উপাচার্য ড. মশিউর রহমান : সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখতে হবে

আগের সংবাদ

সংস্কারের বিরূপ প্রভাব বাজারে : আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

পরের সংবাদ

অন্য সমাজের জানাজা-সৎকার ও দাওয়াতে গেলেও শাস্তি! : বাঘমারায় সামাজিক ‘কালো আইন’

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান ও আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী থেকে : একটি গ্রামে তিনটি গ্রুপ (সমাজ)। একে অন্যের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় প্রতিদিন। স্থানীয় বাজারে পরস্পরের আড্ডা, এমনকি চা-বিস্কুট খাওয়ার রেওয়াজও রয়েছে। তবে সেখানে বলবৎ রয়েছে একটি সামাজিক ‘কালো আইন’। যে আইনে, এক সমাজের মানুষ অন্য সমাজে দাওয়াত দিতে বা খেতে পারবেন না; এমনকি মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন বা সৎকারে অংশ নিলে পেতে হবে শাস্তি! সেই আইনের বেড়াজালে ভাতিজির বিয়ের দাওয়াত খেয়ে শাস্তি পেলেন এক বিজিবি সদস্য।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ওই গ্রামটির অবস্থান। নাম ‘নামাজগ্রাম’। দেশের গ্রামাঞ্চলে ইসলাম ধর্মের রেওয়াজ মোতাবেক কুরবানির গোসত বা ফিতরা বণ্টনের জন্য বেশ কয়েকটি পরিবার নিয়ে একটি করে গ্রুপ করা হয়। এলাকায় সেটি ‘সমাজ’ হিসেবে পরিচিত। বাগমারার নামাজ গ্রামে রয়েছে এরকম তিনটি সমাজ। সেখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকলেও তিন সমাজে রয়েছে তিনটি মসজিদ। গণিপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান মজনুর বাড়ি ওই গ্রামে। তার সমাজে রয়েছে প্রায় ৬০টি পরিবার। আর বাকি দুটি সমাজের পরিবার সংখ্যা ৬০।
জানা গেছে, এলাকায় ‘কালো আইন’ শক্তভাবে প্রয়োগে ইউপি সদস্য মজনুর নেতৃত্বে রয়েছে একটি চক্র। এ চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন- তার ভাই মো. মোস্তাক, জামাল ও ফিরোজ। প্রায় ২০ বছর আগে অভ্যন্তরীণ দ্ব›েদ্বর জেরে সমাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়। ওই সময় দাওয়াত খাওয়া, বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিষেধ করা হয় কঠোরভাবে। এমনকি ইউপি সদস্যের সমাজের কেউ মারা গেলে অন্য দুই সমাজের কেউ দাফন-কাফন বা সৎকারে অংশ নিতে পারবেন না, তাদের জানাজায়ও ইউপি সদস্যের সমাজের লোকজন যেতে পারবেন না বলেও ‘আইন’ করা হয়। গত বছর থেকে তা কঠোরভাবে প্রয়োগ শুরু করেন ইউপি সদস্য মজনু। সবশেষ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক নারীর বিয়ের দাওয়াত খাওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি সালিশ ডাকেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই সালিশে প্রতিপক্ষের সমাজ থেকে প্রায় ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। সেখানে হুসেন আলী নামে এক বিজিবি সদস্যকেও জরিমানা করা হয়। পরে তারা থানায় লিখিত দেন। বিজিবি সদস্য হুসাইন আলী ভোরের কাগজকে বলেন, অপর সমাজে দাওয়াত খাওয়া যাবে না, কাজ করা যাবে না, কেউ মারা গেলে মাটিও দেয়া যাবে না; যদি কেউ যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন আইন চালু রয়েছে। সবশেষ আমার ভাতিজির বিয়েতে যাওয়ায় সালিশ বসিয়ে জরিমানা করেছেন ইউপি সদস্য মজনু ও সমাজের মাতুব্বররা।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মজনু ভোরের কাগজকে বলেন, এরকম কিছু হয়নি, তবে মতানৈক্য রয়েছে। গণিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, এরকম কথা শুনেছি। তারা থানায় গেছে; থানা কী করবে, করুক।’ ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, সমাজে প্রথা ছিল, তবে ডেকে বলা হয়েছে। তারা এমন ভুল আর করবে না। আবার খোঁজখবর নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়