শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

জাতীয় বিমা দিবস উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : ইচ্ছাকৃত ক্ষতির অর্থ দাবির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করে বিমার অর্থের দাবিদারদের ব্যাপারে বিমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কারো চাপের কাছে আপনারা মাথা নত করবেন না দয়া করে। আমিই বলেন বা আমাদের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের কাছে নানা ধরনের লোক আসে, তদবিরও করতে পারে সেক্ষেত্রেও আপনাদের দেখতে হবে প্রকৃত ক্ষতি কতটুকু। দাবিদার দাবি করবে বড় একটা, কিন্তু তার প্রকৃত ক্ষতি যাচাইবাছাই করেই আপনারা অর্থ পরিশোধ করবেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে আয়োজিত জাতীয় বিমা দিবস-২০২৩ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএর চেয়ারম্যান জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স

এসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিমা খাতের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরস্কার হিসেবে ছিল- একটি ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং জাতির পিতার রচিত তিনটি বই (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়া চীন’)। অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গ্রিন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সোনার বাংলা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে সম্মাননা দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে সব রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সেই সময় জাতির পিতা ১৯৬০ সালের ১ মার্চ যোগ দেন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রধান হিসেবে। জনমুখী এ পেশাটিকে তিনি শুধু চাকরি নয়, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গেও বিমা কোম্পানির যোগসূত্র রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই ৬ দফা প্রণয়ন করেছিলেন এবং তাদের চড়াই উৎরাইভরা জীবনে এবং ’৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর পুনরায় গ্রেপ্তারের আগে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চাকরিকালীন প্রায় দুই বছর সময় তারাও একটু স্থিতিশীল হতে পেরেছিলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ওপর আইয়ুব খানের সরকার কর্তৃক বিধিনিষেধ থাকায় তিনি চাইলেই যে কোনো জায়গায় যেতে পারতেন না। কিন্তু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে বঙ্গবন্ধু জেলায় জেলায় যেতেন। এর মাধ্যমে তিনি মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে মানুষকে সংগঠিত করেন এবং স্বাধীনতার চেতনাকে ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে জাগরুক করারও একটা সুযোগ পান।
ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রণয়ন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা ওই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই ছয় দফা প্রণয়ন করেছিলেন। পুরো বিষয়টা টাইপ করেছিলেন মোহাম্মদ হানিফ (ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র)। পরে এটা একজন বিজ্ঞজন, তৎকালীন ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল জালালুদ্দিন সাহেবকে দিয়ে অনুবাদ করানো হয়। আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জন বা ছয় দফা প্রণয়ন, ছয় দফার ভিত্তিতে ৭০ এর নির্বাচন- সবই কিন্তু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই করা হয়। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সের একটা যোগসূত্র রয়ে গেছে, এটাই বাস্তবতা।’
বিমা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বিমা ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘বিমা আইন-২০১০’ এবং ‘বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০’ প্রণয়ন করে। এর আওতায় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। তার সরকার ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন অ্যাক্ট-১৯৭৩ রহিত করে বিমা করপোরেশন আইন-২০১৯ এবং জাতীয় বিমা নীতি-২০১৪ প্রণয়ন করেছে। পাশাপাশি বিমা খাতে ‘একচুয়ারি’ নিয়োগের ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, দেশে বিমা কোম্পানি এখন অনেক বেড়েছে। কাজেই আমি মনে করি, যত বড় বড় মেগা প্রকল্প আমাদের তৈরি হচ্ছে এর সবক্ষেত্রেই বিমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিমা, জীবন বিমা এবং বঙ্গবন্ধুর নামে বিমাসহ বহুমুখী বিমার উদ্যোগ নেয়ায় তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে এর প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটার খুব দরকার, আপনারা প্রচার-প্রচারণা ভালোভাবে করেন। কারণ, আমাদের দেশের মানুষের একটা অনীহা আছে। আর গাড়ির বেলায় থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স যে কতটা ক্ষতিকর ছিল আমি নিজেও তার ভুক্তভোগী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটার ব্যাপারে দেখব যেন যথাযথ বিমা ছাড়া এই সড়কে কোনো ধরনের পরিবহন যেন না চলে। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ‘প্রবাসী কর্মী বিমা’, ‘শস্যবিমা’, ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা, খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ‘বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস ম্যান’স কম্প্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্স’, ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা’। এছাড়া, কৃষি, স্বাস্থ্য, ভবন, মোটরযান ও রেলযাত্রীদের জন্য বিমা চালু হয়েছে যেগুলো মানুষকে সুরক্ষা দেবে। কিন্তু এগুলো মানুষ করল কিনা সেটাও দেখতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার বিমা খাত আধুনিকায়নে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, সাধারণ বিমা করপোরেশন, জীবন বিমা করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ইনসিওরেন্স একাডেমির সক্ষমতা আরো বাড়বে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমা খাতকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনতে ‘ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি)’ চালু করা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটিতে বর্তমানে সেন্ট্রাল পলিসি রিপোজিটরি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সসমৃদ্ধ এসএমএস ও ই-মেইল এলার্ট সেবা, ই-রিসিপ্ট, ই-কেওয়াইসি, ‘বিমা তথ্য’ মোবাইল অ্যাপ, এজেন্ট লাইসেন্সিং অনলাইন মডিউলসহ নানা ডিজিটাল সেবা চলমান রয়েছে। মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে গ্রাহকরা সুবিধামতো প্রিমিয়াম জমার তথ্য দেখতে পারছেন ও রিসিট সংগ্রহ করছেন। এতে বিমা কোম্পানিগুলোর কুরিয়ার খরচ কমেছে। সরকারি তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয়ভাবে ই-কেওয়াইসি চালু হওয়ায় জালিয়াতি বন্ধ হয়েছে। এর ফলে প্রতিটি বিমা প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। বিমা শিল্পের প্রতি গ্রাহক আস্থা আরো বাড়াতে ‘ইউএমপি’ আরো বেগবান করতে আমি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
যথাযথ তদন্ত না করে যে কোনো স্থানের বা প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অগ্নিকাণ্ডে কোনো সম্পত্তির ক্ষতির জন্য বিমার অর্থ ছাড় না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেটা কেন করা হয় না, তাহলে কি আমি মনে করব যারা তদন্ত করতে আসে তারাও এর ভাগিদার? তাদেরও কোনো হাত আছে কিনা সেটাও তো আমার সন্দেহ হচ্ছে। সেটা আপনাদের দেখতে হবে।
বিমার অর্থ দাবির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে স্বার্থান্বেষী মহলের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়েও বিমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম আজকে এ কথা বলব। কারণ, আমিও বিমা পরিবারেরই একজন সদস্য (জাতির পিতাও বিমা কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন)। তাই এর বদনাম হোক তা আমি চাই না।
একসময় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড ঘটার প্রসঙ্গ টেনে তদন্ত করে তিনি বিমার মোটা অঙ্কের মিথ্যা অর্থ দাবির প্রমাণ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। নাম উল্লেখ না করে কোনো একটি কোম্পানির এক নারী কর্মীকে দিয়ে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয় বলেও তদন্তে বেরিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালের ১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। তাই সরকার প্রতি বছর ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গত বছর একে ‘ক’ ক্যাটাগরিভুক্ত দিবস হিসেবে উন্নীত করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়