উপাচার্য ড. মশিউর রহমান : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখতে হবে

আগের সংবাদ

সংস্কারের বিরূপ প্রভাব বাজারে : আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

পরের সংবাদ

টিকটকে বাধা দেয়ায় সংঘর্ষ নিহত ১, আহত শতাধিক : শতাধিক রাউন্ড গুলি, গ্রেপ্তার ১৯

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ ও শংকর দত্ত, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জের ছাতকে টিকটক করতে বাধা দেয়ায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত ও ছাতক সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রনজয় চন্দ্র মল্লিক ও ৪ পুলিশসহ উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছে। সিনিয়র সহকারী সুপারসহ আহত পুলিশ সদস্যদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পৌর শহরের বাঁশখালা ও কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চার ঘণ্টাব্যাপী সুরমা ব্রিজের গোলচত্বর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে প্রথমে ছাতক ও পরে দোয়ারাবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট, ১৪টি টিয়ারশেল এবং ৩১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত সাইফুল ইসলাম, মামুন, সজিবকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রাজ্জাক, জসিম, কুটিলাল ও আফতাব উদ্দিনসহ আহতদের স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত সাইফুল ইসলাম মুক্তিরগাঁও গ্রামের চমক আলীর ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক তরুণ-তরুণী টিকটক ভিডিও করার সময় তাদের বাধা দেয় বাঁখলাখালা গ্রামের আহাদ মিয়ার ছেলে রাজ্জাক, আহমদ আলীর ছেলে মান্নাসহ তাদের অন্য সহযোগীরা।
এ সময় মুক্তিরগাঁও গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে মামুনের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে মামুনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ নিয়ে প্রথমে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এ ঘটনার জের ধরে দুই গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয়পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে যান
চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সংঘর্ষকারীরা গোলচত্বর এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকান ও একটি পিকআপ ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
সংঘর্ষ থামাতে ছাতক থানা পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। পরে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছে। ফের যাতে সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে সেজন্য ঘটনাস্থলে বর্তমানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পরে বুধবার রাতব্যাপী সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের ছাতক সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রনজয় চন্দ্র মল্লিক, অফিসার ইনচার্জ খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির, দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ দেবদুলাল ধরের নেতৃত্বে এসআই গোলাম ফাত্তাহ, মো. শাহিন হোসেন, মো. আসাদুজ্জামান, নাজমুল হাসান শেখ, মাসুদ রানা বিশ্বাস, এএসআই শরিফুল ইসলাম, মারুফ আল মুকিত, তোলা মিয়ার সহযোগিতায় এলাকার বিভিন্ন স্থানে রাতভর অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে আটক করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বাঁশখলা গ্রামের আহাদ মিয়ার পক্ষের শাকিব মাহমুদ (২৫), আলী কাউছার (২১), মোশারফ হোসেন হেলাল (১৮), ছায়েদ আহমদ লিমন (১৮), মো. রাসেল মিয়া (২৪), মো. সালমান (২৫), ছেরাগ আলী (৫৭), রহিম আলী (৫৮), মোতাছির আলী (৬৮), আহাদ আলী (৬৩), সুরত আলী (৭০), দুলন (৩৮), নজির আলী (৭০), মো. মামুন মিয়া (১৯), যোবায়ের আহম্মদ ইমন (২০), মো. রাজিব মিয়া (২২), আব্দুস শহিদ (৩৬), আবু বক্কর (২০), মো. মিলন মিয়া (৩২)।
ছাতক থানার ওসি খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। তাই আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের ছাতক সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রনজয় চন্দ্র মল্লিক সাইফুল ইসলাম নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ভোরের কাগজকে জানান, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ফের যাতে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে সে জন্য এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়