু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। ঢাকা-মদিনা সরাসরি ফ্লাইট হলে আরো ২০ হাজার টাকা বাড়তি বিমান ভাড়া। এ অবস্থায় হজে যেতে আগ্রহীরা নিরুপায় হয়ে ওমরাহ করতে যাচ্ছেন। গত এক মাসে ৮ লাখ বাংলাদেশি ওমরাহ হজে গিয়েছেন। মক্কা ও মদিনায় এখন অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের ভিড় রয়েছে। নিরাপত্তা, কড়াকড়ি ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
দিনাজপুরের উলামা আউলিয়া হজ গ্রুপ বাংলাদেশের মালিক আহসান হাবিবের আশা ছিল ৫০০ হজযাত্রী নিবন্ধনের। কিন্তু গত সোমবার পর্যন্ত নিবন্ধন করাতে পেরেছেন ৫০ জন। সিলেটের আকাবা ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক আব্দুল কাইউম গত বছর ৫০ জনকে হজে পাঠালেও এবার তার এজেন্সিতে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা হাতে গোনা। জয়পুরহাটের আল সেকান্দার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক সেকান্দার আলী গত বছর ১৭৬ জনকে হজে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর তার প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৩২ জন।
জানা গেছে, ২০২০ সালে হজে যাওয়ার জন্য প্যাকেজ মূল্য ছিল সাড়ে ৩ লাখ টাকার মতো, আর স্বামী-স্ত্রী দুজনের পুরো হজ করতে ৮ লাখ টাকাই যথেষ্ট ছিল। ৩০ হাজার ৭৫২ টাকা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু এবার দুজনের হজেই খরচ হবে ১৪ লাখ টাকা। আনুষঙ্গিক বাড়তি আরো ১ লাখ টাকা ধরলে হবে ১৫ লাখ টাকা।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমের হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক হিসেবে প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেন ৮ হাজার ৩৯১ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। এখন তাদের চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করতে বলা হলে অনেকেই

আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এ বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার আর ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন। হজ প্যাকেজের খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বিমান ভাড়ার কথা বলা হচ্ছে। গত বছর বিমান ভাড়া ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, আর এ বছর বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। গত বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ হয়। প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা। বেসরকারিভাবে হজ পালনে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা।
এ বছরের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ৮ ফেব্রুয়ারি, তা ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে শেষ দিনে আরো ৭ দিন সময় বাড়ানো হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক আগের সিরিয়াল বহাল রেখে ৪৫ হাজার ৫১৪ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হল। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক আগের সিরিয়াল বহাল রেখে ৮ লাখ ৪৬৭ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হল। কোটা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
মন্ত্রণালয়ের হজ সম্পর্কিত কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭ হাজার ১৯০ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১৮ হাজার ৬০৬ জন। সোমবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ১৩৪ জন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য সোমবার শেষ ঘণ্টায় ৫০১ জন নিবন্ধন করেছেন, আর পুরো দিনে করেছেন ৩ হাজার ৪৩২ জন। হজে যেতে সরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৮ হাজার ৫২০ জন, আর বেসরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৩ জন। অবস্থা বিবেচনায় ১৫ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়তে পারে। এ বছর শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ঢাকায় হবে। নেই ৬৫ বছরের বয়সসীমা। তবে ১২ বছরের কম বয়সি কেউ হজে যেতে পারবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়