শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

করোনার উৎস নিয়ে ফের চীনকে দুষল এফবিআই

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : করোনা ভাইরাস মহামারির উদ্ভব নিয়ে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে বক্তব্য দিয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। সংস্থার প্রধান ক্রিস্টোফার রে বলেছেন, ‘এফবিআই বেশ কিছুদিন ধরে তদন্ত করেছে এবং তাদের মনে হয়েছে ‘কোনো একটি গবেষণাগার থেকেই কোভিড মহামারির উৎপত্তি।’ তবে উহানের কোনো ল্যাব থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে চীন। বেইজিংয়ের গায়ে কালি লাগাতেই এ ধরনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক ক্রিস্টোফার রে গত মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তাদের চলমান তদন্তের প্রাথমিক ফলাফল বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে, চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত কোনো ল্যাব থেকে লিক হয়েই ‘খুব সম্ভবত’ কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে। এফবিআই বিষয়টি নিয়ে আরো তদন্ত এবং মূল্যায়ন করছে। এ তদন্তে চীনের বিরুদ্ধে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমার পর্যবেক্ষণ থেকে বলব, চীন এ তদন্ত ব্যাহত ও বিভ্রান্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। এটা সবার জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
মার্কিন জ্বালানি বিভাগের একটি গোপন প্রতিবেদন নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল গত রবিবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই প্রথম মার্কিন আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার প্রধান প্রকাশ্যে কথা বললেন। এফবিআইয়ের এ মূল্যায়ন নতুন কিছু নয়। এর আগেও তারা বেশ আস্থার সঙ্গে বলেছিল, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে দুর্ঘটনাক্রমে প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এফবিআই প্রধানের এ মন্তব্যের একদিন আগেই চীনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বেইজিংকে কোভিডের উৎস নিয়ে ‘সত্য বলতে’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের শেষদিকে আবির্ভূত হওয়া কোভিড-১৯ এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। অনেক গবেষণাতেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সম্ভবত উহানের সামুদ্রিক খাবার ও বন্যপ্রাণী বেচাকেনার মার্কেটেই প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। ওই মার্কেট থেকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত ভাইরাস ল্যাব উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে যেতে গাড়িতে ৪০ মিনিট লাগে। ওই ল্যাবেই করোনা

ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছিল।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সরকারি সংস্থার সঙ্গে এফবিআইয়ের ভাষ্যের অমিলও পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন জ্বালানি বিভাগ সবকিছু মূল্যায়ন করে একটি সিদ্ধান্তে এসেছে। এ নিয়ে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্থানীয় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জ্বালানি বিভাগের ওই প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গবেষণাগার থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি। তবে তাদের যুক্তি ‘খুব জোরালো’ নয়।
আলোচনায় মার্কিন জ্বালানি বিভাগের প্রতিবেদন : জ্বালানি বিভাগের গোপন প্রতিবেদন নিয়ে চলতি সপ্তাহে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এতে উল্লেখ করা হয়, নতুন গোয়েন্দা তথ্য এবং ২০২১ সালের নথিপত্রের ভিত্তিতে এ গোপন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস অবশ্য এ প্রতিবেদনের মূল্যায়ন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
২০২১ সালে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তুতে বলা হয়েছিল, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একটি কমিটি মনে করে, ভাইরাসটি প্রথমে একটি প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রবেশ করানো হয়। তবে তাদের এ দাবি খুব জোরালো নয়। আরেকটি কমিটি মনে করে, প্রথম মানবসংক্রমণ একটি গবেষণাগার থেকে হয়েছে। তাদের এ মূল্যায়নের ভিত আগের কমিটির চেয়ে বেশ জোরালো।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি গত সোমবার বলেন, শুধু যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি, তা নয়; আসলে করোনা ভাইরাস কীভাবে শুরু হয়েছিল, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সরকারও এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্বাস করেন, আসলে কী ঘটেছিল, সেটা জানা, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের মহামারিকে প্রতিরোধ করা যায়। তবে এসব গবেষণা অবশ্যই নিরাপদ ও নিখুঁতভাবে করতে হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববাসীর কাছে সেটা স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে হবে। কিরবি আরো বলেন, আমরা এখনো সেখানে পৌঁছাইনি, যদি মার্কিন জনগণ ও কংগ্রেসকে বলার মতো কিছু পাই, আমরা অবশ্যই তা জানাব।
আরো তদন্তের আহ্বান : যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কার্যালয় থেকে জ্বালানি বিভাগের প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এ প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ১৮টি ইউনিটের যাচাই-বাছাই করার সুযোগ ছিল।
বোর্ড ইনস্টিটিউট অব এমআইটি এন্ড হার্ভার্ডের আণবিক জীববিজ্ঞানী অ্যালিনা চান বলেন, নতুন গোয়েন্দা তথ্যে কী ছিল, সে সম্পর্কে তিনি খুব বেশি কিছু জানেন না। তবে যুক্তিসঙ্গত কথা হচ্ছে, চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির কর্মকাণ্ড করোনার এ উৎসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
২০১৮ সালে উহানের ওই গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী একটি গবেষণা প্রস্তাব করেছিলেন, যাতে কোভিডের মতো ভাইরাস নিয়ে কাজ করার কথা বলা হয়েছিল। ওই দলে সহলেখক হিসেবে অ্যালিনাও ছিলেন।
ওই গবেষণা প্রস্তাব করার দুই বছরেরও কম সময় পর উহান নগরে এমন একটি ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সার্সের মতো ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় উহান ইনস্টিটিউট কয়েক বছর ধরে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিল। তখনই ধারণা করা হচ্ছিল, করোনা ভাইরাস হতে পারে পরবর্তী মহামারির উৎস।
করোনা ভাইরাসের উৎস নিয়ে লেখা বইয়ের সহলেখক অ্যালিনা চান বলেন, গবেষণাগারে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ গবেষণাগারের দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানে না। কারণ, এসব নিয়ে প্রকাশ্যে কথাবার্তা হয় না। এ ধরনের দুর্ঘটনা ভয়াবহ রোগজীবাণু নিয়ে যে কোনো কাজকে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার গুরুত্বকে তুলে ধরছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তদন্ত প্রতিবেদনে ল্যাব থেকে ভাইরাস লিক হওয়ার ‘সম্ভাবনা নেই বললেই চলে’ বলে জানানো হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ার পর আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির মহাপরিচালক এ নিয়ে নতুন তদন্তের ঘোষণা দেন। বলেন, কোনো অনুমানই বাদ দেয়া হচ্ছে না, এর জন্য আরো গবেষণা দরকার।
অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, প্রাণী থেকে মানবদেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তত্ত্ব অনেক বেশি যুক্তিগ্রাহ্য। তারা তত্ত্ব দিয়ে বলছেন, করোনা ভাইরাস প্রথমে প্রাণীর মধ্যে ছিল এবং বাদুড় থেকে সরাসরি বা প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করেছে।
২০২১ সালের সেল নামের জার্নালের গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলেন, করোনা ভাইরাস হচ্ছে মানবদেহে ভাইরাস সংক্রমণের নবম ঘটনা। এর আগের সব ভাইরাসই প্রাণী থেকে উৎপত্তি হয়েছে।
গত বছর সায়েন্স নামের জার্নালে প্রকাশিত দুটি গবেষণায় প্রাণী থেকে ভাইরাসের উৎপত্তির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, সম্ভবত উহানের সামুদ্রিক খাদ্যের পাইকারি বাজার ছিল এই ভাইরাসের মূল উৎপত্তিস্থল। বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে এসেছেন, সম্ভবত দুটি ভিন্ন সময়ে ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে।
চীনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া : চীনের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানের দাবি অস্বীকার করেছেন। এটাকে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ‘কালিমা লেপনের ক্যাম্পেইন’ বলে অভিহিত করেছেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং গতকাল বুধবার তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আবেগতাড়িত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র আবারো গবেষণাগার ফাঁস (ল্যাবরেটরি লিক) তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে। এতে চীনের সম্মানহানি হবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্র্রের নিজের গ্রহণযোগ্যতা কমবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়