সাভারে সাংবাদিকের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা

আগের সংবাদ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাবে : ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পরের সংবাদ

আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প কোন পথে

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আলোচনার যে কোনো প্রসঙ্গে আমরা ‘শিল্প’ শব্দটি যুক্ত করি। কিন্তু চলচ্চিত্র মাধ্যমটি আর্টের প্রতিশব্দ হিসেবে ‘শিল্প’ না ইন্ডাস্ট্রির প্রতিশব্দ হিসেবে ‘শিল্প’ সে সম্পর্কে ধারণাগত অবস্থান অনেকের কাছেই অস্পষ্ট। দীর্ঘদিনের এই অস্পষ্টতা চলচ্চিত্র শিল্পের সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এদেশের চলচ্চিত্র আর্ট হিসেবে ‘শিল্প’ না ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে ‘শিল্প’ সেই ভাবনা আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও চলচ্চিত্র মাধ্যমটি পূর্ববর্ণিত কোনোরূপ ‘শিল্প’রূপে স্বাধীন হতে পারেনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দীর্ঘ সময়ে আর্টের মর্যাদা যেমন অর্জন করতে পারেনি তেমনি শিল্পঋণের সুবিধা বঞ্চিত হয়ে ইন্ডাস্ট্রি হিসেবেও ‘জাতে’ উঠতে পারেনি। সুতরাং প্রতিপাদ্য বিষয়ের পশ্চাতে বহুমাত্রিক নৈরাশ্য ও হতাশাবোধ যেমন আছে- তেমনি আছে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। আর সাম্প্রতিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নে এদেশের চলচ্চিত্র শিল্প অনেকটাই উন্মূল। ‘এ দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব নয়’- পশ্চিম পাকিস্তানিদের সৃষ্ট এরূপ প্রতিবন্ধকতা ও সংকটের মধ্যেই আবদুল জব্বার খান নির্মাণ করেছিলেন সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। ছবিটি ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তি লাভ করে। সব বিরোধিতা উপেক্ষা করে এদেশে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক দাবি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাজির আহমদ এবং অন্যান্যের পরামর্শ ও সহযোগিতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় প্রাদেশিক আইন সভায় ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল বিল পাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘চলচ্চিত্র উন্নœয়ন সংস্থা’।
আর্ট বা ইন্ডাস্ট্রি কোনো অর্থে কোনোরূপ শিল্পের মর্যাদা পাক বা না পাক- এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্প ইতিহাসের দীর্ঘপথ অতিক্রম করেছে। নানা বাঁক বদলের মধ্য দিয়ে এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্প বর্তমানে আর পূর্বপুরুষদের আবেগ ও স্বপ্নচারিতাকে মেলানোই যায় না। এ দেশের সহস্রাধিক প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে বর্তমানে তা প্রায় ১০০-তে এসে ঠেকেছে। চলচ্চিত্র যেহেতু সংযোগ বা যোগাযোগমাধ্যম সেহেতু তাৎক্ষণিক সমসাময়িকতাকে ধারণ ও বহন করে অগ্রসর হতে হয়। আমাদের চলচ্চিত্র সেই সমসাময়িকতা বা যুগমানসকে কতটুকু স্পর্শ করতে পেরেছে- মূলত তার ওপরই মাধ্যমটির সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ভরশীল। চলচ্চিত্রচর্চার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এ দেশের সমসাময়িকতা বা যুগমানস চলচ্চিত্রপর্দায় খুব বেশি প্রতিফলিত হয়নি। যে ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবির মধ্য দিয়ে এদেশীয় চলচ্চিত্রের অভিষেক- লক্ষ্য করলে দেখা যায় তাতেও সমকালীন বাঙালির যুগমানস বা যুগরুচির প্রকাশ ছিল না। