সাভারে সাংবাদিকের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা

আগের সংবাদ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাবে : ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পরের সংবাদ

ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরেই নতুন ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণ?

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ গত এক বছরে দুদেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে বিশ্বব্যবস্থাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। ’৯০-এর দশকে শেষ হওয়া শীতল যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো নতুন মেরুকরণ হয়েছে। সংঘাত ও মুখোমুখি অবস্থানকে আরো প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে এই যুদ্ধ। বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও বেইজিং-কেন্দ্রিক দেশগুলোর বিভক্ত হওয়া আরো বেড়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা কৌশল বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল গত বছর ডিসেম্বরে বলেছিলেন, আমরা একটি বহু মেরুর বিশ্বে প্রবেশ করেছি যেখানে সবকিছুই অস্ত্র, জ্বালানি, ডাটা, অবকাঠামো, অভিবাসন সম্পর্কিত। ভূ-রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, সবকিছুই ভূ-রাজনীতি।
এশিয়ার মধ্যাঞ্চল, ককাস, বলকান, আফ্রিকা ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ছিল চীন, ইইউ, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র। অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন বা বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর, সামরিক বা কূটনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই লড়াই চলমান ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ সবকিছুকেই নাড়া দিয়েছে। মধ্য এশিয়ায় সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোতে রাশিয়ার প্রভাব দুর্বল হয়েছে। এতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুরস্ককে নতুন ভূমিকায় হাজির করেছে।
ফ্রান্সভিত্তিক এফএমইএস থিংকট্যাংকের প্রধান পিয়েরে রাজৌক্স বলেন, অনিবার্যভাবে যুদ্ধের অবসান রাশিয়া ও ইউরোপকে দুর্বল করবে। একই সময়ে এই পরিস্থিতির বড় দুই সুবিধাভোগী হবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
রাশিয়া যে কারণে চীনমুখী : ২০৪৯ সালে বিশ্বের শীর্ষ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্যের আলোকে ইউক্রেন যুদ্ধকে বিবেচনা করছে চীন। বেইজিংকে মস্কো সমর্থন করলেও পশ্চিমাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে এড়িয়ে গেছে দেশটি।
ইইউ ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক অ্যালিস একমান

