জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

পাইকারিতে চিনির দাম কমলেও প্রভাব নেই খুচরায়

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বাড়তি দামের কারণে চিনির বাজার অস্থির। আসন্ন রমজান উপলক্ষে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার টন চিনি। এর প্রভাবে খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে দাম কমলেও তা সাধারণ ক্রেতা পর্যায়ে কোনো প্রভাব ফেলেনি। খুচরা বাজারে চিনির দাম আগের মতোই।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে লাগাম টানতে চাহিদার বিপরীতে গত বছরের শেষ ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৩৩ হাজার টন চিনি। এরপর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে এসেছে ৪ লাখ ১৯ হাজার টন চিনি। প্রতি বছর শুধু রমজান মাসেই সাড়ে ৩ লাখ টন চিনির চাহিদা তৈরি হয়। এর বিপরীতে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১১ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। রোজার আগে পর্যায়ক্রমে আরো প্রায় ৪ লাখ টন চিনি আসবে। চিনির সরবরাহ বাড়ায় প্রতি মণে ৪০ টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মাসে খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার টাকার উপরে। বর্তমানে পাইকারিতে এস আলমের চিনি মণপ্রতি ৩ হাজার ৯২৫ ও সিটি গ্রুপের চিনি ৩ হাজার ৯৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা ও খোলা চিনি ১০৭ টাকায় বিক্রির নির্দেশনা দেয়। তার উপর বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনিও আমদানি হয়েছে। অথচ পাইকারিতে চিনির দাম কমলেও খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে। নগরের বিভিন্ন এলাকার খুচরা দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্যাকেটজাত চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ও খোলা চিনি ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী ইসমাইল ট্রেডার্সের মালিক মো. রাজ্জাক বলেন, ডলার সংকট ও এলসি জটিলতার কারণে চিনি আমদানি ব্যাহত হয়েছিল। তার উপর ডলার না পেয়ে বিদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো জাহাজ থেকে চিনি খালাসের অনুমতি দেয়নি। চিনি ভর্তি বেশ কয়েকটি জাহাজ প্রায় দুমাস ধরে সাগরে ভেসেছিল। তাই চাহিদার তুলনায় চিনির সরবরাহ কম ছিল। এখন আমদানি বেড়েছে। রমজান উপলক্ষে পর্যাপ্ত চিনি আমদানি হয়েছে। যা সরবরাহ আছে তা দিয়ে নিমিষেই চাহিদা মেটানো যাবে। পাশাপাশি সরবরাহ বাড়ায় চিনির দামও কমতে শুরু করেছে।
নগরের চকবাজার এলাকার মক্কা স্টোরের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাইকারিতে চিনির দাম কিছুটা কমতির দিকে। কিন্তু চিনির বস্তা কিনে আনতে আমাদের পরিবহন খরচ, শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়। আমরা যদি নির্ধারিত দরে চিনি বিক্রি করি তাহলে তো ব্যবসা করে আর লাভ নেই।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে ৭ লাখ ৩৩ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৪ লাখ ১৯ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ জানুয়ারিতে ১ লাখ ৭৮ হাজার টন এবং ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচটি জাহাজে করে এসেছে ২ লাখ ৪১ হাজার টন চিনি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১১ লাখ ৫২ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছে।
নগরীর জামালখান এলাকার বাসিন্দা মঈনুল ইসলাম খান বলেন, রমজান মাসের চাহিদাকে পুঁজি করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে চিনি বিক্রি করেই যাচ্ছেন। প্যাকেট চিনির গায়ে ১০৮ টাকা লেখা, অথচ খুচরা বিক্রেতারা ১২০ টাকায় বিক্রি করছে। আমদানিকারক ও পাইকারদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া দরকার। এর জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করছেন তারা। আর প্রশাসনকে শুধু হাটবাজারে নয়, অলিগলির খুচরা দোকানগুলোতেও অভিযান চালাতে হবে। পণ্যের মূল্য তালিকা লাগানো নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান বলেন, রমজানকে সামনে রেখে আমরা ইতোমধ্যে বাজার তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করেছি। ভোক্তাদের অভিযোগ আমরা পাচ্ছি। সে অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কেউ বাড়তি দরে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করছে এমন অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চিনির দাম তো বহুবার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেটা ওই কাগজে-কলমে থেকে গেছে। একবারও বাস্তবায়িত হয়নি। পাইকারি-খুচরা সকল ব্যবসায়ী নানা অজুহাতে বাড়তি দরে চিনি বিক্রি করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন।

রমজান মাস আসছে। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফালোভী মনোভাব দূর করতে হবে। ক্রেতাদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে নজরদারি বাড়াতে হবে। কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়