জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

জামালপুরে হাসপাতালে কন্যা শিশু ফেলে উধাও মা-বাবা

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর থেকে : জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ২৮ দিন বয়সি কন্যা শিশুকে ফেলে উধাও হয়ে গেছে জন্মাদাতা মা-বাবা। গর্ভধারিণী মায়ের এমন নিষ্ঠুর আচরণে হতবাক স্থানীয়রা। ঘটনাটি গভীরভাবে ক্ষত করেছে অন্য মায়েদের মনকে।
হাসাপাতালে রোগী ভর্তির জন্য পূরণ করা ফরম থেকে জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ৭নং ওয়ার্ডে শিশু নিশিকে ভর্তি করায় রকিব-রোকসানা দম্পতি। তখন তার বয়স ছিল ২৬ দিন। ওজন কম ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল নিশির। ভর্তির ফরমে ঠিকানা হিসেবে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার কইরা গ্রাম ও একটি মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু ১ মার্চ বিকালে ২৮ দিন বয়সি শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে চলে যায় তার মা ও স্বজনরা। পরে হাসপাতালের কর্মকর্তারা শিশুটির দেখভাল করলেও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না তার মা-বাবার।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের শেখ রাসেল বিশেষায়িত নবজাতক সেবা কেন্দ্রের আয়া কোহিনুর বেগম বলেন, ১ মার্চ বিকালে কন্যা শিশুটির নানি হাসাপাতালের করিডোরে থাকা এক মহিলার কাছে কিছুক্ষণের জন্য বাচ্চাটি দিয়ে চলে যান। এরপর তারা আর ফিরে আসেননি। ফরমে থাকা মোবাইল নাম্বারে আমরা অনেক বার ফোন দিয়েছি। কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না। এরপর থেকে শিশুটি নবজাতক সেবাকেন্দ্রে রয়েছে। অন্য মায়ের বুকের দুধ পান করছে নিশি।
নিজের সন্তানকে ফেলে চলে যাওয়া গর্ভধারিণী মায়ের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা। আলোচনা-সমালোচনা চলছে পুরো জেলাজুড়ে।
হাসপাতালে থাকা আলেয়া বেগম নামে একজন মা বলেন-“আমিও তো একজন মা। আমারও সন্তান রয়েছে। আমি আমার সন্তানকে ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারি না। এই মহিলা কিভাবে তার সন্তানকে ফেলে চলে গেল। বিষয়টি খুবই হৃদয় বিদারক।”
মমতাজ বেগম নামে আরেকজন বলেন-একজন নারী চাইলেই মা হতে পারেন না। ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করার পর একজন নারী বাচ্চা জন্ম দেয়। সেই বাচ্চাকে কিভাবে ফেলে যায় তারা।
সরকারকে শিশুটির দায়িত্ব নেয়ার পাশাপাশি নিশির মা বাবার শাস্তির দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। সুপ্তি আক্তার নামে একজন বলেন-মা-বাবা ফেলে গেছে। সরকার তো আর ফেলে দিতে পারে না। এখন সরকারের উচিত এই শিশুটির দায়িত্ব নেয়া এবং মা-বাবাকে শাস্তির আওতায় আনা।
এদিকে চিকিৎসায় শারীরিক উন্নতির পর অভিভাবক না থাকায় শিশুটিকে ছাড়পত্র দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
শেখ রাসেল বিশেষায়িত নবজাতক সেবা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. জান্নাত আরা মিলি বলেন, ভর্তির সময় নিশির ওজন ছিল মাত্র ২১০০ গ্রাম। এছাড়াও শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল তার। টানা চিকিৎসার পর এখন শিশুটি অনেকটাই সুস্থ। এখন তাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। কিন্তু অভিভাবক না থাকায় ছাড়পত্র দেয়া যাচ্ছে না।
এরপর শিশুটিকে কোথায় রাখা হবে বা শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেবে? এই বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫৩ মিনিটে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমানকে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর শুক্রবার দুপুর ২টা ৩২ মিনিটে আবারো ফোন দেয়া হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম জানান- আগামী রবিবার শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে শিশুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জামালপুর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে একটি কন্যা শিশুকে ফেলে চলে গেছে তার মা-বাবা। আমরা বিষয়টি জানার পর ভর্তি হওয়া ফরমে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে খোঁজ নেয়া হচ্ছে এবং যে মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়