উপাচার্য ড. মশিউর রহমান : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখতে হবে

আগের সংবাদ

সংস্কারের বিরূপ প্রভাব বাজারে : আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

পরের সংবাদ

স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, আন্দোলন তুঙ্গে

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : একাত্তরের ৩ মার্চ। ফাগুনের আগুনঝরা এইদিনে তৎকালীন পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ছাত্র জনসভায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ ঘোষণা করে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ। এতে ‘বাংলাদেশ’ নামে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালির ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশ, বৈষম্যের নিরসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা- এই তিনটি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হয় যা পরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম লক্ষ্যে পরিণত হয়।
একাত্তরের ৩ মার্চ- সেদিনই সভা থেকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ নেন। জনসভায় বঙ্গবন্ধু অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে তার বক্তব্যে অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান। ওইদিনই বাংলার মাটি শহীদের রক্তে

রঞ্জিত হয়। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৭১ জন নিহত হয়। সারাদেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন নেতা, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে নির্বাচিত করা হয় জাতীয় সংগীত হিসেবে।
স্বাধীনতার ইশতেহারের মূল বিষয় : স্বাধীনতার ইশতেহারের মূল বিষয়গুলো ছিল- বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলো, সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হবেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান নেতা; গাঢ় সবুজের জমিনের উপর লাল সূর্য এবং লাল সূর্যের উপর বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্রসংবলিত জাতীয় পতাকা; জাতীয় সংগীত হবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’; গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি; বাংলাদেশের মানচিত্র অনুযায়ী ৫৬,০০০ বর্গমাইলের এ দেশকে শত্রæমুক্ত করতে হবে; সশস্ত্র বাহিনীর সব বাঙালি সেনাদের, ইপিআর পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে হবে; শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, গায়ক-গায়িকা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে সংগ্রাম কমিটি করাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ওই ইশতেহারের মধ্য দিয়ে কেবল স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মসূচি ঘোষণা হয়নি, বরং প্রতিটি বিষয়ে পল্টন ময়দানে উপস্থিত লাখ লাখ জনতা হাত তুলে সমর্থন অনুমোদন দেন।
অগ্নিগর্ভ সারাদেশ : বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথমদিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল চলছিল সেদিন। শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্তব্ধ প্রায়। পল্টনের সেই জনসভায় বঙ্গবন্ধু কর-খাজনা না দেয়ার ঘোষণা দেন। সামরিক সরকারকে গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি তাদের ব্যারাকে ফিরে যেতে বলেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন নির্দেশ দেন, আমি যদি নাও থাকি, আন্দোলন যেন না থামে।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও ১৯৭১ সালে প্রকাশিত সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী, হরতাল চলাকালে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি ও বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে শতাধিক মানুষের প্রাণ যায় সেদিন। ঢাকা ছাড়াও রংপুর এবং সিলেটে কারফিউ জারি করা হয়। পরদিনের ইত্তেফাকের খবর অনুযায়ী, হরতালে চট্টগ্রামেই নিহত হন ৭৫ জন। এদিকে ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণায় ১০ মার্চ ঢাকায় নেতৃবৃন্দের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয়, এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন হবে। বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার সেই আমন্ত্রণ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তবে জুলফিকার আলী ভুট্টো তা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর উদ্দেশে বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান, তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করুন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করব। বঙ্গবন্ধু সেদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যান। জীবন রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি ব্লাড ব্যাংকে রক্তদানের আহ্বান জানান। তিনি জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বাংলার স্বাধিকারবিরোধী বিশেষ মহল নিজস্ব এজেন্টদের দিয়ে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটাচ্ছে। স্বাধিকার আন্দোলন বিপথগামী করার এ অশুভ চক্রান্ত রুখতেই হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়