জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

বিশ্ব স্থূলতা দিবস আজ : জীবনীশক্তি কেড়ে নিচ্ছে নীরব ঘাতক ‘স্থূলতা’

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া বিশ্বের অনেক দেশেই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর শীর্ষ ৩ কারণের একটি হলো স্থূলতা। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু অতিরিক্ত ওজনজনিত কারণে প্রতিবছর ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে স্থুলতা মহামারির মতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিম্ন আয়ের দেশে এই সমস্যা প্রকট। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। স্থুলতার সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সচেনতা বাড়াতে ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ৪ এপ্রিল বিশ্ব স্থুলতা দিবস পালিত হচ্ছে। দিনটি পালন উপলক্ষ্যে আজ শনিবার বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশনের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগবে। স্বাস্থ্যগত এই জটিলতায় ৪০০ কোটির বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিশুদের মধ্যে স্থূলতার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে স্থূলতা সমস্যায় বার্ষিক খরচ দাঁড়াবে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি।
এ প্রতিবেদন শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্থূলতার ক্রমবর্ধমান হারের কারণ হিসেবে রয়েছে- প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অতিরিক্ত প্রবণতা, বেশির ভাগ সময় বসে কাজ করার অভ্যাস, খাদ্য সরবরাহ ও বিপণন নিয়ন্ত্রণের দুর্বল নীতি এবং ওজন ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাজনিত পরিষেবায় কম সহায়তা। স্থূলতার হার বাড়ায় অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে, যা বৈশ্বিক জিডিপি ৩ শতাংশের সমান। আফ্রিকা ও এশিয়ার নিম্ন বা মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে।
২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে স্থুলতাকে টাইম বোমার সঙ্গে তুলনা করেছে বিশ্বব্যাংক। ‘স্থূলতা-স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে এর ফলাফল এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ৪৪ শতাংশ মুটিয়ে যাওয়া সমস্যায় ভুগছে। সব মিলিয়ে বিশ্বে স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা ২০০ কোটিরও বেশি, যার ৭০ ভাগের বসবাস নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থুলতা একজন মানুষকে আজীবনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। স্থুলতার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখের সমস্যা, বাত ও হেপাটাইসিসসহ নানা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে স্থূলকায়দের আয়ুষ্কালও কমে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে তা আরো বেশি ভয়াবহ। স্থুলতার কারণে শিশুরা শৈশবের

চঞ্চলতা হারানোর পাশাপাশি শিশু বয়সেই নানান অসুখে ভুগছে। ইতোমধ্যেই বিষয়টিকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন তারা।
২০১৩ সালে প্রথম বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ‘স্থূলতার প্রকোপ এবং খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক সক্রিয়তার ধরন’ শীর্ষক এক জরিপ করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। সেখানে দেখা যায়, দেশের শহরাঞ্চলের ১৪ শতাংশ শিশু স্থূলতায় ভুগছে। আর ঢাকায় এর সংখ্যা ২১ শতাংশ। এই হার এখন আরো বেড়েছে।
পুষ্টিবিদ তামান্না শারমীন ভোরের কাগজকে বলেন, মানব শরীরে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হলে তখনই অতিপুষ্টি বলা হয়। নির্দিষ্ট কোনো খাবার বারবার খাওয়ার কারণে এমন হতে পারে। এরফলে ওজন আধিক্য দেখা দেয়। বড় বড় শপিং মলে, ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁয়, স্কুলগুলোর সামনে এমনকি রাস্তায় নামলেই ইদানিং এ রকম অতিরিক্ত ওজনের শিশু চোখে পড়ে। যা নতুন এক স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি খুবই আতঙ্কের বিষয়। এর কারণে শিশুরা যেমন শৈশবের চঞ্চলতা হারাচ্ছে তাদের ভবিষ্যত জীবন দাঁড়াচ্ছে মারাত্মক হুমকির মুখে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ওবায়দুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা এখন খুব বেশি ফাস্টফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। নিম্নমানের চিপস, বি¯ু‹ুটের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রামাঞ্চলেও পাওয়া যাচ্ছে। টেস্টিং সল্ট, নিম্নমানের ক্রিম ও মাখনসহ যে ধরনের প্রিজারভেটিভ এসব খাবারে দেয়া হয় সেগুলো ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
এই সমস্যা সমাধানে করণীয় প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কায়িক পরিশ্রম করা, বিশেষ করে হাঁটা, শিশুদের টেলিভিশন দেখা ও মোবাইল ফোনে গেমস খেলার আসক্তি কমাতে হবে। খাবার দাবারে সচেতন হতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়