শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

ডিম দিতে শুরু করেছে হাতিরঝিলের হাঁস : পর্যায়ক্রমে ছাড়া হবে ৫ হাজার হাঁস

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : অবমুক্ত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় ডিম দিতে শুরু করেছে রাজধানীর হাঁতিরঝিলে ছেড়ে দেয়া হাঁসগুলো। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত শতাধিক ডিম দিয়েছে এসব হাঁস। আগামী এক মাসে ডিম উৎপাদন আরো বাড়বে- এমন ধারণা প্রাণী বিশেষজ্ঞদের। এতে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য বাড়বে। আর ডিমের পাশাপাশি বাড়বে মাংস উৎপাদন। এতে পুষ্টি চাহিদা যেমন মিটবে তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকছে। তবে হাতিরঝিলে বিভিন্ন বাসার পয়ঃবর্জ্য মিশ্রিত পানিতে দুর্গন্ধের ফলে রাজউকের এই উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পানি শোধনে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। এই উদ্যোগটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ক্লিনার ও নিরাপত্তা রক্ষীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শিগগিরই নিয়োগ দেয়া হবে স্থায়ী জনবল। তারা আশা করছেন, সবার সহযোগিতায় এই উদ্যোগটি শতভাগ বাস্তবায়ন হবে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সৌন্দর্য বাড়াতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাতিরঝিলে বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০ হাঁস অবমুক্ত করে রাজউক। এসব হাঁসের মধ্যে ৫ থেকে ৬টি হাঁস এরই মধ্যে মারা গেছে। এখন যেসব হাঁস ছাড়া আছে, সেগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিকালে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। আর এসব

দেখাশোনার জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা রক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে এই উদ্যোগটি পরীক্ষামূলকভাবে আছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পর্যায়ক্রমে ৫ হাজার হাঁস ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
হাতিরঝিল লেকে হাস অবমুক্ত করার সময় রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, হাতিরঝিলে আমরা ৫ হাজার হাঁস ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এসব হাঁস দেখভালে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। হাঁসগুলোর যেন খাবারের সংকট না হয়, সে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি পানির মান ভালো রাখার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনের প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে কাজে লাগিয়েছেন। সেখানে তিনি সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি গণভবন লেকে মাছ ও হাঁসও পালন করেছেন। যা দেখে রাজউকও হাতিরঝিলে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস পালনের উদ্যোগ নেয়। ৫ হাজার হাঁস অবমুক্তের একটি পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০ হাঁস অবমুক্ত করা হয়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, এসব হাঁসের জন্য একাধিক ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে হাঁসগুলোর পরিচর্যা করা হয়। সকালে হাঁস পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলোকে ঘরে ঢোকানো হয়। এর মধ্যে তাদের নিয়মিত খাবার দেয়ার হয়। হাঁসগুলো যেন চুরি হয় সেজন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা রক্ষী রাখা হয়েছে। তারা সবাই রাজউকের কর্মচারী। দিনে ও রাতে পালাক্রমে তারা ডিউটি করেন। এখন পর্যন্ত কোনো হাঁস হারিয়ে কিংবা চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেনি- এমনটিই জানিয়েছেন হাঁসগুলো দেখভালের দায়িত্ব থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের একজন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি হাতিরঝিলে আমরা বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০ হাঁস অবমুক্ত করেছি। ৫/৬টি হাঁস মারা গেছে। বাকি হাঁসগুলো ভালো আছে। হাঁসগুলো যেন ঠিকমতো খাবার পায়, সঠিক পরিচর্যা হয় এবং যথেষ্ট নিরাপদ থাকে- সেজন্য আমাদের লোক আছে। হাঁসের জন্য আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। হালনাগাদ তথ্য আমরা নিচ্ছি। এসব হাঁস থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ডিম পেয়েছি। আগামী এক মাস পর থেকে ডিম উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। এতে আমাদের ডিমের পাশাপাশি মাংস উৎপাদনও বাড়বে।
রাজউকের একটি সূত্র জানায়, ৩০০ হাঁস নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। কিভাবে এর ম্যানেজমেন্ট করা যায়। এসব হাঁস অবমুক্ত থাকলে লেকের পানিতে অক্সিজেন সার্কুলেশন ভাল থাকে। লেকে যেসব মাছ ছাড়া আছে, সেগুলোর খাদ্যেরও যোগান হয়। এই চিন্তার বাস্তবায়নের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রাথমিকভাবে হাতিরঝিলে এই হাঁসগুলো ছাড়া হয়েছে। এখানে সফল হলে হাতিরঝিলের লেকে আরো বড় পরিসরে হাঁস ছাড়ার ব্যবস্থা করা হবে। এটাকে দেখে যাতে অন্যান্য লেকগুলোতেও এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায়- অন্যান্যরা উৎসাহিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নিয়ামুল নাসের ভোরের কাগজকে বলেন, হাতিরঝিলে হাঁস ছাড়ার উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। তবে সেখানকার পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ দেখতে হবে সেই পানিতে তারা সারভাইব করতে পারবে কিনা। আর সারভাইব করতে পারলেও হাঁসগুলোর শরীরে কোনো বিষাক্ততা হচ্ছে কী না- সেটাও দেখতে হবে। সেই হাঁসগুলো যদি কেউ খাওয়ার জন্য নিয়ে যায়, তারা আবার বিষাক্ততার মধ্যে পড়ে কিনা- সেটাও দেখতে হবে। তবে যে অংশে বিষাক্ততা কম, সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য হাঁসগুলোকে রাখা যেতে পারে। সেই সঙ্গে সঠিকভাবে যতœও নিতে হবে। তাহলে সুফল মিলবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়