জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

মার্চ ১৯৭১ : পাকিস্তান টুকরো হয়ে গেছে

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অস্ট্রেলিয়ার দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এর সম্পাদকীয় রায় পাকিস্তান টুকরো হয়ে গেছে।
রেডিও পাকিস্তানের ভাষ্য অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীই মূলত পূর্বাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে, শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বন্দি করে রাখা হয়েছে এবং পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। বাস্তবে সেখানে জনযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। স্পষ্টতই পৃথিবী জেনে গেছে পাকিস্তান টুকরো হয়ে গেছে; অলৌকিক কোনো রাজনৈতিক ঘটনা ছাড়া পাকিস্তানকে আর এক করা সম্ভব নয়।
এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা ঘটবে, বিশ্বাস করার কারণ নেই। ইতিহাসের জঘন্য রক্তাক্ত অধ্যায়- ব্রিটিশরা আয়ারল্যান্ডে যা করেছে, ফরাসিরা আলজেরিয়াতে যা করেছে এবং এ ধরনের আরো অনেক ঘটনার ব্যাপারে অন্ধ থেকে ইয়াহিয়া খান সেনাবাহিনীর বল প্রয়োগের মাধ্যমে সংহতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। পাকিস্তানের সংখ্যালঘুর আধিপত্যে গঠিত কৃত্রিম পাকিস্তান সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির ওপর আনুগত্য চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন ইয়াহিয় খান- যেখানে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জনগণ শেখ মুজিবুর এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য তার দাবিকৃত স্বায়ত্তশাসনের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছে।
মৃত-জাত গণপরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করা শেখ মুজিবুর সামরিক শাসন জারির পর পূর্ব পাকিস্তানে কার্যত একটি বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করেছেন এবং সম্ভাব্য কনফেডারেশনের স্বার্থে তিনি বিশেষভাবে নমনীয় থেকেছেন। কেবলমাত্র প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। আলোচনা ভেঙে যাওয়ার দায় প্রেসিডেন্টেরই, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি সংখ্যালঘু স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের রায়কে অস্বীকার করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ক্ষমতা আছে- ট্যাঙ্ক, গোলন্দাজ বাহিনী ও যুদ্ধবিমান দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের শহরগুলোয় সাময়িক বিজয় তিনি হয়তো দেখাতে পারবেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সেনাঘাঁটি থেকে হাজার মাইল দূরে তার সেনাদল দিয়ে তিনি কেমন করে আশা করেন যে গেরিলা যোদ্ধাদের পরাস্ত করবেন- যে যুদ্ধ তেতে উঠবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তিতে, যে যুদ্ধ চলতে থাকবে অনির্দিষ্টকাল ধরে পূর্ব পাকিস্তানের দুর্গম গ্রাম্য প্রান্তরে। (দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-২৯ মার্চ ১৯৭১, বিদেশির চোখে ১৯৭১)

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সম্পাদকীয় শিরোনাম পাকিস্তান ট্র্যাজেডি
সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পাকিস্তানের অধিকতর জনবহুল পূর্বাংশ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পথে এগোচ্ছিল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ-ভারত ব্যবচ্ছেদের পর থেকে মুসলমান-অধ্যুষিত পাকিস্তানের পশ্চিমাংশ পূর্বাংশের ওপর আধিপত্য বিস্তার ও শোষণ করে আসছে। তাই পূর্বাংশের হুমকি শাসকরা ঠিকভাবে অনুধাবন করেছেন এবং ক্ষমতা অর্পণ না করে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছেন। পূর্বাংশকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে অখণ্ড পাকিস্তান ফেডারেশনের আওতায় ধরে রাখার জন্য কোনো সাংবিধানিক ফর্মুলা উদ্ভাবন করা যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। আলোচনা সফল হচ্ছে, নাকি ভেস্তে যাচ্ছে, এর কোনটা পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনরা অনুধাবন করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে কোনো ধরনের আভাস না দিয়ে কিংবা সশস্ত্র উসকানি ছাড়াই গত শুক্রবার রাতে মেশিনগান, রিকয়েললেস রাইফেল দিয়ে গুলি চালানো হয়েছে, ট্যাঙ্ক থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে মূলত নিরস্ত্র অথবা স্বল্প প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী পূর্ব পাকিস্তানি জনগণের ওপর। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে- এ সংখ্যাটি কেবল অনুমানই করা সম্ভব। কারণ পাকিস্তান সরকার সংবাদের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করেছে এবং সব বিদেশি সংবাদদাতার নেয়া নোট ও ছবির ফিল্ম বাজেয়াপ্ত করে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে।
পশ্চিম পাকিস্তান সরকার পূর্বাংশে ঢাকার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে দাবি জানিয়েছে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অর্থবহ রাজনৈতিক আনুগত্য লাভের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি অলীক কল্পনামাত্র। কিছুকাল আগেও ঢাকায় মধ্যপন্থিদের ধারণা ছিল, পাকিস্তান ফেডারেশনের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে চলবে। মধ্যপন্থিরা নীরব হয়ে গেছে, কারণ দেশজুড়ে রাজনৈতিক অনুভূতির জোয়ার এখন পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে- স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশ মানে বাঙালিদের দেশ। সহস্র মাইল ভারতীয় ভূখণ্ডের দ্বারা আগে থেকেই বিচ্ছিন্ন বাংলা। সেই সঙ্গে ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতা এবং সবশেষে এই রক্তপাত পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সঙ্গে বাংলার দূরত্ব আরো বাড়িয়েই দিয়েছে। এ সময় বাঙালিদের প্রতিরোধের ধরন কেমন হবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না, ঘটনাই বলে দেবে পরিণতি কী। যুক্তরাষ্ট্র সাম্যবাদবিরোধী শক্তি হিসেবে পাকিস্তানকে এত বছর ধরে যেভাবে অস্ত্রে সজ্জিত করছে এবং উন্নয়নের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, তা যে কতটা অপ্রাসঙ্গিক, বহিরাগত ব্যক্তিরা যে চোখ দিয়ে পাকিস্তানকে দেখছে, তাতে এটা স্পষ্টই ধরা পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রগ্রহীতা সরকার নিজ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধেই সেই অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়, কিন্তু আসল ট্র্যাজেডি তো পাকিস্তানেরই। (৩০ মার্চ ১৯৭১)