বলেন, চীন দূরে সরছে না। বরং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করছে। পূর্ণ সহযোগিতা হয়তো করছে না চীন। এমনকি ইউক্রেনকে যে মাত্রায় সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র সেই মাত্রায় কোনো সহযোগিতা রাশিয়াকে দিচ্ছে না চীন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে। কার্যত যুদ্ধের ফলে বেইজিংয়ের একটি করদ রাজ্য বা মুখাপেক্ষী হওয়ার ঝুঁঁকিতে রয়েছে মস্কো।
অর্থনীতিবিদ ও নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ আগাথি দেমারাইস বলেন, চীনের সঙ্গে দরকষাকষির মতো অবস্থায় নেই রাশিয়া। চীন যা চাইবে তা পেয়ে যাবে। কিন্তু রাশিয়া যা চাইবে তা দিতে হবে না।
রাজৌক্স বলেন, ক্রেমলিন চীনের প্রতি নির্ভরশীলতা সীমিত রাখতে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য, ইরান ও আফ্রিকায় নিজেদের ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি ও কৌশলগত সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনছে। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার চীনের চেয়ে বড়, যা দেশটিকে পুরোপুরি চীনের অধীনস্থ হয়ে পড়া থেকে ঠেকাবে।
ইউরোপ কেন গুরুত্বপূর্ণ : ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য এই যুদ্ধ সুযোগ ও ঝুঁকি নিয়ে এসেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার সুযোগ যেমন রয়েছে তেমনি আবার ওয়াশিংটনের ছায়ায় পেছনে থাকার ঝুঁকিও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপ খুব খারাপ করছে না, যুদ্ধের শুরু থেকে সামরিক সহায়তা, শরণার্থীদের ত্রাণ ও রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরশীলতা হ্রাস করে নিজেদের টিকে থাকার শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রমাণ দিচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু ভবিষ্যৎ ও বৈশ্বিক পাটাতনে নিজেদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরো অনেক কাজ বাকি।
দেমারাইস প্রশ্ন তুলেছেন, স্পষ্টভাবে দুটি মেরু রয়েছে। একটি মার্কিন, অপরটি মিত্রদের নিয়ে চীন এবং রাশিয়া। ইউরোপ তৃতীয় ব্লক হবে নাকি হবে না কিংবা তারা কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকবে?
রাজৌক্স বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিয়েভকে সমর্থন করছে। ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চান। কিন্তু তারা বুঝতে পারছেন তারা এক বা দুটি রাজনৈতিক শর্তে নিজেদের একা অবস্থায় পেতে পারেন যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী কেউ হোয়াইট হাউসে বসেন।
২০০৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, একুশ শতকের গঠন হবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন নিজেদের মনোযোগ আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ে আসে। কিন্তু ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ দেখিয়ে দিচ্ছে ওবামার ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য ইউরোপ থেকে গুটিয়ে নেয়া এত সহজ নয়।
ফ্রান্সের সেনাপ্রধান বার্ট্রান্ড তুজস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিবর্তন রোধ করছে রাশিয়া, এতে লাভ হচ্ছে চীনের। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই দ্রুত ইউরোপ প্রশ্ন সমাধান করতে হবে।
জাপানে মোতায়েন হওয়া মার্কিন কমান্ডার জেমস বিয়েরম্যান সম্প্রতি বলেছেন, এই যুদ্ধের ফলে তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাত বিষয়ে বেশ কিছু বিষয় শেখার রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে রাশিয়ার আক্রমণের পর আমরা ভবিষ্যৎ সংঘাত মোকাবিলায় ইউক্রেনীয়দের প্রস্তুত করতে শুরু করি, আমরা কিছু স্থান নির্বাচন করি যেগুলো থেকে আমরা সহযোগিতা দিতে পারি। এটাকে আমরা মঞ্চ প্রস্তুত করা বলতে পারি এবং আমরা মঞ্চ প্রস্তুত করছি জাপানে, ফিলিপাইনে এবং অপর স্থানে।
বিশ্বায়নের ওপর আঘাত : ইউক্রেনকে মার্কিন ও ইইউর নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে অস্ত্র পাঠানোর পাশাপাশি রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জ্বালানি খাতে রাশিয়া বড় রপ্তানিকারক। জি-৭ ও ইইউর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেয়ার ফলে এই জীবাশ্ম জ¦ালানির বৈশ্বিক বাজার শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন টোটালএনার্জির প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক পিউয়ান্নি। তার কথায়, চীন ও ভারতের বড় ক্রেতা যখন ভিন্ন দামে রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে তখন বৈশ্বিক তেলের মূল্যের ধারণার অর্থই বা কী থাকে? এটি একেবারে নতুন কিছু এবং ২০২৩ সালে আমাদের এর মধ্য দিয়েই যেতে হবে।
পরাশক্তিগুলো এক সময় সর্বত্র মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে সোচ্চার ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারিতে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় আঘাত পড়েছে। মহামারির পর যুদ্ধে তা আরো বিপর্যস্ত হয়েছে।
জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে : আফ্রিকা থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, উষ্ণতা ও আশ্রয়ের পেছনে ব্যয় বেড়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারি শুরুর আগে থেকেই জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে বৈশ্বিক সংকট ছিল।
জার্মানিভিত্তিক ফ্রেডেরিখ এবার্ট ফাউন্ডেশন এক গবেষণায় বলেছে, এই প্রভাব কমানোর চেষ্টা করে অনেক দেশের সরকার। তবু ২০২২ সালে প্রতিদিনের মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যয় কমানোর জন্য নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশে এসব বিক্ষোভ বৃহত্তর জাতীয় রাজনৈতিক সংকট, বড় ধরনের সহিংসতা, হতাহত ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। সবচেয়ে বেশি ভুগছে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। কারণ তাদের বিপুল পরিমাণ খাদ্য আমদানি করতে হয়। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে দরিদ্র দেশগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে সংকট তো রয়েছেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়