জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

এলপিজির দাম কমানোর প্রভাব নেই বাজারে : সরকারের মনিটরিং দৃশ্যমান নয়

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমানোর প্রভাব নেই বাজারে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্ধারিত দামে ক্রেতারা দেশের কোথাও গ্যাস সিলিন্ডার পাচ্ছেন না। ১২ কেজির সিলিন্ডার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দিয়েই কিনতে হচ্ছে। কোনো এলাকায় সিলিন্ডারের সরবরাহ কম থাকলে দাম আরো বেড়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার মার্চ মাসের জন্য বিইআরসি এলপিজির নতুন দাম নির্ধারণ করে ১ হাজার ৪২২ টাকা। মোহাম্মপুরের বাসিন্দা ফিরোজ আলম বলেন, স্থানীয় একটি দোকানে সিলিন্ডার নিতে গিয়ে বিইআরসি নির্ধারিত দামে গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানদার দেড়শ’ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫৭২ টাকা দাম চাচ্ছে। অগত্যা বেশি দাম দিয়েই আমাকে ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। কখনোই সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যায় না।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় কোনো সিলিন্ডারের দোকানে ন্যায্য দামে এপিজির সিলিন্ডার পাওয়া যায় না। সব দোকানেই ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি নেয়। এভাবেই ক্রেতাদের পকেট কাটা যাচ্ছে। অথচ সরকারের সংস্থা সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এলপিজির বাজারে সরকারের কোনো মনিটরিং নেই।
মগবাজার এলাকার এলপিজি গ্যাসের পরিবেশক আমিনুল বলেন, বসুন্ধরা, ওমেরাসহ বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করি। প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য আগে ‘ডিও’ কাটতে হয়। তারপরই সিলিন্ডার আসে। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেয়া দামে সিলিন্ডার বিক্রি করে লাভ থাকে না। সিলিন্ডার প্রতি ১ থেকে দেড়শ’ টাকা ঘাটতি থাকে। তাই লোকসান এড়াতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রাজধানী নয়, দেশের কোথাও বিইআরসির নির্ধারিত দামে এলপিজির সিলিন্ডার পাওয়া যায় না। দাম কমলেও রাজধানীর কাছের সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ এলাকাতেও কখনো দাম কমানোর প্রভাব পড়ে না, তবে বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দামের প্রভাব পড়ে।
বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের বাজারেও এলপিজি সিলিন্ডারের বাড়তি দাম। হালিশহর, ষোলশহর, চাঁদগাঁও, কাট্টলীবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে ক্রেতাদের গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহীতে নতুন দামে ভোক্তারা এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে পারছেন না। পরিবেশকেরা বলছেন, বেশি দামে সিলিন্ডার কেনার ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। ৭৬ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৪২২ টাকায় রাজশাহীর কোথাও সিলিন্ডার বিক্রি হয় না। নগরীর শাহেববাজার, গৌরহাঙ্গাসহ সব এলাকার এলপিজির দোকানে ১৫০ টাকা বেশি দামে সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে খুলনায়। সেখানেও ৭৬ টাকা কমে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে না। মিস্ত্রিপাড়া বাজার, বি কে মেইন রোড, দৌলতপুর, খালিশপুর এলাকায় গতকালও পুরোনো দামেই সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হয়েছে। কোম্পানিভেদে সিলিন্ডারের দামের পার্থক্য আছে। কিন্তু ১২ কেজির সিলিন্ডার শুক্রবারও আগের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বরিশাল নগরীতেও এলপিজির গ্যাস সিলিন্ডারের দামের পার্থক্য রয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রতি মাসে ৯০ হাজারের বেশি ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার হয়। দিন দিন এলপিজির ব্যবহার বেড়েই চলছে। এখন গ্রাম পর্যায়ে ঘরে ঘরে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। এলপিজি কোম্পানীগুলো পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কত টাকা কমিশন দেবে তা নির্ধারিত আছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো অনেক সময় সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে পরিবেশকদের কাছে থেকে বেশি দাম নেয়। বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারনের আগে উৎপাদন কোম্পানির খরচ ও খুচরা মূল্য কত হবে তা হিসেব করে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নেয়া হলে তা বিইআরসির আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসাবে গন্য বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই অপরাধ করেই যাচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, এলপিজি বিক্রিতে পরিবেশকরা আইন অমান্য করছে। সরকার নির্ধারিত দামে দেশের কোথাও এলপিজি বিক্রি হয় না, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আমরা ব্যবস্থাও নেই, জরিমানা করি। কিন্তু সরকার দাম যতই বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয় না কেন, খুচরা বাজারে বিক্রেতারা বাড়তি দামেই এলপিজি বিক্রি করে। কখনো কখনো ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে। বেশি দাম না রাখতে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। বৈঠককালে তারা ন্যায্য দামে বিক্রিতে সম্মতি দিলেও অনেকেই কথা রাখেন না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়