শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

ঘিওর-শিবালয়ের তিন ফসলি জমির মাটি গিলে খাচ্ছে স্টোন ব্রিকস

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে : মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, পুখুরিয়ায় (ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কের পাশে) ৫১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ জমিতে গড়ে উঠেছে স্টোন ব্রিকস নামের স্বয়ংক্রিয় ইটভাটা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিফাত রহমান। কারখানাটির নির্মাণ কাজ বেশ কয়েক বছর আগে শুরু হলেও ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে উৎপাদন।
কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি জানা যায়, প্রতিদিন এখানে গড়ে ৩১ ট্রলি ইট তৈরি হয়। (প্রতিটি ট্রলিতে ইটের ধারণক্ষমতা ৭৮৪০পিচ)। গাণিতিক হিসেবে এই কারখানায় ২৪ ঘণ্টায় ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৪০ পিচ ইট তৈরি হয়। ইটভাটার দক্ষ শ্রমিকদের দেয়া পরিসংখ্যানে জানা যায়, আশি ফিট মাটিতে গড়ে এক হাজার ইট তৈরি করা সম্ভব। ওই সূত্রে হিসেব করলে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ মাটি এই কারখানায় খরচ হয়েছে তা সহজেই অনুমানযোগ্য।ঘিওর ও শিবালয়ের কৃষকরা বলেন, স্টোন ব্রিকস এর এই মাটির জোগান আসে মূলত ঘিওর ও শিবালয় থেকে। এই স্টোন ব্রিকসের কারণে একদিন ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা কৃষিজমি শূন্য হয়ে যাবে। কারণ, যেভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে একের পর এক জলাশয় তৈরি করা হচ্ছে, তাতে একটা সময় এ মাঠে আর ফসলিজমি অবশিষ্ট থাকবে না। অনেকেই লোভের বশে কিংবা দালালের প্রলোভনে উচিতের চেয়ে বেশি দাম পেয়ে মাটি বিক্রি করছেন। আবার অনেক কৃষক নিরুপায় হয়ে মাটি বিক্রি করছেন। ধূলন্ডী গ্রামের এক কৃষক জানান, তার পাশের জমি মাটি ব্যবসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে কিনে সেখান থেকে গভীর করে খাড়াভাবে মাটি কেটেছেন। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে তার জমি আপনা-আপনি ভেঙে পুকুর হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় নিরুপায় হয়ে তিনি মাটি বিক্রি করেছেন। তার মতো অনেকেই আছেন যারা নিরুপায় হয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন।
মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. দুলাল হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগে আমরা পুখুরিয়া, ধূলন্ডী মৌজার ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধের বিষয়ে গণসাক্ষর উত্তোলন করে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম। তিনি তখন ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো প্রতিকার আমরা পাইনি। দুলাল হোসেন আক্ষেপের সুরে বলেন, এটি নিয়ে লেখালেখি করে কী লাভ? পত্রিকায় প্রতিবেদনের পর তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার আগেই এদের মাটি কাটা শেষ হয়ে যায়। কারণ, মাটি ব্যবসায়ীরা ঝড়ের গতিতে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেলেন।
পুখুরিয়া এবং চৌবাড়িয়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কোনো পরিবারে যদি একজন মাদকাসক্ত সদস্য থাকেন, তবে ওই পরিবার শেষ হতে বেশি সময় লাগে না। ঠিক একইভাবে, স্টোন ব্রিকস এর মতো কোনো ইটভাটা যদি কোনো এলাকায় থাকে তবে সে এলাকার কৃষিজমি শেষ হতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। ফসলি জমি মাটি কাটা বন্ধের বিষয়ে প্রশাসন যদি স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ধূলন্ডী, পুখুরিয়া মৌজায় কোনো ফসলিজমি থাকবে না। তখন এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হবে নৌকা। শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া, মুনাইল এবং ঘিওর উপজেলার কলিয়া গ্রামের কৃষকরা বলেন, আমাদের এলাকার ফসলিজমির মাটি রাতের আঁধারে চলে যাচ্ছে স্টোন ব্রিকস নামক ইটভাটায়। আমরা নির্বাক দৃষ্টিতে ফসলিজমিকে জলাশয়ে পরিণত হতে দেখছি। কিন্তু প্রতিবাদের কোনো ভাষা আমাদের কাছে নেই। কারণ যারা রক্ষকের দায়িত্বে আছেন, তারাই এখন দলবল নিয়ে ভক্ষকের আসনে বসে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একাজগুলো করছেন। স্টোন ব্রিকস এর সহকারি জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) অহিদুল ইসলাস রানা জানান, মাটি কাটার বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। যারা আমাদের এখানে মাটি দিচ্ছেন আপনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আপনার এখানে কে বা কারা মাটি দিচ্ছেন প্রশ্ন করলে তিনি মোবাইল ফোন কেটে দেন। শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। আমি অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে আমি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে পাঁচজনকে আটক করে দুই লাখ দুই হাজার পাঁচশত টাকা জরিমানা করেছিলাম। ফসলিজমি রক্ষার্থে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল লতিফ দৈনিক ভোরের কাগজকে বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়