উপাচার্য ড. মশিউর রহমান : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখতে হবে

আগের সংবাদ

সংস্কারের বিরূপ প্রভাব বাজারে : আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

পরের সংবাদ

তিন রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশ : ত্রিপুরা-নাগাল্যান্ডে জিতল বিজেপি, মেঘালয়ে ত্রিশঙ্কু

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য, আগরতলা (ভারত) থেকে : সকালে রিকশা করে আগরতলা শহর ঘুরছি। রিকশাচালক জীবন নমো জানালেন- বোঝলেন বাবু, ত্রিপুরায় যাতে বিজেপি জিতে সেজন্য শনিঠাকুরের কাছে ১০০ টাকা মানত করেছি। বিজেপিকে কেন জিততে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনে তো বাংলাদেশ থাইক্যা আইছইন। শহরটা ঘুইরা দেখইন কিতা কাম করছে। শুধু শহর নয়- পুরো ত্রিপুরাজুড়েই উন্নয়ন হয়েছে। আমরাও রিকশা চালিয়ে আয় ইনকাম করেছি। তবে খবরের কাগজের হকার রসরাজের কথায়, বিজেপির চেয়েও সিপিএম ভালো ছিল। কিন্তু কেন যে ভোটে পারে না এটা মাথায় ঢোকে না।
এই দুজনের সঙ্গে যখন কথা বলছি, তখন ত্রিপুরা শহরজুড়ে নিস্তব্ধতা। ১৪৪ ধারা জারি। দোকানপাট বন্ধ। গণনা কেন্দ্রগুলো থেকে ভেসে আসছে কে কত ভোট পেলেন তার

পরিসংখ্যান। গতকাল শুধু ত্রিপুরা নয়, বাংলাদেশ লাগোয়া উত্তরপূর্ব ভারতের তিনটি রাজ্যে ভোটের ফল বেরিয়েছে। তাতে ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ডে জিতেছে বিজেপি। মেঘালয়ে জিতেছে এনপিপি।
আগরতলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, ত্রিপুরায় বিজেপির দিন ভালো শুরু হয়নি। এমনকি জয় যখন সুনিশ্চিত তখনো বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার গলায় আক্ষেপ। যতটা ভালো ফল হওয়ার কথা ছিল; ঠিক ততটা ভালো হয়নি। তবু দুপুর গড়িয়ে বিকাল গড়াতেই শুরু হয়ে গেল বিজয় উৎসব। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সঙ্গে গলা জড়িয়ে শামিল হলেন বিজয় উৎসবে। পরে বিজেপি কার্যালয়েও খুশি খুশি চেহারায় দেখা গেল মানিক সাহাকে। প্রাক্তন মুখ?্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ও বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রকে সঙ্গে নিয়েই আবির খেলায় মেতে ওঠেন তারা। একে অপরকে করান মিষ্টিমুখও।
ত্রিপুরা ভোটে দলের জয় নিয়ে এক টুইট বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে এই ভোট। ধন?্যবাদ ত্রিপুরা। রাজে?্যর প্রবৃদ্ধির গতিপথকে বাড়িয়ে নিয়ে যাবে ত্রিপুরা বিজেপি।
গতকাল সন্ধ?্যা পযর্ন্ত দেখা গেছে, মাত্র ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েই ত্রিপুরা দখল করেছে বিজেপি। সিপিএম পেয়েছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সংখ?্যার হিসাবে ত্রিপুরায় বিজেপি ৩২টি আসনে জিতে সংখ?্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। তাদের জোটসঙ্গী আইপিএফটি জিতেছে মাত্র একটি আসনে। এদিকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা সিপিএম এবার জিতেছে ১১টি আসনে। কংগ্রেস পেয়েছে ৩টি আসন। তিপ্রা মথা পেয়েছে ১৩টি আসন।
সংশ্লিষ্টরা ভোটের আগে বলেছিলেন ত্রিপুরায় তিপ্রা মথা ভোটে একটি ফ?্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল দলটি মাত্র ১১টি আসন জিতেছে। এরপরই ত্রিপুরা রাজ?্য বিজেপির মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, রাজে?্য বিজেপিই পরবর্তী সরকার গঠন করছে। বৃহত্তর তিপ্রাল?্যান্ড ছাড়া বিজেপি তিপ্রা মথা দলের সব দাবি মানতে রাজি।
ত্রিপুরায় দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ?্যমন্ত্রী ও বর্তমানে রাজ?্যসভার সংসদ সদস্য বিপ্লব কুমার দেব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তা আরো বাড়বে। তার মতে, স্থিতিশীলতা থাকলেই সবকিছুতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসায় সেই সম্পর্ক আরো গতিশীল হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
এদিকে বিপুল সংখ?্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নাগাল?্যান্ডে ফের সরকার গঠন করতে চলেছে এনডিপিপি-বিজেপি জোট। এজন?্য রাজ?্যবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, নাগাল?্যান্ডে ডাবল ইঞ্জিন সরকার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে। উল্লেখ?্য, সেখানে বিজেপির জোটসঙ্গী এনডিপিপি ২৩টি আসনে জিতেছে। বিজেপি জিতেছে ১২টি আসনে। পাশাপাশি মেঘালয়ে তার দল না জিতলেও সেখানে উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোদি।
এদিকে দফায় দফায় উত্তরপূর্ব সফর। কখনো মেঘালয়। কখনো ত্রিপুরা। কিন্তু সেই দৌড়াদৌড়িই সার হলো। তেমন কিছুই এলো না তৃণমূলের ঝুলিতে। শুধু তাই নয়- ত্রিপুরায় এক শতাংশ ভোটও পায়নি মমতা বন্দোপ?্যাধায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে পরাজয় সত্ত্বেও এদিন উত্তরপূর্বের মানুষকে ধন?্যবাদ জানালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপ?্যাধায়। মেঘালয়ে তার দল পেয়েছে ১৫ শতাংশ ভোট।
গতকাল সন্ধ?্যায় ত্রিপুরার মুখ?্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বিজয়ের জন?্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন?্যবাদ জানিয়েছেন। তার যোগ?্য ও দক্ষ নেতৃত্বেই জয় এসেছে। হয়তো এ কারণেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ এর আগে রাজ?্যসভার ভোটে অন?্যান?্য দলের চেয়ে এগিয়ে গেল মোদির দল বিজেপি। অর্থাৎ সেভেন সিস্টার্স খ?্যাত উত্তরপূর্ব ভারত বিজেপির দখলে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়