শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

পাপোশ তৈরি করে স্বাবলম্বী : ঠাকুরগাঁওয়ের ল²ীপুর গ্রাম দারিদ্র্যমুক্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঝুটের তৈরি পাপোশে ঠাকুরগাঁওয়ের একটি গ্রামে এসেছে সচ্ছলতা। ঝুট কাপড়ের পাপোশ তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা। স্থানীয় বাজারসহ সারাদেশে রয়েছে এসব পাপোশের ব্যাপক চাহিদা। উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামীণ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। বছরের কয়েক মাস কৃষিকাজ থাকলেও অধিকাংশ সময় তাদের অলস বসে থাকতে হতো। দরিদ্র এসব পরিবার তখন বেশ অর্থ সংকটে পড়ত। আর এসব পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় ইএসডিও।

বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ)-এর অর্থায়নে ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর বাস্তবায়নে ২৫ জন নারীকে দেয়া হয় পাপোশ তৈরির প্রশিক্ষণ।
শুধু তাই নয় এই ২৫ জন নারীকে দেয়া হয় তৈরির যন্ত্র এবং সরবরাহ করা হয় কাঁচামাল। পাপোশ তৈরির পর পোহাতে হয় না বিক্রি করার ঝামেলাও। বাড়ি থেকেই প্রতি সপ্তাহে পাপোশগুলো কিনে নিয়ে যায় রাইসা ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সংসারের কাজের পাশাপাশি এসব পাপোশ তৈরি করে মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করছেন গ্রামীণ এই নারীরা। তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আশপাশের অন্যান্য নারীরাও।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের শিক্ষার্থী মমতাজ বেগম জানান, টাকার অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিএনএফ ও ইএসডিও এর সহযোগিতায় এক মাসের পাপোশ তৈরির প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর কাঁচামাল হিসেবে ঝুট ও একটি পাপোশ তৈরির মেশিন অনুদান হিসেবে পায়। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রতিমাসে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা

ইনকাম করে এখন সে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালায় এবং বাবা মাকে হেল্প করে। একই গল্প একই গ্রামের খুশি বেগমের। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করতে পারছিলেন না। অথচ তিনি এখন নিজেই প্রতি মাসে সংসারে স্বামীকে হেল্প করেন এবং সঞ্চয়ও করেন।
একই গ্রামের মর্জিনা জানান, তার স্বামী নেই সহায়সম্বল বলতে কিছু নেই। ইএসডিও একটি গাভী দিয়েছে। এই গাভী দিয়েই তার অভাব দূর করবেন এমনটাই আশাবাদী তিনি।
ইএসডিও নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ইএসডিও একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থার মাধ্যমে রহিমানপুরের লক্ষীপুর গ্রামকে বেছে নিয়েছিল এবং এখানে আমরা দেখেছি স্বকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কি ধরনের সুযোগ রয়েছে। পাপোশ এক্ষেত্রে খুব ভালো ভূমিকা রেখেছে। এ কারণেই আমরা দেখি, বাংলাদেশে অনেক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কিন্তু বাজারজাত করতে না পারলে সেটা কাজে আসে না। কিন্তু এটি আমরা প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে এমনভাবে মিলিয়ে দিয়েছি যে তার প্রশিক্ষণ যেদিন শেষ হয়েছে সেদিন থেকে তার আয় এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা এনজিও ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই। এ ধরনের একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্য। আমরা প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পাচ্ছি অতি দরিদ্র নারীরা কিভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে এবং দারিদ্র্যমুক্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) এর চেয়ারম্যান, সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান বলেন, সারা দেশে পাঁচটি গ্রামকে বেছে নেয়া হয়েছে পাইলট প্রকল্প হিসেবে। যাতে কিভাবে একটি গ্রামকে দারিদ্র্য বিমোচন করা যায়। যারা আগে দুবেলা খেতে পারত না তারা মাসে ৫-৬ হাজার টাকা ইনকাম করছে বাড়িতে বসেই। আমরা এটাকে মডেল হিসেবে সারা বাংলাদেশে চালু করতে চাচ্ছি। শুধু বিএনএফ নয় অন্য যেসব সংস্থা আছে যারা দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করে তারা যদি আমাদের পলিসি গ্রহণ করতে পারে তাহলে সারাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন হবে।
২০১৯ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৮ নং রহিমপুর ইউনিয়নে লক্ষীপুর গ্রামে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) এর অর্থায়নে ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর বাস্তবায়নে গ্রাম দারিদ্র্যমুক্ত করণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। নিজেদের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থে বদলে গেছে তাদের জীবনমান, তাদের সংসারে ফিরেছে হাসি। তিন বছরে ২১৫টি অতিদরিদ্র পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসে। এর মধ্যে ৩৬টি পরিবারে টিউবওয়েল, ৮৫টি পরিবারে ল্যাট্রিন, ২২টি গাভী, মোটাতাজাকরণের জন্য ১০টি গরু, ১৮টি ভ্যান গাড়ি, ৫টি গৃহ নির্মাণ, ২৫টি পাপোশ মেশিন ও ২৪টি উন্নত জাতের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল অনুদান হিসেবে দেয়া হয়। এছাড়াও ২৫ জন নারীকে পাপোশ তৈরির প্রশিক্ষণ এবং দুজনকে রাজমিস্ত্রি ও রড বাইন্ডিংয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর ফলে তারা হয়েছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিজেদের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থে বদলে গেছে তাদের জীবনমান, তাদের সংসারে ফিরেছে হাসি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়