উপাচার্য ড. মশিউর রহমান : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখতে হবে

আগের সংবাদ

সংস্কারের বিরূপ প্রভাব বাজারে : আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

পরের সংবাদ

ঘরছাড়া ৩৩ জনকে শনাক্ত করেছে র‌্যাব : ধর্মান্তরিতরাও যোগ দেয় হিন্দাল শারক্বীয়ায়

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার মোট সদস্যদের মধ্যে ৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ভিডিও পর্যালোচনা করে এ জঙ্গি সংগঠনের নতুন আরো ৪ সদস্য শনাক্ত করা গেছে। নতুন ছাড়াও ধর্মান্তরিত হয়ে পার্থ কুমার দাস নামে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীও এ জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত উদ্ধারকৃত দুটি ভিডিও পর্যালোচনা করে শারক্বীয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া ৫৫ তরুণের মধ্যে ৩৩ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে র‌্যাব।
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া দুটি ভিডিও বিশ্লেষণ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, গত ২২ জানুয়ারি শারক্বীয়ার সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার মোবাইল ফোন থেকে ৮ মিনিট দৈর্ঘ্যরে একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ভিডিওতে ২৯ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। আর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- হোসাইন আহমদ (২২), নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), আল আমিন ওরফে মিলদুক (২২) ও আল আমিন ওরফে পার্থ কুমার দাস (২১)।
এ সময় গ্রেপ্তারকৃত আল আমিন ওরফে মিলদুকের হেফাজত থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনে শারক্বীয়ার প্রধান নেতা বা আমির আনিছুর রহমান ওরফে মাহমুদ ও দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের সদস্য এবং অর্থ সংগ্রহবিষয়ক উগ্রবাদী বক্তব্যসংবলিত চাঞ্চল্যকর ৭ মিনিটের ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার করা হয়। এ ভিডিওতে আরো ২৩ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। এই ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি গত ২২ জানুয়ারি উদ্ধার হওয়া ভিডিওতেও ছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া ভিডিওতে নতুন আরো ৪ জঙ্গির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ভিডিওর তথ্যানুযায়ী গত বছরের ৬ জুন ড. জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ মারা যান। বাকিরা হলেন- শেখ আহমেদ মামুন ওরফে রমেশ, শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই ওরফে রাজান ও নিজাম উদ্দিন হিরণ।
র‌্যাবের পর্যালোচনা অনুযায়ী, গত ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ভিডিও ও গত মঙ্গলবার পাওয়া ভিডিওতে ঘর ছাড়া ৫৫ জনের মধ্যে ৩৩ জনকে শনাক্ত করা গেছে। শনাক্তকৃতদের মধ্যে র‌্যাব এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দুইটি ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস দিয়েছেন আল আমিন ওরফে বাহাই (নারায়ণগঞ্জ থেকে নিখোঁজ রিয়াসাত রায়হানের গৃহশিক্ষক) এবং ভিডিও এডিটিং করেছেন পাভেল। ভিডিওটির এডিট ও ভয়েসের বিষয়ে তিনি বলেন, নিখোঁজ তরুণ আবু বক্করের মা আম্বিয়া বেগম ছেলের সন্ধান চেয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন। সেই আবু বক্কর তারই শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। এই ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে আল আমিনের ভয়েস ব্যবহার করা হয়। ভিডিওটি এডিট করেন আরেক জঙ্গি নিখোঁজ তরুণ পাভেল।
অমুসলিম পার্থ কুমারের জঙ্গিবাদে জড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে কমান্ডার মঈন বলেন, ২০১৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন পার্থ কুমার দাস। পরে তিনি কাকরাইল এসে পেশাগত কাজ করছিলেন। এই সময়ে সিরাজ নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। এই সিরাজের মাধ্যমে অনেকেই এই সংগঠনে জড়াতে উদ্বুদ্ধ হন। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। সিরাজ পার্থকে বিদেশে চাকরিসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখান। পরে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
ডা. জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ নিহতের বিষয়টি তারা নিজেদের ভিডিওতে রেখেছেন। তিনি ২০২২ সালের ৬ জুন নিহত হন। তারা ভিডিওতে দেখিয়েছেন, অন্য একটি পাহাড়ি সংগঠনের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াইয়ের সময়ে তিনি নিহত হন। তার নামে একটি ক্যাম্পের নামকরণ করা হয়।
নতুন পাওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে কমান্ডার মঈন বলেন, মূলত অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের জন্য এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে। অপরদিকে দেশে বড় কোনো নাশকতার পর নিজেদের অস্তিত্ব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে জানান দেয়া এই ভিডিওর উদ্দেশ্য হতে পারে। সংগঠনটির আমির রাকিব বা দাওয়াতি শাখার প্রধান মাইমুনকে আটক করতে পারলে ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, গত নভেম্বর থেকে তাদের মোবাইল ফোনে ভিডিওটি ছিল। ভিডিওর কাজটি চলমান ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই র‌্যাবের অভিযান শুরু হয়।
এখন পর্যন্ত কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারা নিজেদের গ্রুপের মধ্যেই এগুলো সরবরাহ করেছে। কোনো নাশকতার পরে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে এটি ব্যবহৃত হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে সংগঠনটির আমিরই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছে আটককৃতরা। তবে এখন নতুনদের উদ্বুদ্ধ করে সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহের জন্য ভিডিওটি ব্যবহৃত হচ্ছিল।

নতুন সংগঠনের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ যে চারজনকে আটক করা হয় তাদের সমতলে আত্মগোপনের নির্দেশনা ছিল। এজন্য তারা ৪ দিন ধরে পাহাড় থেকে হেঁটে বান্দরবান শহরে আসে। তাদের বিচ্ছিন্নভাবে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এখন তাদের কি শুধু আত্মগোপন নাকি অন্য কোনো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া যাবে। র?্যাবের অব্যাহত অভিযানে এখন পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৯ জঙ্গি ও তাদের প্রশিক্ষণের সহায়তার অভিযোগে ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়