প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ
কাগজ ডেস্ক : সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে কমেছে প্রবাসী আয়। অবশ্য এর আগের দুই মাস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছিল। তবে সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রবাসী আয় এখনো ইতিবাচক।
এ সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী দেশে পাঠিয়েছে ১৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৪০১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। এ অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৪৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার বা ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে) যা ১৬ কোটি ৭০৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের মাস জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১ হাজার ৪০১ কোটি ৩৪ লাখ বা ১৪ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুখবর দিয়ে শুরু করেছিল প্রবাসী আয়ে। প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে হোঁচট খায়, নেমে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে। অক্টোবরে তা আরো কমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আসে।
পরের তিন মাস টানা বেড়েছে। নভেম্বরে আসে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে আসে ১৭০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে আরো বেশি, ১৯৬ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা বেশ কমে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। দুই মাস ইতিবাচক ধারার সূচনা অব্যাহত থাকার পর ফেব্রুয়ারি মাসে হোঁচট খাওয়ার পেছনে কম দিনের মাসের প্রভাব ফেলেছে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আসা ১৫৬ কোটি ডলার প্রবাসী আয়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৭ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১২৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। আর ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬১ লাখ ৮০ হাজার ডলার। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ১ হাজার ৪০১ কোটি ৩৪ লাখ (১৪.০১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
প্রবাসী আয় বৈদেশিক রিজার্ভের বড় মাধ্যম। যা তুলনামূলক কম ব্যয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্সে নিম্নমুখী হওয়ার পর বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর মধ্যে হুন্ডি ও অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা, রেমিট্যান্স পাঠাতে ফি প্রত্যাহার এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানোর মতো উদ্যোগ নেয়া হয়। পরের মাস থেকেই সুফল পাওয়া শুরু হয়। বাড়তে থাকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো ঠেকাতে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার (বিএফআইইউ) বিভিন্ন উদ্যোগের কাজ দিচ্ছে। তারা (বিএফআইইউ) এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৫ হাজার ৭৬৬ জন এজেন্ট চিহ্নিত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে পাঠায়। এর মধ্যে হুন্ডির সঙ্গে জড়িত ২ হাজার ২৬৬ জনের এজেন্ট এবং তিনজনের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ বাতিল করা হয়। বিএফআইইউ যে ৫ হাজার ৫৫৭ সুবিধাভোগীর এমএফএস হিসাব অবরুদ্ধ করেছিল, সেখানে জমার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৫৩টি হিসাব সচল করা হয়েছে।
বাকি ২ হাজার ৬১৪টি হিসাবে শুধু উত্তোলন বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৮০০ জনের বেশি হিসাবধারী তাদের হিসাব সচল করার লিখিত আবেদন করেছেন। বিএফআইইউর কাছে যা বর্তমানে বিবেচনাধীন রয়েছে। পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা সে তথ্য খতিয়ে দেখছে তারা।
এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স কিছুটা কমলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো ঠিক জায়গা। এগুলো অব্যাহত থাকলে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করা হয়েছে। এটা একদরের দিকে যাচ্ছে। ফলে যারা ডলার কিনে মজুত করত তারা আর তা করবে না। তারা বলছেন, সুদ হার নমনীয় করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর ফলে বিনিময়ে হারের ওপরে আরো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
যারা রেমিট্যান্স পাঠান, তাদের আরো বেশি হারে পাঠানোর জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিসের মতো মাধ্যম চালু হয়েছে। এগুলো আরো সহজতর করতে হবে। প্রবাসীদের মধ্যে যাদের আয়-রোজগার বেশি, তারা যেন ট্রেজারি বন্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ড-বিল ডিজিটাল মাধ্যমে আরো তাড়াতাড়ি কিনতে পারেন এটাও নিশ্চিত করতে হবে।
তাহলে দেশে আরো অনেক ডলার আসবে এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা দেয়া হচ্ছে সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।