প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আবার বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম আরো ৫ শতাংশ বাড়িয়ে গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সরকারের নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। মার্চ মাসের বিদ্যুতের বিলেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে। এ নিয়ে চলতি বছর তৃতীয়বারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়াল। দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলমান সংকট, গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই দিশাহারা সাধারণ মানুষ। এর ওপর আবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি উদ্বেগের। এর ফলে চাপ বাড়বে মানুষের জীবনযাত্রায়। খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ বিল যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে উৎপাদন খরচ, যা পরোক্ষভাবে মানুষের ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। এর আগে ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। গত ১৪ বছরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১১ বার। এ খাতের সিস্টেম লস এবং দুর্নীতি রোধ করতে পারলেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না বরং কমানো যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক কিংবা সেবাদানকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলো তাতে আগ্রহী না হয়ে সব সময় দাম বৃদ্ধির পথে হাঁটতেই পছন্দ করে। এত কম সময়ে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নাগরিকদের জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ যোগ করবে- এটাই স্বাভাবিক। ডলার-সংকটে পড়ে জ্বালানি সাশ্রয়ে গত জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লোডশেডিং শুরু করে সরকার। নভেম্বরে শীত শুরুর আগ পর্যন্ত এটি চলমান থাকে। এখন দাম বাড়ানোর পর আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারবে কিনা সেটা দেখার বিষয়। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়। তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা নিয়মিত মুনাফা লাভ করছে। গ্যাসের মতো বিদ্যুৎ খাতেও সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। ১ শতাংশ সিস্টেম লসেই অন্তত ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি গুনতে হয় বিদ্যুৎ খাতে। এসবের দায় চাপে গ্রাহকের ওপর। আদর্শিকভাবে এ খাতের কোনো উন্নয়ন হয়নি। সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যর্থ বিদ্যুৎ বিভাগ। কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে। এসব প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ। আর এসবের দায় সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপানোর জন্য বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব রকম দ্রব্যমূল্য ও সেবামূল্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হয় ভোক্তা সাধারণকে। তাই সাধারণ ভোক্তাদের সামর্থ্য তথা জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের দাম কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। সরকার আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির দাম বাড়ানোর ক্ষমতা হাতে নিয়েছে। আমরা আশা করব সরকার বিদ্যুতের মতো জরুরি প্রয়োজনীয় সেবা খাতের ব্যাপারে জনবান্ধব নীতি নিয়ে এগোবে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।