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তীব্র আবেগের কোনো প্রতিফলন প্রত্যক্ষ তো নয়ই পরোক্ষভাবেও সেই চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি। কিন্তু চলচ্চিত্রটির ঐতিহাসিক মূল্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। সাম্প্রতিকের যুগমানস আরো জটিল এবং নানাবৈচিত্র্যে বহুমাত্রিক। চলচ্চিত্র নির্মাণ ও পরিবেশনায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আমরা এখন তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানচর্চার যুগসন্ধিক্ষণে বসবাস করছি। এর প্রভাবে আমরা দ্রুত আবেশিত হচ্ছি। কিন্তু সেই আবেশায়ন প্রক্রিয়ায় এ দেশের চলচ্চিত্র কতটুকু অংশগ্রহণ করছে সেই প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায়। নানামুখী প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে যখন নীরব থাকতে হয় সামগ্রিকভাবে তখন আমাদের চলচ্চিত্র মাধ্যমটিকে অসহায় বলেই বোধ হয়। যে জনপ্রিয় বা মূলধারার চলচ্চিত্র এ দেশে বাণিজ্য অর্থে ‘শিল্প-অভিধা’র শিরস্ত্রাণ পরে রাজত্ব করছিল তারও আজ ছিন্নভিন্ন বেহালদশা! শিরস্ত্রাণে মণিমুক্তোর বালাই যেমন নেই- তেমনি এর কথিত রাজ্যপাটও একেবারে ধূলিমলিন। রাজারও নেই যথোচিত! আবার, গভীর সংকটাপন্ন অবস্থায় পতিত হলেও এদেশে নির্মিত কিছু চলচ্চিত্রের সাফল্য ও গৌরবদ্যুতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণায় আমাদের উজ্জীবিত করে।
তারেক মাসুদ বলেছিলেন : ‘চলচ্চিত্র প্রযুক্তিই কেবল উন্নত হচ্ছে না- ক্রমশ সহজ, সহজলভ্য ও সস্তা হচ্ছে।’ আমরাও তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, চলচ্চিত্র প্রযুক্তি কেবল উন্নতই হচ্ছে না- সৃষ্টিশীল মানুষের সৃজনশীলতা এবং প্রাযুক্তিক উন্নতির সমন্বয়ে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে দিন দিন। বৈচিত্র্যময় এসব চলচ্চিত্রকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য এবং সুলভ করে তুলতে হবে। শুধু তাই নয়, তারেক মাসুদ বিশ্বব্যাপ্ত চলচ্চিত্র প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে তাল মেলানোর কথা বলেছেন। বলেছেন, সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত করার স্বপ্নের কথাও। বলাবাহুল্য, চলচ্চিত্রকে মানসমৃদ্ধ, সহজ ও সহজলভ্য করে তুলতে না পারাও চলচ্চিত্র শিল্পের আরেকটি বড় সংকট। এই সংকটকে আরো প্রকট করে তুলেছে স্থানীয় ফিল্ম পলিটিক্স, আমলাতন্ত্র এবং এ দেশের চলচ্চিত্র মাধ্যমটির সঙ্গে জড়িত নিয়ন্ত্রণ-শক্তিধর কিছুসংখ্যক ব্যক্তির মানসিক জড়তা। প্রচলিত ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত না হতে চাওয়া জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ধারার কিছুসংখ্যক ব্যক্তি এবং তাদের স্থবির মানসিকতা চলচ্চিত্র শিল্পে বিশাল এক সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। অতীতে দেখেছি সরকারি হস্তক্ষেপও এই সংকটকে তীব্র করেছে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের সংকট বা সমস্যার দিকে চোখ ফেরালে প্রথমেই এফডিসির কথা বলতে হয়। এফডিসিই প্রথমত এবং প্রধানত বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগার। বাংলায় একটি প্রবচন আছে ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী- ফলে পরিচয়’। এ দেশের চলচ্চিত্রের দিকে চোখ ফেরালেই কথিত সেই ‘বৃক্ষ’ এবং তদোৎভূত ‘ফল’ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। আমরা দেখতে পাই- যেমন ‘বৃক্ষ’ তেমন ‘ফল’। সামগ্রিকভাবে এফডিসির দিকে তাকালে এর অবকাঠামো বলি আর উপরিকাঠামো বলি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে এফডিসি থেকে উৎপাদিত চলচ্চিত্রগুলোরও যে তথৈবচ অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। এসব চলচ্চিত্রদৃষ্টে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করা যায় না।
চলচ্চিত্র প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প ও গণমাধ্যম। প্রযুক্তির সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা ‘ছলা-কলা-কৌশল’ চলচ্চিত্রকে সব সময়ই গ্রহণ করতে হয়! স্পেশাল ইফেক্টের মাধ্যমে ‘চমৎকৃত’ করে দর্শকের কখনো কখনো ‘তাক’ও লাগিয়ে দিতে হয়। যে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প নব নব প্রযুক্তিকে যত বেশি সার্থকভাবে এবং বৈচিত্র্যের সঙ্গে ব্যবহারে সক্ষম হয়েছে- প্রযুক্তির নতুনত্বকে যত সহজে আত্মস্থ করেছে সেসব দেশের চলচ্চিত্র শিল্প একটি প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা লাভেও সক্ষম হয়েছে। একইভাবে চলচ্চিত্রগুলোও একটি উচ্চতা অর্জন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তর পঠন-পাঠন ও অধ্যয়নের সুযোগ-সুবিধা চলচ্চিত্র উৎপাদন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে তোলা উচিত- গড়ে তোলা উচিত বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত গবেষণাগারও। দুঃখজনক, এফডিসিকেন্দ্রিক কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক ল্যাবরেটরির অস্তিত্ব নেই। উপরন্তু এফডিসির চৌহদ্দির মধ্যে সামান্যতম একটি গ্রন্থাগারেরও অস্তিত্ব নেই। পরিচালক সমিতি নিজস্ব উদ্যোগে অফিসকক্ষে স্বল্পসংখ্যক পুস্তক রাখে বটে- একে গ্রন্থাগার বলা সমীচীন কিনা তাও ভাবনার বিষয়। এরূপ উৎপাদন কেন্দ্র এফডিসি নামক বৃক্ষটির ‘ফল’ কেমন হবে তা উল্লেখেরই প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র মাধ্যমে মুহূর্তে মুহূর্তে প্রযুক্তিগত ও চলচ্চৈত্রিক শৈলীর প্রকাশগত যেসব পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে তার সঙ্গে এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্প-সংশ্লিষ্টদের পরিচয় ঘটবার সুযোগ কম। চলচ্চিত্র শিল্পখ্যাত প্রধানতম উৎপাদন কেন্দ্র এফডিসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রযোজক বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আবার এসব পরিবর্তন নিয়ে ভাবতেই চান না। পরিবর্তনের ইতিবাচক ধারা ও ধারণা গ্রহণে নির্মাতাগোষ্ঠী নানা অজুহাতে অস্বীকৃতিও জানান। প্রসঙ্গত নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পমাধ্যম চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে যদি আমরা স্বাগত জানাতে না পারি, তাহলে আমরা জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়ব। প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের বরাবরই অনীহা কাজ করে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারার খেসারত জাতি হিসেবে আমাদের এর আগেও দিতে হয়েছে।’