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস মার্চের শেষদিন ছেপেছে ‘স্রষ্টা ও অখণ্ড পাকিস্তানের নামে’
‘স্রষ্টা ও অখণ্ড পাকিস্তানের নামে’ পশ্চিম পাকিস্তানি প্রাধান্যের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্মম সেনা আক্রমণ চালিয়ে স্রষ্টা ও পাকিস্তান উভয়কেই অসম্মানিত করেছে। বাঙালিরা পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে নিজেদের জন্মভূমির জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছিল।
সেনা আক্রমণের সময় যেসব সংবাদদাতা ও কূটনীতিক পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী শহর ঢাকায় অবস্থান করছিলেন, তারা যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে নিরস্ত্র জনতার ওপর নোংরা সামরিক আক্রমণে যে ‘ঐক্য’ সৃষ্টি হবে, তার যে আদল, তা অর্থহীন হবে, এর কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকবে না। পূর্ব পাকিস্তানের ‘মুসলমান ভাই’দের ওপর পশ্চিমা বাহিনীর যে বর্বরতা প্রত্যক্ষ করা গেছে, তা বাঙালিদের পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার এবং দুই অংশের মধ্যে যে সমঝোতা সম্ভব নয়, সেই যুক্তিকেই প্রতিষ্ঠিত করে।
যদিও বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, পাকিস্তানের এই সংগ্রামের ভয়াবহ এক আন্তর্জাতিক পরিণতি ঘটতে পারে। বিশেষ করে যদি একটি মেয়াদি গেরিলা যুদ্ধ চলতে থাকে। এ অবস্থায় বিশ্বসম্প্রদায় সবচেয়ে কম হলেও যেটুকু করতে পারে তা হচ্ছে, মানবতা ও কাণ্ডজ্ঞানের দোহাই দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে রক্তপাত বন্ধ করতে বলা এবং জনগণের নির্বাচিত নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে যথাযোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সজ্জিত করতে ও প্রশিক্ষণ দিতে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে, যুক্তরাষ্ট্রের এখন বিশেষ দায়িত্ব হচ্ছে ইয়াহিয়া সরকারকে যে কোনো ধরনের সামরিক সহায়তা প্রদান স্থগিত রাখা। কেবল এই শর্তে অর্থনৈতিক সাহায্য অব্যাহত রাখা যেতে পারে যে পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট ক্ষতের উপশম করতে প্রদত্ত সহায়তার সিংহভাগ ব্যয় করতে হবে।

