শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক নতুন সংযোজন চ্যাটজিপিটি

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ওপেন এআই (ঙঢ়বহ অও) চ্যাটজিপিটি (ঈযধঃএচঞ) নামক একটি চ্যাটবট চালু করে। যা মূলত সুপারভাইজড মেশিন লার্নিং এবং রিইনফোর্সমেন্ট মেশিন লার্নিংয়ের এক চমৎকার বাস্তবায়ন। এই চ্যাটবট তৈরি করা হয়েছে জেনারেটিভ প্রিট্রেইনড ট্রান্সফরমার ৩-এর ওপর ভিত্তি করে। এটি এখন টেক দুনিয়ার সবচেয়ে চর্চিত বিষয়। সান ফ্রান্সিস্কোতে ২০১৫ সালে জন্ম হওয়া ওপেন এআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রিড হফম্যান, জেসিকা লিভিংস্টন, ইলিয়া সুটস্কেভার, ইলন মাস্ক, স্যাম অ্যাল্টম্যান, পিটার থেইলসহ আরো অনেক এক্সপার্ট টেক উদ্যোক্তা। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস তথ্য মতে, চ্যাটজিপিটিকে বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ভোক্তা অ্যাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জনসাধারণের কাছে বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও অল্পসময়ে এর তুমুল জনপ্রিয়তায় ওপেন এআইয়ের ডেমো লিংকটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রথম ৫ দিনের মাথায় এক মিলিয়নের বেশি মানুষ এতে সাইনআপ করে ফেলেন। গত বছরের নভেম্বরে বাজারে আসার পর মাত্র দুই মাসের মধ্যেই চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। যেখানে এমন ব্যবহারকারী পেতে ফেসবুক ও স্পটিফাইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর মাসের পর মাস লেগেছিল।
এই বছরের শুরুতেই ১৩ মিলিয়ন মানুষ চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছেন, যা ডিসেম্বরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। চ্যাটজিপিটি মূলত ইন্টারনেটে থাকা ডাটাবেস থেকে তথ্য গ্রহণ করে কাজ করে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটে থাকা বই, আর্টিকেল, ওয়েব পেজসহ বিভিন্ন সোর্স থেকে প্রায় ৫৭০ জিবির বেশি ডেটা ও ৩০০ বিলিয়ন শব্দের ভাণ্ডারসমৃদ্ধ এই চ্যাট জিপিটি। অন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো যেখানে কেবল ইন্টারনেটের থাকা অসংখ্য সম্পৃক্ত তথ্য খুঁজে আমাদের সামনে এনে দেয়, চ্যাটজিপিটি সেখানে আমাদের সামনে গঠনমূলক ও সাবলীলভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ উত্তর নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে, যেমন এর ডেটা সিস্টেমে যে ইনফরমেশন দেয়া আছে তা মূলত ২০২১ সাল পর্যন্ত। সুতরাং এটি সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয়। যদি কোনো কারণে উত্তরটি ভুল হয় তাহলে পুনরায় নিযুক্ত থাকা কর্মীরা প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি সিস্টেমে ইনপুট করে দেয়। ফলে চ্যাট জিপিটির জ্ঞানের ভাণ্ডার ক্রমশ বাড়তে থাকে। পরবর্তীকালে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর আরো দ্রুত ও নির্ভুল দিতে পারে। ইতোমধ্যে সায়েন্টিফিক জার্নালগুলো চ্যাটজিপিটি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় জার্নাল সায়েন্সের সম্পাদক হোল্ডেন থর্প সম্প্রতি সম্পাদকীয় নীতিমালা হালনাগাদ করেছেন। পরিবর্তিত নীতিমালায় চ্যাটজিপিটি থেকে তথ্য ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। পাশাপাশি এখানে আরো উল্লেখ করা হয় চ্যাটজিপিটিকে কোনোভাবেই লেখক হিসেবে উল্লেখ করা যাবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে ত্রæটিপূর্ণ একাডেমিক সাহিত্য এবং মনগড়া গবেষণা প্রতিবেদন লেখা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এসব জার্নালের কর্তৃপক্ষ। ঈযধঃএচঞ তৈরিকারী সংস্থা ঙঢ়বহ অও-এর ঈঞঙ মীরা মুরাতি সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার চ্যাটবট সম্পর্কে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যে অও-এর অপব্যবহার হতে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জার্নালে এই এআই টুল ব্যবহার করে গবেষণাপত্র ছাপানোর তথ্য বেরিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে নোটিশ জারি হয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেরা খেটেখুটে কিছু লেখার পরিবর্তে খুব সহজে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরিতে অসদুপায় অবলম্বন করছে। এর সমাধান হিসেবে, অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমাদের একটু ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্পূর্ণ এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে পৃথিবী। সুতরাং এসব টুল ব্যান না করে কীভাবে মোডিফাই করে মানব সভ্যতার জন্য সুফল বয়ে আনা যায় এটাই দেখার বিষয়।

তানজিদা আক্তার লিন্থা : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়