সুতরাং শুধু অবকাঠামোগতভাবেই নয়- উপরিকাঠামোগতভাবেও এফডিসিকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। তা সম্ভব না হলে আমাদের চলচ্চিত্রের ‘ইতিহাস’ কেবল কালানুক্রমিকতার দীর্ঘ পথই অতিক্রম করবে- চলচ্চিত্রের ‘ভূগোল’ পড়ে থাকবে কালের আস্তাকুঁড়ে। এফডিসির অভ্যন্তরে অদ্যাবধি উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন কোনো গ্রন্থাগার, স্টুডিও বা ল্যাবরেটরি গড়ে ওঠেনি- শোনা যায় আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যামেরাও নাকি নেই এখানে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে মুদ্রণ, পরিস্ফূটন, সম্পাদনাসহ নানারকমের পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ করতে এদেশের ছবি কলকাতায় ও লাহোরে পাঠাতে হতো। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরে এ দেশের ছবি মুদ্রণ, পরিস্ফূটন, সম্পাদনাসহ নানারকমের পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ করাতে পাঠাতে হয় মাদ্রাজ-মুম্বাইয়ে। এছাড়া শুটিংয়ের সময় যে ধরনের ফিল্মস্টক ব্যবহার করা হয় তার অবস্থাও থাকে জীর্ণশীর্ণ-রুগ্ণ-শোচনীয়। জীবদ্দশায় তারেক মাসুদ বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন স্পিডের ফিল্মস্টক বেছে নেয়ার সুযোগ থাকা তো দূরের কথা, অনেক সময় তারিখ পার হয়ে যাওয়া স্টক ব্যবহার করতে বাধ্য হন স্থানীয় নির্মাতারা। দরকারি লেন্স, ভিডিও অ্যাসিস্টসহ একটি ভালো ক্যামেরাও নেই এ দেশে। […] বস্তাপচা কিছু ফ্লপ ‘বাণিজ্যিক’ ছবি ছাড়া সব ছবিই সম্পাদনাসহ ভারতে পোস্ট প্রোডাকশন হয়। […] নির্মাতাদের মাসের পর মাস মাদ্রাজ, বম্বে, কলকাতায় কাটাতে হয়েছে।’
একটা কথা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তরা ইচ্ছা করেই ভুলে যান, নাকি ভুলে থাকেন তা বোঝা মুশকিল। তা হলো আলোচনার শুরুতে যে যুগ-সন্ধিক্ষণের কথা আমরা বলেছিলাম- বলেছিলাম তথ্যপ্রযুক্তির আবেশে পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের চিন্তা, ভাবনা, আচার, আচরণ, রুচি এবং সেই সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির নির্ণায়ক। স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যাণে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি ছবি দেখে সহজাতভাবেই সাধারণের মনে গল্প, কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য, মেকিং, এডিটিং, সাউন্ড ট্র্যাকিং, বিশেষায়িত দৃশ্য নির্মাণ এমনকি অভিনয় সম্পর্কে তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণের পটভূমিও তৈরি হয়েছে। মানুষ আজ বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নিজ দেশীয় ছবিকেও মূল্যায়ন করতে চায়। বাংলা ছবি থেকেও এ দেশীয় দর্শক ভালো, উন্নত এবং মানসমৃদ্ধ কিছুর প্রত্যাশা করে। সমালোচকের ভাষায়- ‘দর্শকরা এখন উঁচু মানের ছবি চান, ভালো সিনেমাটোগ্রাফি, ভালো সাউন্ড সিস্টেম চান; কারিগরি মান হতে হবে উন্নত, স্পেশাল এফেক্ট, কম্পিউটার গ্রাফিক্সসহ প্রাযুক্তিক সবকিছুকেই বরণ করে নিতে হবে; প্রয়োজনে সিনেমাস্কোপ নেগেটিভ ব্যবহার করতে হবে, ডলবি সাউন্ড সিস্টেম চালু করতে হবে।’
প্রযুক্তির নব নব প্রয়োগ সত্ত্বেও মানুষ শেষ পর্যন্ত দেখতে চায় ছবিগুলোর মধ্যে যেন বাংলাদেশ প্রতিফলিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর সেই মেলোড্রামাটিক কাহিনী ও তার উচ্চকণ্ঠ অভিনয়ে তৎকালীন নাটকের অনুকরণাত্মক প্রবণতা স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও ঘোচানো সম্ভব হলো না দেখে হতাশাবোধ থেকে আমরা কোনোক্রমেই মুক্ত হতে পারিনি।
[অসমাপ্ত, ২য় কিস্তি পরের সপ্তাহে]

আহমেদ আমিনুল ইসলাম : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়