জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর : সময় শেষ হলেও অসম্পূর্ণ ফসলরক্ষা বাঁধ

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের নির্ধারিত সময় গত মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। তবে এখনো শেষ হয়নি নির্ধারিত প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে এখনো মাটিই পড়েনি। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরের কয়েকটি বাঁধের মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধ এলাকায় এখনো কোনো মাটিই পড়েনি। তবে কাজ চলমান রয়েছে। হাওড়ের পোল্ডার-১-এর আওতাধীন ৯ নম্বর প্রকল্পের ১ কিলোমিটার ২৪৬ মিটার দৈর্ঘ্য বাঁধের ৭০০ ফুট এলাকায় এখনো মাটি পড়েনি। ১০ নম্বর প্রকল্পের ভাঙা গর্তে কাজ এখনো চলমান। ১১ নম্বর ও ১৩ নম্বর প্রকল্পের ৩০০ ফুট এলাকায় মাটির কাজ বাকি রয়েছে। এছাড়া ৩ থেকে ৮ নম্বর প্রকল্পে মাটি ফেলা হলেও শেষ হয়নি বাঁধের নির্ধারিত কাজ।
নলুয়া হাওড়ের ভুরাখালি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, বাঁধের কাজের সময়সীমা শেষ হলেও এখনো এক কিলোমিটার এলাকায় মাটির কাজ হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হলে ফসল তোলা নিয়ে শঙ্কায় থাকবে কৃষকরা।
কাজের বিষয়ে ১১ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি রুবেল মিয়া জানান, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। ৯ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি আব্দুস শহিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা সাড়া মেলেনি। ৪ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি রনধীর কান্ত দাস নান্টু জানান, তার প্রকল্পের কাজ শেষ। এখন সেখানে দূর্বা লাগানোর কাজ চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার ৪৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে হাওড়ের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সংস্কার করা হচ্ছে। এসব বাঁধের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দিলাওর হোসেন জানান, নির্ধারিত সময়ে কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া দুঃখজনক। কাজের ধীরগতি ও অবহেলায় ফসল নিয়ে চিন্তিত হাওরের কৃষকরা। আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাওরের একটি বাঁধেরও শতভাগ কাজ শেষ হয়নি। কয়েকটি প্রকল্পে এখনো মাটিই পড়েনি।
তবে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী জানান, কাজে কোনো ধরনের গাফিলতি নেই। নলুয়া হাওরে এখনো যে কয়েকটি স্থানে মাটি পড়েনি সেগুলো প্রকল্পের আওতাভুক্ত নয় বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, তাহিরপুর উপজেলায় ৭০ ভাগ পর্যন্ত কাজ হয়েছে বলে দাবি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব শওকত উজ্জামান। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৭০টির বেশি বাঁধের মাটির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ আগামী সাপ্তাহেই শেষ হবে।
তবে হাওরপাড়ের বাসিন্দা, কৃষক ও সচেতন মহল বলেছেন, সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ কাজ হয়েছে। অনেক বাঁধে এখনো মাটির কাজই শেষ হয়নি। তাই বোরো ফসলের উপর নিভর্রশীল লাখো কৃষকের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) নীতিমালা-২০১৭ অনুসারে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাক্কলন শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলতি বছরে ১১ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ৩০টি ও ২১ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৮৩টি পিআইসি ঘোষণা করে পাউবো। এর ফলে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও তা আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে হাওরের কৃষকরা অকাল বন্যায় অসময়ে হাওড়ের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম হাওর রক্ষা বাঁধ পরির্দশনে এসে বলেছিলেন, আগামী ৭ মার্চের মধ্যে হাওড়ের সব ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করা হবে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন তাহিরপুর উপজেলা শাখার নেতা তোজাম্মিল হক নাসরুম জানান, এবারো গুরুত্বপূর্ণ বাঁধের কাজে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। পাউবো বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। সঠিক সময়ে হাওর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় দেরিতে তড়িগড়ি করে বাঁধের কাজ করতে গিয়ে প্রতিটি বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্বল হয়। ফলে বৃষ্টির পানি ও সামান্য পাহাড়ি ঢলের চাপে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করে। এবারো লাখ লাখ কৃষক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কেও মধ্যে সময় পার করছেন। এবার হাওরের কোনো ক্ষতি হলে এর দায়ভার পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৮০ হাজার টনের বেশি চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। যার মূল্য ২৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, আমি সরজমিন বিভিন্ন হাওরের বাঁধের কাজ পরির্দশনে গিয়ে পিআইসিদের দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছি। বাঁধের কাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী সাপ্তাহে সব বাঁধের কাজ শেষ হবে। যারা সরকারি নীতিমালা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে, ছাতকের হাওরে ধীর গতিতে চলছে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ। এখনো বাঁধ নির্মাণ কাজের অর্ধেকও শেষ হয়নি। এতে করে কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) দাবি, আর্থিক সংকটের কারণে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দের টাকা না পেয়ে ধারদেনা করে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
জেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে জানান, উপমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ৭ মার্চের মধ্যেই ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করা হবে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে গাফিলতি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়