জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ১ : আহমদিয়া বাড়ি-দোকানে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের আগুন

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** এলাকা থমথমে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে : বিজিবি মোতায়েন **
পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকালে পুলিশের সঙ্গে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর শুরু হওয়া এ সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে আহমদিয়াদের বেশ কিছু বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত যুবকের নাম আরিফ (২৭)। তিনি পঞ্চগড় পৌর এলাকার মসজিদ পাড়ার ফরমান আলীর ছেলে। পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাজেদুর রহমান চৌধুরী জানান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আরিফ মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রংপুরে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল থেকে রবিবার পর্যন্ত ৩ দিন শহরের উপকণ্ঠ আহম্মদনগরে জলসার আয়োজন করেছিল আহমদিয়া স¤প্রদায়। তার আগেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জলসা বন্ধের দাবিতে গতকাল জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ থেকে মানুষজন শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। পরে তারা মিছিল বের করেন। শের-ই বাংলা পার্কসংলগ্ন মহাসড়কে মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, জুমার নামাজ শেষে শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে লোকজন ছোট ছোট মিছিল নিয়ে চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হয়। পরে সেখান থেকে সম্মিলিত মিছিল বের করে। এই মিছিলকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ মিছিলের আশপাশে ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে মিছিল থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে ৩ পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়। মিছিলকারীরা শহরের ধাক্কামারা এলাকায় গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করলে সেটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশ ও বিজিবির গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষ চলাকালে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া স¤প্রদায়ের লোকজনের ১০টি বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। পঞ্চগড় শহরের একটি বাজারের ৪টি দোকানের মালপত্র বের করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল কমে যায়। বিভিন্ন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে শহরের মূল প্রবেশপথ করতোয়া সেতুর মাঝখানে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা বাঁশ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচলও

বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পথচারীদের চলাচল শুরু হয়। চৌরঙ্গী মোড়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। এ সময় শহরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিকে টহল দিতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, আহমদিয়া স¤প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মোয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা মাশায়েক আইম্মা পরিষদের শত শত লোক পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। প্রায় ৫ ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। বিকাল ৩টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমঝোতার আশ্বাস দেন। পরে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়