কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার জাফরাবাদ এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- জাকির হোসেন ওরফে জ্যাক (৪৪) ও নূর জামাল ওরফে জামাল (২৬)। গতকাল শুক্রবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা রাজধানীর দুর্ধর্ষ গ্রিল কাটা চোর চক্রের সদস্য। তারা এতটাই দক্ষ যে ৪ সেকেন্ডের মধ্যে তালা কেটে ৪ মিনিটের মধ্যেই দোকান সাবাড় করে চলে যেতে সক্ষম। চুরিকৃত মালামাল বিক্রির সুবিধার্র্থে একটি পিকআপ ভ্যানও কেনে তারা। আর সেই পিকআপে ঘুরে ঘুরেই তারা চুরি করে আসছিল। গত সাত বছরে রাজধানীজুড়ে দেড় শতাধিক চুরি করেছে জ্যাক-জামাল জুটি। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে চুরির সরঞ্জামসহ একটি পিকআপ জব্দ করেছে পুলিশ। মিরপুর মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, গত ৬ মাস আগে আসাদুজ্জামান নূরের নিউ মিউজিক এশিয়া নামের এক দোকানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা তদন্তে উঠে আসে জ্যাক-জামালের নাম। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর বড়বাগ পলিভিটা বেকারি এলাকায় সংঘটিত সেই চুরিতে বিভিন্ন ব্র?্যান্ডের ২৩টি মোবাইল সেট, একটি ল্যাপটপ, ২০টি মেমোরি কার্ড, ৫০০টি রিচার্জ কার্ড, নগদ অর্থসহ আনুমানিক এক লাখ ৫২ হাজার ৭৭৫ টাকার মালামাল চুরি করে তারা। দুর্ধর্ষ সেই চুরির দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জ্যাক-জামালকে শনাক্ত করাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোহেল (৩৫) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোহেল জ্যাক-জামালের কাছ থেকে চুরি করা মালামাল কেনে। ওসি বলেন, জ্যাক-জামাল ৭ বছরে দেড় শতাধিক চুরি করে। এই চুরির টাকায় পিকআপ কিনে জ্যাক। আর তাতে চড়েই চুরি করে বেড়ায় তারা। আগে কয়েক রাতে একটি চুরি করলেও গাড়ি কেনার পর এক রাতে চারটি পর্যন্ত চুরি করে তারা! চুরির জন্য শুধু গাড়িই কিনেই ক্ষান্ত হয়নি তারা, আলাদা বাসাও ভাড়া করেছে! সব মালামাল একসঙ্গে বিক্রি করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে, তাই ওই বাসাকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে সেখানেই চুরির মালামাল রাখত তারা।
তিনি আরো বলেন, জ্যাক-জামাল চুরি করতে বের হয় রাত ২টায়, আর বাসায় ফেরে সকাল ৬টায়। এই চার ঘণ্টার মধ্যেই তারা সব চুরি করে। দুইজনের মধ্যে জ্যাক গ্রিল ও তালা কাটে। গ্রিল কিংবা তালা কাটতে তার সময় লাগে সর্বোচ্চ চার সেকেন্ড। তালা কাটার পর দোকানে ঢুকে মালামাল চুরি করে জামাল। তার পুরো চুরি করতে সময় লাগে মাত্র চার মিনিট! প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এক রাতে তারা সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত চুরি করেছে।
ওসি মহসীন বলেন, জ্যাক-জামালের মূল টার্গেট ছোট ছোট দোকান। সাধারণত রাস্তার ওপর থাকা ছোট ছোট পান-সিগারেটের, মোবাইল রিচার্জের, মুদির দোকানই টার্গেট করে তারা। কারণ এসব দোকানদার সাধারণত অপেক্ষাকৃত নি¤œ আয়ের হয়। তাই চুরি করলেও তারা মামলা করে না। এ কারণেই দেড় শতাধিক চুরি করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা খুবই কম। জ্যাকের বিরুদ্ধে ৪টি ও জামালের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা রয়েছে।