শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

জাতীয় পতাকা উড়ল যেভাবে

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ডেটলাইন ২রা মার্চ, ১৯৭১। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। সকাল থেকেই মিছিল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়মুখী। স্মরণকালে এমন ছাত্র সমাবেশ দেখেনি কেউ। নিউমার্কেটের মোড় থেকে নীলক্ষেতের সড়ক দিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি পর্যন্ত ছিল ছাত্রদের বিস্তার। এদিন বটতলায় ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, ওড়ায় ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। সমাবেশ শেষে বিশাল এক মিছিল রড ও লাঠি উঁিচয়ে ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করে। ঐতিহাসিক ‘জাতীয় পতাকা’ দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পূর্ব পাকিস্তানের ভূখণ্ডে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। একাত্তরের এই দিনে কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ স ম আব্দুর রব ও ডাকসু নেতারা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। সেই পতাকা সভামঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা জাহিদ। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন ভিপি আ স ম আব্দুর রবসহ অন্যান্য নেতারা পতাকাটি তুলে ধরলে সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব দৃশ্যের। সেদিন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা ছাত্র সমাজ ও জনতা জানিয়ে দিল বাঙালিরা কারও কাছে মাথা নত করবে না।
এরআগে ৬ জুন রাতে নিচতলায় ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব এবং শাহজাহান সিরাজের রুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে (তৎকালীন ইকবাল হল) চার ডাকসাইটে নেতা- রব, সিরাজ, কাজী আরেফ এবং মার্শাল মনি লাল-সবুজের মাঝে বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকার সিদ্ধান্ত নেন। পতাকাটি আঁকেন ছাত্রলীগ নেতা শিবনারায়ণ দাশ।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যানবাহন, হাটবাজার, অফিস আদালত ও কলকারখানায় সর্বত্র পূর্ণ হরতাল পালন হয়েছে। ঢাকায় যতগুলো ছাত্র, শ্রমিক, রাজনৈতিক দল আছে সবাই সেদিন মিটিং ডেকেছিল। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও ডাকসুর যৌথ উদ্যোগে এগারোটায় বটতলায়, তিনটেয় পল্টন ময়দানে। ন্যাপ এগারোটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, বিকেলে পল্টনে। ন্যাপের কর্মসূচীর সঙ্গে সমর্থনে ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কৃষক সমিতির। বাংলাদেশ জাতীয় লীগের সভা বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে- বিকেল সাড়ে তিনটায়। নবগঠিত ফরোয়ার্ড স্টুডেন্টস ব্লকের সভাও ঐ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণেই- বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হয়। সব দলই মিটিং শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করে পূর্ব পাকিস্তানের ভীমরুলের চাকে যেন ঢিল ছুঁড়েছে।
ঢাকা শহরে ছিল হরতাল। স্কুল-কলেজ, কল-কারখানা সবগুলো ছিলো জনশূন্য, কোনো অফিসে কাজ হয়নি। লোকসমাগম বলতে রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে। সারাদিন একটি ট্রাকে করে আওয়ামী লীগের সদস্যরা সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহবান জানান। বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এটাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। সারা শহরে সরকারের পেটোয়া বাহিনী হরতাল ঠেকাতে মাঠে নামে। সেদিন পঞ্চাশ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুলের ছাত্র আজিজ মোর্শেদ ও মামুনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর মারা যান।
সামরিক আইন প্রশাসকের তরফ থেকে এদিন কারফিউ জারি করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত এই কারফিউ জারি থাকে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি নিরস্ত্রদের উপর গুলি বর্ষণের তীব্র নিন্দা করেন। পরদিন ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে অর্ধদিবস (ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা) হরতালের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এদিন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ‘পাকিস্তান’ নামটা একরকম হাওয়া হয়ে যেতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সন্ধ্যায় তার প্রেস কনফারেন্সে বারবার বাংলাদেশ উচ্চারণ করেন।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ পল্টন ময়দানে সমাবেশ করে যাতে বক্তৃতা দেন সাইফুদ্দিন মানিক, মতিয়া চৌধুরী, মহিউদ্দিন আহমেদ, নুরুল ইসলামসহ অনেকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়