শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

নজরখালী বাঁধ নির্মাণ নিয়ে নাটকীয়তা : দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ৮২ গ্রামের কৃষকদের

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড়ের নজরখালীতে বাঁধ নির্মাণ হলে ৮২টি গ্রামের কৃষকরা নিরাপদে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। তবে এই নজরখালীতে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। অথচ বাঁধ নির্মাণ না হলে এই জনপদের কৃষকরা আগামীতে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে চলছেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আগাম বন্যার কবল থেকে তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার প্রায় ৯ হাজার হেক্টর বোরো ফসল সুরক্ষিত রাখবে নজরখালী বাঁধ। এই বাঁধটি নির্মিত হলে গনিয়াকুরি, এরালিয়াকুনা, নান্দিয়া, রাঙ্গামাটিয়া, সামসাগর, রুপাভূই, লামারবিল, মুক্তারখলা, সোনাডুবি, লুঙ্গা, তুঙ্গা, ইয়ারন, পদ্মরবিল, কুড়ির হাওড়সহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি হাওড়ের বোরো ফসল অনেকটা নিরাপদে ঘরে তুলতে পারবেন তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার ৮২টি গ্রামের কৃষকরা।
জানা গেছে, গত বছর নজরখালী ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু সঠিকভাবে নির্মাণকাজ না হওয়ায় বাঁধটি ভেঙে গিয়ে চোখের পলকে তলিয়ে যায় প্রায় তিন হাজার একর ফসলি জমি। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল আরো ৭-৮টি হাওড়ের বাঁধ।
তবে চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলায় হাওড়ের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ১১২টি প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও নজরখালী বাঁধটি তালিকাভুক্ত করেনি পাউবো। বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় বর্ষায় যখন ঢল নামে, তখন তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটাসহ বিভিন্ন নদীর পানির চাপ পড়ে নজরখালীসহ আরো কয়েকটি পয়েন্টে। ঢলের প্রবল স্রোত নজরখালী দিয়ে বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওড়ে প্রবেশ করলে আশপাশের হাওড়গুলো অনেক ঝুঁকিমুক্ত থাকে। আর ঢল বাধা পেলে গুরমা, মাঠিয়াইনসহ অন্যান্য হাওড় রক্ষাবাঁধ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওড় আগাম বন্যায় পানি ধারণের কন্টেইনার। জেলার অন্যান্য হাওড়ের বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত করতেই টাঙ্গুয়ার হাওড়কে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এদিকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অজুহাতে নজরখালী বাঁধ নির্মাণ হবে না শুনে তাহিরপুর ও মধ্যনগর দুই উপজেলার কৃষকদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা জানান, এক সময় এখানে স্থানীয় উদ্যোগে ফসল রক্ষাবাঁধ দেয়া হতো। কৃষকরা ঝুঁকি ও ভাগ্যের ওপর ভর করে বোরো আবাদ করতেন। কিন্তু এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি মানতে রাজি নন তারা। এসব অযৌক্তিক কারণ পেছনে ফেলে নজরখালীতে বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা।
তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, ‘নজরখালী ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ না হলে আমার ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসলহানির সম্ভাবনা আছে। স্থানীয় এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরখালী বাঁধ নির্মাণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরেও বাঁধটি কেন হবে না, এটি বোধগম্য নয়।’ মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরনবী তালুকদার বলেন, ‘নজরখালী বাঁধ নির্মাণ নিয়ে খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণ করছেন প্রজাতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত বছর বাঁধটির দায়িত্ব নেয় পাউবো। কিন্তু সঠিকভাবে বাঁধের নির্মাণ কাজ না করায় ঢলের পানির প্রথম ধাক্কায় বাঁধটি ভেঙে যায়। এ বছর পাউবো তাদের তালিকা থেকে বাঁধটি বাদ দিয়েছে। তাই আজকের এই পরিস্থিতিতে কৃষকরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে, পরিবার-পরিজনদের নিয়ে দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে নজরখালীসহ অন্যান্য বাঁধ নির্মাণের লড়াই অব্যাহত রাখবে।’ একই উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের রংচী গ্রামের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘নজরখালী বাঁধ নিয়ে প্রশাসনের এমন জনস্বার্থবিরোধী মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করে বাঁধটি নির্মাণ না করে, টাঙ্গুয়ার হাওড় পাড়ের হাজার হাজার কৃষক পরিবারকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।’ নজরখালী বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘এই বাঁধের আওতায় মধ্যনগর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ফসলি জমি থাকলেও বাঁধটি তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা চূড়ান্ত।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ‘নজরখালী বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বাঁধ নির্মাণকাজ আপাতত করা সম্ভব হচ্ছে না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়