এপ্রিলে দ্য বাল্টিমোর সান-এর সম্পাদকীয় শিরোনাম পাকিস্তানের গল্প
যখন পাকিস্তানের দুটো অংশ নির্মমভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেই মার্চ মাসের পাকিস্তান ট্র্যাজেডির ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। ছয়জন বিদেশি সংবাদদাতাকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সরকারনিয়ন্ত্রিত সফরে তারা যতটুকুই দেখতে পেরেছেন, তার তথ্যবহুল বিবরণী থেকেই বেরিয়ে আসছে সে ট্র্যাজেডির চিত্র। তাদের একজন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) মোর্ট রোজেনব্লুম পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ব্যাংককে এসে তার প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। তার লেখায় যা উঠে এসেছে তা কসাইয়ের নির্মমতা, ঘৃণা আর ভয়ংকরের গল্প। একটি জাতীয় অর্থনীতির ধ্বংসের প্রান্তসীমায় চলে আসার গল্প, রাজনৈতিক হট্টগোলের গল্প।
রোজেনব্লুমের অনুমান, সেখানে পাঁচ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ধ্বংসযজ্ঞের যে দৃশ্য তা অবিশ্বাস্য। লাখ লাখ মানুষ অভুক্ত। অন্যান্যের প্রতিবেদনে এটাও স্পষ্ট, পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পূর্ববাংলায় হত্যা করা হয়েছে অজানাসংখ্যক অবাঙালিকে। তাদের লেখায় এটাও স্পষ্ট হয়েছে, এই রাষ্ট্রের বর্বরোচিত বিভাজনের দায় সবার আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের আদেশদাতাদের ওপর বর্তায়।
পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকায় মাত্র ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে- আগে বলা এই তথ্য সর্বৈব মিথ্যা। আর সম্ভাব্য সশস্ত্র অভ্যুত্থান রোধ করতে সেনাবাহিনী গভীর রাতে হানা দিতে বাধ্য হয়েছে, এ দাবিও মিথ্যা। কারণ এই বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্য এখনো মেলেনি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, পাকিস্তান সরকার জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী পূর্ববাংলার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাসীন হতে না দেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সেই প্রতিজ্ঞা থেকেই মার্চ মাসে পরিকল্পিত এই আক্রমণ চালানো হয়।
যদিও এ ঘটনার পরিণতি কী হবে, এখনই জানা যাবে না। তবে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, পাকিস্তানের স্রষ্টারা যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, এর সমাপ্তি ঘটেছে। ইতোমধ্যে ভগ্নদশার অর্থনীতি যেখানে এসে ঠেকেছে, সেখান থেকে উত্তরণের আর কোনো সুযোগ নেই।

সিঙ্গাপুরের দ্য নিউ নেশন সম্পাদকীয়তে লিখেছে : নৃশংস হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হতে হবে
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে যা ধারণা করা হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তান থেকে অপসারিত চাক্ষুষ সাক্ষী বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া বিবরণ তার চেয়েও ভয়াবহ।
পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে তা গণহত্যারই কাছাকাছি। যত নিন্দনীয় হোক না কেন সেনাবাহিনীর হাতে বিদ্রোহ দমন কোনো পিকনিক নয়, এতে কিছুসংখ্যক অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু ঘটতেও পারে। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী যা করেছে তা শক্তির বৈধ প্রয়োজনের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তারা খেলাচ্ছলে নারী ও শিশুসহ নিরস্ত্র জনগণকে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে, নগ্ন সন্ত্রাস চালিয়ে আনুগত্য অর্জনের পরিকল্পিত আক্রমণে মেতে উঠেছে।
পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রতিরোধ প্রতিদিনই জোরালো হয়ে উঠছে। আর সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব বড় শহরের সীমানা অতিক্রম করতে পারছে না।
পূর্ব পাকিস্তানের দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা বিবেচনায় আনলে কার্যত দেশের আপামর জনগণের এই অভ্যুত্থানের মোকাবিলা করতে হলে এখনকার আনুমানিক ৭০ হাজার সৈন্যের বহর বহুগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। এখন থেকে ছয় সপ্তাহ পর যখন বর্ষা মৌসুম শুরু হবে, তখন সেনাবাহিনীর গতিশীলতা ও যোগাযোগ মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে।
এমনকি এখন পাকিস্তানি সরকারি প্রতিবেদনগুলোও লুকোতে পারছে না যে ঘোষিত স্বাভাবিক অবস্থা পুনরুদ্ধার সুদূরপরাহত। কলকারখানা বন্ধ হয়ে আছে আর সরকারি দপ্তরগুলোতে চলছে গণগরহাজিরা। সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়ার আদেশ যদি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের জন্য একটি বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত হয়ে তাকে, তাহলে এই নির্মম মাত্রার কাণ্ডজ্ঞানহীন হত্যাযজ্ঞ কেবল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিশ্ববিবেক তা চালিয়ে যেতে দিতে পারে না।
পূর্ব পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ভারত, রাশিয়া ও ব্রিটেন রাওয়ালপিন্ডির কাছে হত্যাযজ্ঞের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে। এই উদ্যোগে অন্য সব দেশকেও এগিয়ে আসতে হবে- বলতে হবে অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের পণ্ডিতি ব্যাখ্যা শুনিয়ে বিশ্বমানবতার কণ্ঠ রোধ করে রাখা যাবে না। (৬ এপ্রিল ১৯৭১, বিদেশির চোখে ১৯৭১ থেকে উদ্ধৃত)

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়