শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

সেবামূলক কার্যক্রমে ওয়াসিল উদ্দিন ফাউন্ডেশন

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমার জন্ম ১৯৭১-এর অগ্নিঝরা মুক্তিযুদ্ধের সময়, সাভার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হেমায়েতপুর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মেছি বলে বাবা নাম রেখেছিলেন ‘সমর’। সমর মানে যুদ্ধ। বাবাতো সাংবাদিক। ঘেঁটেঘুটে সুন্দর বাংলায় নামটি দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ছাত্রলীগ, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের বীভৎস কালরাতের কথা তো আমি বুঝিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি বাবার কাছ থেকে এসব ইতিহাস কিছু কিছু শুনেছি। আমার বাবা ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। তিনি সাংবাদিকতা পেশার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ পত্রিকাতেই কাজ করেছেন, কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা ও সাংবাদিকতা জীবনের উন্নতির আশায় অন্য কোনো পত্রিকায় যোগদান করেননি। তিনি একাধিকবার ঢাকা জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জীবন্ত বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখিনি। কিন্তু তার মহান সংগ্রামী জীবন এবং তার রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচি জেনেছি আমার বাবার কাছ থেকে, পত্র-পত্রিকা, বই-পুস্তক পড়ে, যা আমাকে এই মহান নেতার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। আমার বাবা প্রচুর লেখাপড়া করতেন। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের নানা বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখতেন, রাখতেন যথেষ্ট জ্ঞান। বাবা নিজেও যেমন রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন, তেমনি রাজনৈতিকভাবে আমাদের ভাই-বোনদের সচেতন করার চেষ্টা করতেন, শৈশবেই তিনি আমাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস এবং রাজনৈতিক আলোচনামুখী করার চেষ্টা করতেন। বাবা প্রতিদিনই সকালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার খবরগুলো সামনে নিয়ে আমার ভাই-বোনদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। তিনি ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদে’ বিশ্বাসী রাজনৈতিক সচেতন লোক ছিলেন এবং আমাদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ভাই-বোনসহ সবাইকে অনেক কিছু বোঝাতেন। তিনি শোনাতেন তার রাজনৈতিক জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডারের কথা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিশুকাল থেকে শিক্ষা জীবনের ও সংগ্রামী জীবনের কথা। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পাক হানাদার সেনারা ‘সংবাদ’ অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। যেখানে আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেন সাংবাদিক শহীদ সাবের। এ কথাও অনেক বই-পুস্তকে পাওয়া যায়। বাবার মতোই আমি আমার বড় মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম ঠাণ্ডু মোল্লার কাছ থেকেও অনেক ইতিহাস শোনেছি ও শিখেছি। তিনি ছাত্রজীবনেই সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দীক্ষা নিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করেন ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে। বিশেষ করে ১৯৬৯ সালের ছাত্র গণআন্দোলনে তার ছিল সাভার অঞ্চলে বিশাল ভূমিকা। পরে মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধের পর ন্যাপ মোজাফফরের নেতা হিসেবে কিছুদিন সক্রিয় থাকেন। তারপর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এই সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি বা বাম রাজনীতিযুক্ত থাকার কারণে প্রচুর রাজনৈতিক বই পড়তেন এবং অন্যদের পড়ানোর চেষ্টা করতেন। তার রাজনীতির আলোচনায় আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি বলে মনে হয়। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ১৯৬৬ সালের ৬ দফা এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়। এ নির্বাচনের পর ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দেন। বাবা ও মামার আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি অনুপ্রাণিত হই বা উৎসাহ পাই। এই উৎসাহ থেকেই ধীরে ধীরে যুক্ত হতে থাকি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে হয়ে যাই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
বাবার মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার প্রেরণা মাথায় নিয়ে মাঠে ময়দানে ঘুরে বেড়াই। বাবা তার কথা স্মরণ করে জীবিত ‘মা’কে সালাম করে ঘর থেকে প্রতিদিন বেরিয়ে পড়ি। এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণের অগ্রযাত্রায়। করোনা, দুর্যোগে আমি জীবনকে বাজি রেখে করোনাবিষয়ক সব ধরনের মানবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ সেবায় কাজ করেছি। চরম সময়ে আমি নিজে করোনা রোগীর দাফনও করেছি। করোনার সময়ে কৃষকের ধান কেটেছি। দুবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। ঐড়ংঢ়রঃধষরুবফ হয়েছি। এইতো সেদিনই চড়ংঃ-পড়ারফ-ঝুহফৎড়সব-এ আক্রান্ত হয়ে বিষ-ব্যথায় যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সর্বশেষ ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়েছি। শীতের মৌসুমের শুরুতেই আমি প্রতিদিন রাতের বেলায় দরিদ্রদের কম্বলসহ বৃদ্ধ, শিশুদের শীতবস্ত্র বিলিয়েছি। দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের পোশাক-আশাকসহ তাদের চাহিদামতো সবকিছু দিয়ে যাচ্ছি। দরিদ্র পরিবারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যাদি বিতরণ করি ও তাদের পরিবারের ছোট সদস্যদের জামা-কাপড় বিতরণ করি। এছাড়া আমি দরিদ্র ছাত্রদের জন্য বাইসাইকেল বিতরণ করি। প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইলচেয়ার বিতরণ আমার একটি নিয়মিত কার্যক্রম। আমার সেবামূলক কার্যক্রমগুলো করি ‘ওয়াসিল উদ্দিন ফাউন্ডেশন’ নামে। আমার সাংবাদিক বাবা ওয়াসিল উদ্দিনের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই আমি ‘ওয়াসিল উদ্দিন ফাউন্ডেশন’ গড়ে তুলেছি। রাজীবসহ অন্য ভাইয়েরাও সাহায্যের হাত বাড়ায়। বাবার নামে আমি একটা ওয়াসিল উদ্দিন গণপাঠাগার করেছি। প্রতি বছর ওয়াসিল উদ্দিন ফাউন্ডেশন ও ওয়াসিল উদ্দিন গণপাঠাগারের উদ্যোগে আমি ভাষার মাসে বইমেলার আয়োজন করে আসছি, এবারো করেছি। গত ২০-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এতে সমবেত হয়েছেন, বই কিনেছেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। এসব কাজের মধ্যে বাবার স্মৃতি ছড়িয়ে পড়ছে সবার কাছে। তিনি আছেন অমর হয়ে। সবাই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা, আমার মা এবং কবরবাসী বাবা ওয়াসিল উদ্দিনের জন্য দোয়া করবেন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

ফখরুল আলম সমর : চেয়ারম্যান, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদ
সাভার, ঢাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়