জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

বেতার ও টিভি থেকে বাদ পড়ল ‘পাকিস্তান’

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : একাত্তরের ৪ মার্চ ছিল বৃহস্পতিবার। ওইদিন জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকাসহ সারা বাংলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। বেসামরিক শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। লাগাতার হরতালের তৃতীয় দিনে ৪ মার্চ রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং পাকিস্তান টেলিভিশন ‘ঢাকা টেলিভিশন’ হিসেবে স¤প্রচার শুরু করে। বেতার-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র শিল্পীরা এক বিবৃবিতে ঘোষণা করেন, যতদিন পর্যন্ত দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত ‘বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেবেন না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানায় সারাদেশের মানুষ। অফিস-আদালতসহ সরকারি এবং বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান এদিন বন্ধ থাকে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বিমান-রেল-বাস-স্টিমার চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখা হয়।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও ১৯৭১ সালে প্রকাশিত সংবাদপত্র অনুযায়ী, এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, চরম ত্যাগ স্বীকার ছাড়া কোনোদিন কোনো জাতির মুক্তি আসেনি। তিনি উপনিবেশবাদী শোষণ ও শাসন অব্যাহত রাখার
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর

আহ্বানে সাড়া দেয়ায় বীর জাতিকে অভিনন্দন জানান। এই দিনে মওলানা ভাসানী লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাঙালিদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দাবি জানান। করাচি প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্টের প্রতি অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহ্বান করার দাবি জানান। পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড. এ ভুট্টো করাচিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের সংহতির জন্য তার দল যদ্দুর সম্ভব ৬ দফার কাছাকাছি হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের বিস্ফোরন্মুখ পরিস্থিতির অবসানের জন্য তিনি এখন জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে রাজি হবেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো বলেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত ঘটছে। এ সম্পর্কে অবহিত করার জন্য আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক পৃথক পৃথক বিবৃতিতে ঢাকার ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার গণবিরোধী ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মৃত্যুর মিছিলে ১২১ : ওইদিন ঢাকায় কারফিউ তুলে দেয়া হলেও খুলনা, রংপুরে কারফিউ বহাল থাকে। খুলনায় সামরিক বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান ৬ জন। আর চট্টগ্রামে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২১ জনে। ফরিদপুরে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। যশোরে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল করে। এতে গুলি চালানো হলে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জনতা। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের পর স্বাধিকার আন্দোলনে গুলিতে আহত মুমূর্ষু বীর সংগ্রামীদের প্রাণরক্ষার্থে শত শত নারী-পুরুষ ও ছাত্রছাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়